ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ?

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এবার শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ?

মিথুন আশরাফ ॥ ভারতকে হারানো সম্ভব? আজ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ? মুশফিকুর রহীমের দিকে প্রশ্নগুলো ছুড়ে যায়। মুশফিকের সোজাসাপ্টা জবাব, ‘সম্ভব।’ সম্ভব হলেই প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা উঁচিয়ে ধরবেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। সর্বশেষ চার এশিয়া কাপের তিনটিতেই ফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। ২০১২, ২০১৬ ও এবার ফাইনালে উঠল। ২০১২ সালে ওয়ানডে ফরমেটের টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়। ২০১৬ সালে টি২০ ফরমেটের টুর্নামেন্টেও একই পরিণতি হয়। ২০১৬ সালের এশিয়া কাপে ফাইনালে ভারতই ছিল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। টানা দুইবার এশিয়া কাপের ফাইনালে খেলছে বাংলাদেশ। টানা দুইবারই ভারতের বিপক্ষে ফাইনালেও খেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। এবার তো তাই প্রতিশোধ নেয়ার ব্যাপারও থাকছে। এসব বিষয় নিয়ে অবশ্য কোন ক্রিকেটারই ভাবেন না। ভাবনাজুড়ে শুধু জয় থাকে। বাংলাদেশ আজ জিতলে তো ইতিহাস হয়ে যাবে। কখনই কোন টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা হয়নি। আজ জিতলে সেই অধরা শিরোপা ধরা দেবে। কিন্তু ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে কী তা সত্যিই সম্ভব? পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৭ রানে জিতে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে ১ রানের জন্য সেঞ্চুরি বঞ্চিত হওয়া মুশফিক বলেন, ‘অবশ্যই আমরা পারব। আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই।’ কেন পারতে পারেন, তাও বুঝিয়ে দিলেন মুশফিক, ‘আমরা এখনও নিজেদের সেরাটা খেলতে পারিনি। এখনও তিন বিভাগ একসঙ্গে জ্বলে ওঠেনি। টপঅর্ডার ভাল করছে না। এগুলো সব যদি ভারতের বিপক্ষে জ্বলে ওঠে, তাহলে না পারার কারণ নেই।’ সত্যিই তাই। বাংলাদেশের টপঅর্ডার প্রতিটি ম্যাচেই ব্যর্থ হয়েছে। মাঝখানের পজিশনে যারা ব্যাটিং করছেন তাদেরই হাল ধরতে হয়েছে। মুশফিক, মিঠুন, মাহমুদুল্লাহ, ইমরুল হাল ধরে দলকে জিতিয়েছেন। তাছাড়া বল হাতে শেষ দুই ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানো গেছে। ফিল্ডিংয়েও অসাধারণ মুহূর্তগুলো মিলেছে। কিন্তু একসঙ্গে তিন বিভাগ এখনও জ্বলে ওঠেনি। আবার তামিম আগে থেকেই নেই। সাকিবও নেই। তবুও পাকিস্তানের বিপক্ষে জিতেছে বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে এখন জেতা গেলেই হলো। ভারত এবার এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পেয়েছে। দলটি দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ছাড়া কোথাও খেলেনি। আজও একই ভেন্যুতে খেলবে। এ ভেন্যু সম্পর্কে তাদের ভালই জানা আছে। বাংলাদেশ এই ভেন্যুতে খেলেছে দুটি ম্যাচ। প্রথম ম্যাচটিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে জিতে টুর্নামেন্টে শুভ সূচনা করেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে