ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিএনপি-জামায়াত জোটের নতুন কৌশল

গ্রেনেড হামলা মামলার রায় কেন্দ্র করে নাশকতার ছক

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গ্রেনেড হামলা মামলার রায় কেন্দ্র করে নাশকতার ছক

শংকর কুমার দে ॥ আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ঘিরে উত্তেজনা উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোট। আর এ জন্যই যে কোন মূল্যে শনিবার রাজধানীতে সভা-সমাবেশ করে শোডাউন করতে চাচ্ছে তারা। একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় সামনে রেখে বিএনপি-জামায়াত জোট পাশে পাওয়ার চেষ্টা করছে নব গঠিত ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত ঐক্য প্রক্রিয়ার রাজনৈতিক দলগুলো। বিএনপি-জামায়াত জোটের গোপন কৌশল টের পেয়ে তাদের শনিবারের সভা-সমাবেশ মোকাবেলার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোট। আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় সামনে রেখেই মূলত উত্তেজনা ও উত্তপ্ত পরিস্থিতির উদ্ভব হচ্ছে, যাতে নাশকতাসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে পুলিশের উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠকে। পুলিশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, কোন ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তা কঠোর হস্তে দমনসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ অক্টোবর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শোডাউনের মাধ্যমে মহড়া দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। এ জন্যই ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার রাজধানীতে সভা-সমাবেশের আয়োজনের মাধ্যমে হুমকি প্রদান করে রাজনীতির মাঠ উত্তেজনায় উত্তপ্ত করে তুলছে তারা। বিএনপি-জামায়াতের হুমকি মোকাবেলার জন্য মাঠ দখলের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট। দুই জোটের হুমকি ও পাল্টা হুমকিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কা দেখছে পুলিশ। এই ধরনের পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে নাশকতাসহ আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে পারে তৃতীয় পক্ষ। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটার আশঙ্কার বিষয়টি পুলিশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণার বিষয়টিতে কোন কথা না বলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলে নির্বাচনকালীন সরকার, নির্বাচনের ইস্যু সামনে এনে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য শোডাউনের উদ্যোগ নিয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট। কেননা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের ঘোষণা বিষয় সামনে এনে আন্দোলন গড়ো তোলার কথা বললে ড. কামাল ও ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে যে ঐক্য প্রক্রিয়ার প্লাট ফরম গঠিত হয়েছে তাদের সমর্থন পাওয়া যাবে না। এমনকি একুশে আগস্টের রায়ের বিরুদ্ধে জনগণেরও সমর্থন পাওয়া যাবে না। এ কারণেই ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় সামনে রেখে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইস্যু সামনে এনে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে, যাতে সারাদেশে নৈরাজ্য, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটিয়ে সরকার বিরোধী আরেকটি নতুন ইস্যু খুঁজে পাওয়ার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গঠিত ঐক্য প্রক্রিয়ার নামে নতুন রাজনৈতিক প্লাট ফরমের উদ্যোগে মহানগর নাট্য মঞ্চে যে সভা অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তাতে বিএনপির ব্যানারে ২০ দলীয় জোটের অন্তরালে জামায়াতসহ স্বাধীনতা বিরোধী উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর যোগ দেয়ার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা অবনতি ঘটানোর মতো অশুভ ইঙ্গিত দেখানো হয়েছে। এতে মাঠের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করায় উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা, গল্প-গুজবের ফানুস ছড়াচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্ভাব্য নাশকতাসহ অজানা আশঙ্কায় প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য বৈঠক করেছে বলে পুলিশের দাবি। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তৎকালীন বিরোধীদল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস বিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়, যার রায় ঘোষণার দিন ধার্য করা হয়েছে আগামী ১০ অক্টোবর। আদালতের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে ওই গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। হাওয়া ভবনে বসে হামলার পরিকল্পনা হয়। হামলার অন্তরালে বিএনপির অনেক নেতাই জড়িত ছিল। আগামী ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট যে বর্বরোচিত হত্যাকা-ের রায় হতে যাচ্ছে এতে বিএনপির অনেক নেতার জড়িত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আদালতের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক রহমানসহ আসামিদের ফাঁসি দাবি করেছে। সরকারের তরফ থেকেও বলা হয়েছে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায়ও জিয়া পরিবার জড়িত।
×