ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফাইনালেও মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ফাইনালেও মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ!

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এবার এশিয়া কাপে উদ্বোধনী ম্যাচেই অপরিহার্য ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে হারিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ইনজুরি নিয়ে ছিটকে গেছেন আসর থেকে। সেই ম্যাচেই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে দলকে জয়ের পথ করে দেন মুশফিকুর রহীম। ক্যারিয়ারসেরা ১৪৪ রানের অবিশ্বাস্য এক ইনিংস খেলেন। বুধবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার লড়াই ছিল বাংলাদেশের। এ ম্যাচেও ৯৯ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলকে বাঁচিয়েছেন তিনি এবং টাইগাররা শেষ পর্যন্ত উঠেছে ফাইনালে। অথচ তামিমের পর বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ছিলেন এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে অনুপস্থিত। আজ এ দুই অন্যতম সেরা পারফর্মারকে ছাড়াই ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে অবতীর্ণ হবে বাংলাদেশ। কিন্তু মুশফিক থাকাতে এখন যেন সেটা নিয়ে মাথাব্যথাই নেই দলের। তামিম ইতোমধ্যেই ইংল্যান্ড গেছেন তার আঙ্গুলে অস্ত্রোপচার লাগবে কিনা জানার জন্য। আর বুধবার দেশে ফিরে আসা সাকিব দু’একদিনের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র যেতে পারেন অস্ত্রোপচার করাতে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এবার এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচটি খেলতে নামে বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নামার পর ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই বাঁ হাতের তর্জনির গোড়ায় আঘাত পেয়ে মাঠ ছেড়ে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিমকে। পরে ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর এক হাতেই ব্যাট করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু এশিয়া কাপ আর খেলা হয়নি তামিমের। দু’দিন পরই তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং বৃহস্পতিবার তিনি লন্ডনে গেছেন ইনজুরির উচ্চতর চিকিৎসা নিতে। প্রাথমিকভাবে তার মাঠে ফিরতে ৪ সপ্তাহ লাগবে এমনটাই জানানো হয়েছিল। তবে অস্ত্রোপচার করানো লাগলে সেটি ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে। আগামী মাসে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজে খেলতে পারবেন কিনা তিনি সেটা জানা যাবে লন্ডনে তিনি চিকিৎসককে দেখানোর পর। সেই ম্যাচে মুশফিক অবিশ্বাস্য শতক হাঁকিয়ে দলকে বাঁচিয়েছিলেন। তবে পরের সবগুলো ম্যাচেই তামিমের অভাব তীব্রতর হয়েছে দলে। ওপেনাররা দাঁড়াতে পারেনি কোন ম্যাচেই। কিন্তু মুশফিক নিয়মিতই দলকে রক্ষা করেছেন। অথচ মুশফিক নিজেও ইনজুরি নিয়েই খেলে যাচ্ছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে অবশ্য বিশ্রাম দেয়া হয়েছিল তাকে। পরে সুপারফোরে ভারতের বিপক্ষে ২১ এবং আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন। আবারও মুশফিক নিজের ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ তকমাটাকে জগিয়ে তোলেন বুধবারের অতিগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জিতলেই ফাইনালে বাংলাদেশ অথচ এই ম্যাচে সাকিবও নেই। সাকিবও আফগানদের বিপক্ষে শ্বাসরূদ্ধকর জয়ের ম্যাচে তার পুরনো ইনজুরি আক্রান্ত আঙ্গুলে আঘাত পান। ইঞ্জেকশন নিয়েই খেলছিলেন তিনি। কিন্তু আঙ্গুল ফুলে যাওয়াতে আর ঝুঁকি না নিয়ে তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয় বুধবার। আগেই বলা হয়েছিল তার অস্ত্রোপচার করাতে হবে। দ’একদিনের মধ্যেই তিনি যুক্তরাষ্ট্র পাড়ি জমাতে পারেন সে জন্য। