ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

চালু হচ্ছে শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পুরস্কার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

চালু হচ্ছে শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পুরস্কার

তপন বিশ্বাস ॥ সমাজকল্যাণ ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ আগ্রহ ও স্বীকৃতিদানের জন্য শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পুরস্কার চালু করতে যাচ্ছে সরকার। পাঁচটি ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ পদক দেয়া হবে। ক্ষেত্রগুলো হলো, বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসনে অবদান। প্রান্তিক, অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর সামাজিক সুরক্ষা, আত্মনির্ভরশীলতা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি। প্রতিবন্ধী ও নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কল্যাণ, জীবনমান উন্নয়ন, কর্মসংস্থান, বিশেষ (এক্সক্লুসিভ) শিক্ষা বাস্তবায়ন ও সামাজিক সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য অবদান। সুবিধাবঞ্চিত, আইনের সংস্পর্শে আসা এবং আইনের সঙ্গে সংঘাতে জড়িত শিশু, কারামুক্ত কয়েদি, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের কল্যাণ ও উন্নয়ন। কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের এমন কোন কর্ম যা সমাজের মানুষের মেধা, মননের বিকাশ, জীবনমান ও পরিবেশের উন্নয়ন, সমাজবদ্ধ মানুষের মানসিক ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও সর্বোপরি মানবকল্যাণ ও মানবতাবোধ সমাজ বা রাষ্ট্রকে ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করার কার্যক্রমসমূহ। প্রতি বছর ২ জানুয়ারি জাতীয় সমাজসেবা দিবসের অনুষ্ঠানে এই পদক দেয়া হবে। পুরস্কার হিসেবে ১৮ ক্যারেট মানের ২৫ গ্রাম স্বর্ণনির্মিত একটি পদ, শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদকের একটি রেপ্লিকা, ব্যক্তি ও সংস্থা এবং প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে নগদ দুই লাখ টাকা এবং একটি সম্মাননা সনদ। এতে সরকারের ব্যয় হবে ২২ লাখ ৫১ হাজার টাকা। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বাৎসরিক বাজেট থেকে এই টাকার সংস্থান করা হবে। এ বিষয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটি পদক সংক্রান্ত নীতিমালা ইতোমধ্যে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি অনুমোদন করেছে। আমরা এখন বাস্তবায়নের কার্যক্রম গ্রহণ করব। এই সংক্রান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৭-৯৮ সালে দেশে প্রথম বয়স্কভাতা চালু করেন। ১৯৯৮-৯৯ সালে বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীভাতা, চালু করেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত উদ্যোগে হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে চা শ্রমিক, ক্যান্সার, কিডনি, লিভার সিরোসিস ও জন্মগত হৃদরোগীদের আর্থিক সহায়তা, দরিদ্ররোগীদের চিকিৎসাসেবা দেয়ার লক্ষ্যে হাসপাতাল সমাজসেবা কার্যক্রম সম্প্রসারণ করে ৪১৯ উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে রোগী কল্যাণ সমিতি গঠন ও নিবন্ধন প্রদান, ভিক্ষুক পুনর্বাসন, বাল্য বিবাহরোধ, সরকারী চাকরিতে প্রতিবন্ধী কোটা চালু, প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র, প্রতিবন্ধী শিক্ষা উপবৃত্তি, প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য শিক্ষা, কর্মসংস্থান, চলাফেরা, যোগাযোগ সহজ করা এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ, পথশিশুদের পুনর্বাসন ও নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা করা এবং দারিদ্র্য নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অতিদরিদ্রদের জন্য টেকসই সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তোলা, প্রতিবন্ধীদের জন্য মোবাইল থেরাপি ভ্যানসহ নানাবিধ সামাজিক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রীড়ার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রণোদনা প্রদানসহ আন্তরিক সমর্থন ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। তার নির্দেশে জাতীয় সংসদ ভবনের পশ্চিম পার্শ্বে ৪ দশমিক ১৬ একর জমি শুধু প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহারের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়াও জাতীয় সামাজিক নিরাপত্তা কৌশল, ভবঘুরে ও নিরাশ্রয় ব্যক্তিদের জন্য পুনর্বাসন আইন-১১, শিশুআইন-১৩, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন-১৩, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ১৩, নিউরো ডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন ২০১৩ প্রণয়নসহ বিভিন্ন সংস্কার করে বাংলাদেশকে কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর মানবকল্যাণমূলক কাজ দেশের গ-ি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে বিভিন্ন পর্যায়ে সমাদৃত হয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশ যখন আন্তর্জাতিক শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় নিজেদের গুটিয়ে নিচ্ছেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত অসহায় শরণার্থীদের বিশাল জনসংখ্যার ছোট আয়তনের বাংলাদেশ ভূখ-ে আশ্রয়সহ মানবিক বিপর্যয়রোধে সব উদ্যোগ গ্রহণ করেন। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে সার্বিক সামাজিক নিরাপত্তা প্রদানে সফলভাবে সক্ষম হয়েছেন। শেখ হাসিনার এ মানবিক উদ্যোগ, বিশ্বে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। শেখ হাসিনার মানবিকতা সারাদেশের জনগণ ও সমাজসেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে দেশের সব মানুষের মাঝে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে কাজে লাগানো প্রয়োজন। যোগ্য প্রতিষ্ঠান, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা, ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে প্রণোদনা দেয়া হলে দেশের মানুষের মধ্যে সমাজকল্যাণমূলক কর্মকা-ের কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে। সরকারের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সহায়ক হবে। জাতীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, ক্রীড়া, কৃষি, সাহিত্য, কৃষি ও সাংবাদিকতাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে পদকের ব্যবস্থা থাকলেও সমাজকল্যাণে বিশেষ অবদানের জন্য কোন পদক দেশে চালু নেই। সমাজকল্যাণ ও সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় বিশেষ আগ্রহ ও স্বীকৃতিদানের লক্ষ্যে শেখ হাসিনা মাদার অব হিউম্যানিটি সমাজকল্যাণ পদক চালু করা হলো। ব্যক্তি পর্যায়ে এই পদকের জন্য মনোনয়নকারী ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে। চারিত্রিক গুণাবলী ও দেশাত্মবোধে অনন্য হতে হবে। পদকদানের জন্য মনোনীত ব্যক্তির সামগ্রিক জীবনের কৃতিত্ব ও অবদানকে গুরুত্ব দেয়া হবে। স্বেচ্ছাসেবী সমাজকল্যাণ সংস্থাসমূহ রেজিস্ট্রেশন ও নিয়ন্ত্রিত অধ্যাদেশ ৬১ অনুযায়ী নিবন্ধিত হতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা পর্ষদ ও সাধারণ সদস্যদের নিজস্ব তহবিলে পরিচালিত হতে হবে। অলাভজনক, অরাজনৈতিক, স্বেচ্ছাসেবী কর্মকা- পরিচালনায় অনন্য হতে হবে। স্থানীয় চাহিদা ও সামর্থ্য বিবেচনায় মানবসম্পদ দক্ষ, আত্মনির্ভরশীল ও আত্মপ্রত্যয়ী হিসেবে গড়ে তুলতে উল্লেখযোগ্য অবদান থাকতে হবে। রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপে, ফৌজদারি আইনে শাস্তিপ্রাপ্ত, অভিযুক্ত বা ফৌজদারি অপরাধে দ-িত বা দেউলিয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এ পদকের জন্য বিবেচিত হবে না। একবার পদকপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরবর্তী দশ বছরে একই বিষয়ে পুনরায় পদকের জন্য বিবেচিত হবেন না। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় পূর্ববর্তী বছরের অবদানের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে মনোনয়ন আহ্বান করবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন পত্রপত্রিকা এবং রেডিও টেলিভিশনে প্রচার করা হবে। ৫ জুলাই দরখাস্ত আহ্বান করা হবে। জেলা পর্যায়ে ৩১ জুলাইর মধ্যে আবেদন গ্রহণ করা হবে। ১৭ আগস্ট জেলা পর্যায়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে। ৩১ আগস্ট জেলা কমিটি মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ পেশ করবে। ১৫ অক্টোবর জাতীয় কমিটি মনোনয়ন চূড়ান্ত করবে। ৩১ অক্টোবর জাতীয় কমিটি চূড়ান্ত মনোনয়ন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনক্রমে ২ জানুয়ারি পদক ঘোষণা করবে। জেলা পর্যায়ে ডিসি বাছাই কমিটির সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়াও কমিটিতে ৯ সদস্য কাজ করবেন। জাতীয় পর্যায়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রী অথবা প্রতিমন্ত্রী সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়া সমাজকল্যাণসহ সাত মন্ত্রণালয়ের সচিব, সভাপতির মনোনীত দুই বিশিষ্ট ব্যক্তি, সমাজসেবা অধিদফতরের মহাপরিচালক কমিটিতে থাকবেন। কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব। পদকের জন্য নির্বাচিত ব্যক্তিদের নাম পদক প্রদানের আগে গণমাধ্যমে প্রচার করা হবে।
×