সুপারফোরে ভারতের বিপক্ষেই পাত্তা পায়নি। সেই ভারতের বিপক্ষেই আজ আবার মুখোমুখি বাংলাদেশ। যে দলটিতে রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, আম্বাতি রায়ডু, মহেন্দ্র সিং ধোনি, দীনেশ কার্তিকের মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন। আবার বল হাতে ভুবনেশ্বর কুমার, জাসপ্রিত বুমরাহ, যুবেন্দ্র চাহাল, রবীন্দ্র জাদেজা, কুলদ্বীপ যাদবের মতো বোলার রয়েছেন। রোহিত, ধাওয়ান তো প্রতি ম্যাচেই উড়ছেন। ভুবনেশ্বর, চাহাল, জাদেজা তো ভয়ঙ্কর! এমন এক দলকে কুপোকাত করতে হলে তো বিশেষ নৈপুণ্যই লাগবে। মুশফিক জানান, ‘অবশ্যই অসাধারণ ক্রিকেট খেলছে (ভারত)। কিন্তু ওরাও মানুষ, ওরা ভুল করবে। যদি আগে ব্যাট করি এবং বড় স্কোর গড়তে পারি শুরুতে ওদের চাপে রাখতে পারলে কিংবা রান তাড়া করলে ভাল শুরু পেলে না পারার কারণ নেই। ভারতের বিপক্ষে আমরা সেটিই করতে চাই।’ ভারত এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে কোন ম্যাচ হারেনি। গ্রুপপর্বে হংকংকে ও পাকিস্তানকে হারিয়ে সুপারফোরে উঠেছে। সুপারফোরে বাংলাদেশ, পাকিস্তানকে হারানোর পর দুর্বল দল নিয়ে খেলতে নেমেও আফগানিস্তানের সঙ্গে টাই করেছে। ফাইনালে খেলা আগেই নিশ্চিত করে রেখেছে। সেখানে বাংলাদেশ গ্রুপপর্বের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচেই আফগানিস্তানের কাছে হেরেছে। সুপারফোরে ভারতের কাছে হারের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানকে এবার হারিয়ে ফাইনালে খেলার আশা জিইয়ে রেখেছে। ‘অঘোষিত’ সেমিফাইনাল হয়ে ওঠা ম্যাচে পাকিস্তানকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এবার ভারতের বিপক্ষে শিরোপার জন্য লড়াই করবে। তামিম ও সাকিবহীন একাদশ নিয়ে নামতে হবে। দুর্বলতা থাকছেই। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে যেমন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা উদ্দীপ্ত করা বক্তব্য দিয়েছিলেন। ক্রিকেটারদের অনুপ্রেরণাদায়ক বক্তব্যে বলেছিলেন, যুদ্ধে নামলে পেছনে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। যুদ্ধে নামলে গা বাঁচিয়ে চললে চলবে না। হয় মারব, নয় মরব। মাশরাফি এমন উত্তেজনাকর বক্তব্যই ক্রিকেটারদের এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা মিলেছে। তাতে করে জয়ও এসেছে। ফাইনালেও খেলছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের বিপক্ষে জেতার পর মুশফিকই বলছিলেন, ‘মাশরাফি ভাই একটি কথাই বলেছিলেন যে যুদ্ধে নামলে পেছনে তাকিয়ে থাকার সুযোগ নেই। যুদ্ধে নামলে গা বাঁচিয়ে চললে চলবে না। হয় মারবেন, নয় মরবেন।’ সঙ্গে যোগ করেছিলেন, ‘মাশরাফি ভাইর এ কথাটি দারুণ অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। লড়াইয়ে নামলে আসলে দেখার সুযোগ নেই দলে কে আছে না আছে। আমাকে আমার শতভাগ দিতে হবে। আমরা ফল নিয়ে চিন্তা না করে চেষ্টা করেছি শতভাগ দিতে। জানতাম সেটি দিতে পারলে আমরাই জিতব।’ আজও তা করতে পারলেই হয়। তাহলে যে ভারতকেও হারানো যাবে। আর ভারতকে হারালে এর আগে দুইবার এশিয়া কাপের শিরোপা জেতার কাছে গিয়েও যা ছোঁয়া হয়নি, এবার শিরোপা জিতেই মাঠ ছাড়বে বাংলাদেশ।
×