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) অবশ্য সাকিবকে অস্ট্রেলিয়ায় পাঠাতে চাইছে। অপরিহার্য এ দুই নিয়মিত পারফর্মারকে ছাড়াই পাকদের বিপক্ষে খেলতে নামার পর আবার বিপর্যস্ত হয়ে যায় বাংলাদেশ দল ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে। কিন্তু মুশফিক আবার জ্বলে ওঠেন। উদ্বোধনী ম্যাচে তার সঙ্গী ছিলেন তরুণ মোহাম্মদ মিঠুন, দু’জন মিলে সেদিন গড়েছিলেন ১৩১ রানের জুটি। এবারও মিঠুন সঙ্গী হন মুশফিকের। চতুর্থ উইকেটে ১৪৪ রানের জুটি গড়েন দু’জন। আরেকটি সেঞ্চুরির দেখা পেতে ১ রান দূরে থাকতে সাজঘরে ফেরেন মুশফিক। যে কোন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনিই প্রথম ৯৯ রানে আউট হয়েছেন। তবে দলের যা প্রয়োজন ছিল সেই কাজটি করে গেছেন। সে জন্য মিঠুনেরও প্রশংসা করে মুশফিক বলেন, ‘সে খুবই পজিটিভ মনোভাবের ছেলে। আমি তাকে বলেছি ৫/৬ ওভার দেখে খেলে পরিস্থিতি বোঝার জন্য। রানরেট নিয়ে মাথা ঘামাতে নিষেধ করেছি। ১১ থেকে ৪০ ওভার পর্যন্ত আমরা খেলেছি যখন বাউন্ডারিতে মাত্র একজন ফিল্ডার ছিল। তাই খুব সহজেই দু’একটি বাউন্ডারি আদায় করে নেয়ার সুযোগ ছিল। সে আমার কথাগুলো খুব ভালভাবে অন্তরে গেঁথে নিয়েছিল এবং তার সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছি এবং ব্যাট করেছি দুটোই বেশ উপভোগ্য ছিল। দল জেতার পর সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপটা আর থাকেনি।’ ক্যারিয়ারে অনেকবার দলকে বাঁচিয়েছেন মুশফিক। বিপদের মুহূর্তে নিজের ধীরস্থির ও ঠা-া মস্তিষ্ক কাজে লাগিয়ে ভঙ্গুর ইনিংস মেরামত করেছেন এবং দলকে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছেন। এবার এশিয়া কাপে সেই কাজটা প্রায় এককভাবেই দু’বার করে দেখিয়েছেন। অথচ পাঁজরের হাড়ে চিড় আছে মুশফিকের। সে কারণে পুরোটা সময় উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন শুধু সুপারফোরে আফগানদের ম্যাচে।’ চলতি এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত ৪ ম্যাচে ব্যাট করে ৭৪.২৫ গড়ে ২৯৭ রান করেছেন তিনি। মুশফিকের ওপর শুধু ভারতের ওপেনার শিখর ধাওয়ান যিনি সমান ম্যাচে ২ সেঞ্চুরিসহ ৮১.৭৫ গড়ে ৩২৭ রান করেছেন। এশিয়া কাপের ইতিহাসে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যানও মুশফিক। ২০ ম্যাচে ২ সেঞ্চুরি ও ২ ফিফটিসহ তার রান ৩৮.৫৫ গড়ে ৬৯৪! সার্বিকভাবে তার অবস্থান সাতে। এক নম্বরে আছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক ওপেনার সনাথ জয়সুরিয়া। তিনি ২৫ ম্যাচে ৫৩.০৪ গড়ে ১২২০ রান করেন ৬ সেঞ্চুরি ও ৩ ফিফটিসহ। আর এসব কারণেই ফাইনালে এখন টাইগারদের একমাত্র ভরসার নাম মুশফিক। বাংলাদেশ দল তৃতীয়বারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলবে আজ। ২০১২ সালে প্রথমবার ফাইনালে উঠে পাকিস্তানের কাছে ২ রানের হৃদয়ভাঙ্গা হার এবং ২০১৬ টি২০ এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যায় দল। কিন্তু এখন দলের অন্যতম সেনাপতি মুশফিকই স্বপ্ন দেখাচ্ছেন প্রথম শিরোপা জয়ের। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাসের কমতি নেই। আমরা অন্তত ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে এশিয়া কাপ খেলতে এসেছি। এখন ফাইনালে উঠেছি। লক্ষ্য এখন সেরাটা খেলার, তাহলে ভারতকে হারানো সম্ভব। এটা আমরা আগেও করেছি, হয়তো আমরা তাদের ধারাবাহিকভাবে হারাতে পারিনি। কিন্তু সেরাটা খেললে তাদের চাপে ফেলে ম্যাচ জেতা ও চ্যাম্পিয়ন হওয়া সম্ভব।’
×