ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুলিশ সাহিত্যিকদের কথকতা

প্রকাশিত: ০৭:৩২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পুলিশ সাহিত্যিকদের কথকতা

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পুলিশ কী আর নয়Ñ এ বিষয়ে চলতে পারে দীর্ঘ বিতর্ক। পুলিশের রাজনৈতিক ব্যবহার ও নানা কেচ্ছা-কাহিনীও কারো অবিদিত নয়। এটাও ঠিকÑ পেশাজীবী হিসেবে মানবিক পুলিশ সেভাবে আলোচিত হয় না। কথায় আছে, খারাপ খবর বাতাসের আগে দৌড়ায়। যে কারণে পুলিশের নেতিবাচক ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠায় সময় লাগেনি। পুলিশের ভাবমূর্তি সঙ্কট ফুটে উঠেছে সম্প্রতি সংঘটিত নিরাপদ সড়কের দাবিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনেও। জনমতও বোঝা গেছে এ সময়ে। সব কথার শেষ কথা হচ্ছেÑ পুলিশও রক্ত-মাংসের মানুষ। তারও ত্রুটি-বিচ্যুতি, ভালো-মন্দ দিক থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। পুলিশ বাহিনীতে রয়েছেন অনেক লেখক-কবি-শিল্পীও। বস্তুত সংবেদনশীল মানুষই লেখক হোন। গল্প-কবিতা-উপন্যাস রচনায় মাধ্যমেই ফুটে ওঠে পুলিশের মনের কোমল জমিনের পরিচয়। কে ভুলতে পারবে খ্যাতিমান পুলিশ অফিসার ধীরাজ ভট্টাচার্যের ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ ও ‘যখন নায়ক ছিলাম’ উপন্যাস দুটির কথা! আত্মজীবনীমূলক এ দুই উপন্যাসের বাইরেও রয়েছে লেখকের আরো বই। অনেকেরই হয়তো জানা নেই ধীরাজ ভট্টাচার্যের জন্ম বাংলাদেশেইÑ যশোরের কেশবপুরে। ‘ডমরু চরিত’ খ্যাত ত্রৈলোক্যনাথ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িও বাংলাদেশের সাতক্ষীরায়। এরকম খ্যাতিমান অনেক লেখকই রয়েছেন বাংলা সাহিত্যে। যারা সমৃদ্ধ করে চলেছেন সাহিত্য-সংস্কৃতির অঙ্গন। লেখক পরিচয় উজ্জ্বল হয়ে ওঠার কারণে চাপা পড়ে গেছে কারো কারো পেশাগত পরিচয়। নিষ্ঠ গবেষক ও লেখক আহমেদ আমিন চৌধুরী এ পেশাজীবীর বিশেষ একাংশ নিয়ে রচনা করেছেন ‘বাংলাদেশ পুলিশ লেখক অভিধান’। বোধকরি বাংলা ভাষায় এ ধরনের বই এটাই প্রথম। সাধারণ পাঠকের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যদের সামনেও বইটি উন্মোচন করবে অজানা এক অধ্যায়ের। সূর্যদীঘল বাড়ি উপন্যাসখ্যাত আবু ইসহাক, খ্যাতিমান লেখক আবুল খায়ের মুসলেহউদ্দিন, বেদুইন সামাদ, আবদুল হাফিজসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ লেখক ভূষিত হয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদক সম্মাননায়। খ্যাতনামা কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বাবা ফয়েজুর রহমান আহমেদ, নায়ক সোহেল রানার বাবাও ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তাÑ এটাও অনেকের অবিদিত নয়। আহমেদ আমিন চৌধুরী সিন্ধু সেচে জড়ো করেছেন মুক্তো। কুড়ানো মুক্তাগুলোর সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ লেখক অভিধান গ্রন্থে। অতীতের এবং বর্তমানের পুলিশ লেখকদের পরিচিতি ও তথ্য সুবিন্যস্তভাবে তুলে ধরেছেন তিনি। বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় লেখক মোশাররফ হোসেন ভুঞা, মোশতাক আহমেদ, রহমান শেলী, ডিএ তায়েব, দেবদাস ভট্টাচার্য, রাশিদা সুলতানা, দুখু বাঙাল, সাইফুল্লাহ আল মামুন, সন্তোষ বড়ুয়া, নববিক্রম কিশোর ত্রিপুরা প্রমুখ লেখককে নতুনভাবে উপলব্ধি করবেন পাঠক। পুরুষ লেখকের পাশাপাশি রয়েছে নারী লেখকের উপস্থিতিও। যদিও সঙ্গত কারণেই সংখ্যায় কম। একে তো বাংলা ভাষায় নারী লেখক কম, তার ওপর পুলিশ বাহিনীতেও নারী সদস্য সমানুপাতিক নয়। বাংলা একাডেমির চরিতাভিধানের আদলে বইটির নামকরণ করা হয়েছে। বোধহয় বইটির নাম ‘বাংলাদেশ পুলিশ লেখক পরিচিতি’ রাখলেই যথার্থ হতো। বইটির প্রচ্ছদে চিন্তা ও পরিকল্পনার ছাপ নেই বললেই চলে। ইন্টারনেট থেকে যেনতেন একটা ছবি ডাউনলোড করে ব্যবহারের কারণেই হয়তো প্রচ্ছদ শিল্পীর নাম নেই! প্রচ্ছদে এসে হোঁচট খেতে হবে পাঠককে। বলা হচ্ছে, বাংলা ভাষার সৃজনশীল পুলিশ লেখকদের কথাÑ প্রচ্ছদের গ্রাফিক্স চিত্রে দেখা যায়, প্রতীকী একটি হাত কলম দিয়ে ইংরেজিতে লিখছে! প্রচ্ছদে ও পুটে (বই খাড়াভাবে সেলফে রাখলে উভয় প্রচ্ছদের মাঝখানে যেখানে বই, লেখক ও প্রকাশনার নাম দেখা যায়) লেখকের নাম আমিনের বদলে ছাপা হয়েছে ‘আমীন’। খোশরোজ কিতাব মহলের নাম প্রচ্ছদে থাকা, অন্যদিকে উৎসর্গপত্রের নিচে লেখকের নাম ব্যবহার কাঙ্গালপনাকেই স্থূলভাবে তুলে ধরে। অন্তত ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান খোশরোজের কাছে এমন আনাড়িপনা প্রত্যাশিত নয়। শফিক হাসান
×