ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আন্তর্জাতিক জনমত জরিপগুলো যে বার্তা দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আন্তর্জাতিক জনমত জরিপগুলো যে বার্তা দিচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর মাত্র তিন মাস। নির্বাচন নিয়ে চলছে নানামুখী দৌড়ঝাঁপ। ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ’ নির্বাচনের দাবি তুলে এখন পশ্চিমা বিশ্ব ও ভারতের কাছেও সহায়তার জোরদার তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। ক্ষমতায় আসার লক্ষ্যে এ নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ইসলামপন্থীদের জোট নির্বাচনে অংশ নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রখ্যাত ভারতীয় সাংবাদিক সুবির ভৌমিক দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় এক নিবন্ধে লিখেছেন, ইসলামী মৌলবাদের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলা বিএনপি ক্ষমতায় আসার জন্য শুরু করছে দৌড়ঝাঁপ। ক্ষমতায় যেতে ভারতের কাছে তদবির করছে। ‘বাংলাদেশে নির্বাচনের দৌড়, রানআপ/ বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী দল ‘অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য পশ্চিমা দেশ এবং ভারতের সঙ্গে জোরদার তদবির চালিয়ে যাচ্ছে’ শিরোনামে প্রকাশিত নিবন্ধে সুবির ভৌমিক লিখেছেন, ’১৪ সালে নির্বাচন বয়কট করা বিএনপি ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমাদের দ্বারস্থ হতেও কার্পণ্য করছে না। তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের একদল তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের একটি অংশ। তাদের লক্ষ্য অভিন্ন, শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং নিরপেক্ষ একটি বিধানের মাধ্যমে নির্বাচন। একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার জনমত জরিপের চিত্র তুলে ধরে সুবির ভৌমিক লিখেছেন, যারা ভাবছিলেন আওয়ামী লীগের জনসমর্থন কমে যাচ্ছে, তাদের বড় ধাক্কা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন। বিএনপির কাছে এর প্রতিক্রিয়া ছিল সবচাইতে দুর্দান্ত। এই প্রতিবেদন প্রকাশের পর আরও জোরালোভাবে পশ্চিমা বিশ্বে তদবির শুরু করেছে বিএনপি। আর সে জন্য নিজেদের প্রোপাগা-া শক্তিশালী করতে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করে বিএনপি নিয়োগ করেছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক লবিস্ট প্রতিষ্ঠান ‘ব্লু-স্টার’কে। এর পাশাপাশি ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় খালেদা জিয়া বা তারেক রহমানকে শাস্তি প্রদান করলে দীর্ঘমেয়াদী অস্থিরতার হুঁশিয়ারিও উচ্চারণ করেছে দলটি। রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশের ৬৬ ভাগ মানুষ সমর্থন জানিয়েছে শেখ হাসিনাকে এবং ৬৪ ভাগ এখন সমর্থন করছে আওয়ামী লীগকে। অদ্ভুত বিষয় হলো যখন আইআরআইর এই পরিসংখ্যান প্রতিবেদন নিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়, তখন তাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কেউ কেউ প্রতিবেদনটি ভুয়া বলে রব তোলে। তারা প্রশ্ন করেন, ‘আইআরআইর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে এই রিপোর্ট নেই কেন?’ দু’দিন পর সেখানে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হলে এই নিশ্চুপ নিন্দুকরা আইআরআইর গবেষণা প্রতিবেদনের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলে। নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিএনপি নেতৃবৃন্দও এই প্রতিবেদনের ফলা ভ্রান্ত বলে মত প্রকাশ করে এবং এর বদলে ২০১২ সালে প্রকাশিত নেলসন প্রতিবেদন সঠিক বলে দাবি করে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল ২০১৪ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হবে। দলটির নেতাদের বক্তব্য শুনলে মনে হয় বিগত ৬ বছরে বাংলাদেশে কোন কিছুরই পরিবর্তন হয়নি। এ ছাড়া, নিশ্চিত বিজয় জেনেও কেন ’১৪ সালে তারা নির্বাচন বয়কট করে তার কোন সদুত্তর এই বিএনপি নেতারা দিতে পারেন না। এই পর্যায়ে এসে নির্বাচন বাতিল এবং সহিংস রাজনীতির সূচনার জন্য অনেক বিএনপি নেতা দলের প্রধান বেগম জিয়া এবং তার ছেলে তারেক জিয়ার অজ্ঞতাকে এই ঘটনার জন্য দায়ী করে। সুবির ভৌমিক লিখেছেন, আইআরআইর মতো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলা সত্যিই অদ্ভুত। বিশ্বজুড়ে তারা গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখতে কাজ করে যাচ্ছে। সেখানে শুধু আওয়ামী লীগের জন্য তারা পক্ষপাতী আচরণ করবে! আর এ কারণেই বিএনপির এই অযৌক্তিক দাবির প্রত্যুত্তরে আইআরআই তাদের গবেষণায় ব্যবহৃত মেথোডলজি ব্যাখ্যা করেন। সেখানে জানানো হয় কিভাবে তারা ইন-হোম ইন্টারভিউ এবং ইন-পার্সন ইন্টারভিউ গ্রহণ করেছে। সেখানে কিভাবে মাল্টিস্টেজ স্টারিফায়েড প্রোবাবিলিটি পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণাটির বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুণœ রাখা হয়েছে সে ব্যাখ্যাও প্রদান করা হয়েছে। গবেষণার জন্য বিভাগ, জেলা এবং শহর ও গ্রাম পর্যায়ে বিভক্ত করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিএমআই রিসার্চের পর এবার ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিক ইনস্টিটিউটের (আইআরআই) গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে উঠে আসে বাংলাদেশের রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য নানা দিক। আন্তর্জাতিক এ গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইনসাইড এ্যান্ড সার্ভের জরিপ রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিশ^াস করে দেশ সঠিক পথেই আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারে আস্থাশীল অধিকাংশ মানুষ। তারা সন্তুষ্ট দেশের গণতন্ত্র, নিরাপত্তা, বিদ্যুত ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়। প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের অর্থনীতি আশানুরূপ এগিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে বাংলাদেশের ৬২ ভাগ নাগরিক মনে করে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন ৬৯ ভাগ নাগরিক। জরিপের ফলের চিত্রের দিকে তাকালে দেখা যায়, ৬২ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন দেশ সঠিক পথেই আছে। ৬৯ শতাংশ মানুষ দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। ৬৮ শতাংশ মানুষ দেশের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর সন্তুষ্ট। ৫৭ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন আগামী দিনগুলোতে দেশ আরও নিরাপদ হবে। ৪৭ শতাংশ মানুষ মনে করেন তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ মানুষ আস্থার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের নেয়া নানা পদক্ষেপের ওপর। ৬৬ শতাংশ মানুষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর আস্থাশীল, ৬৪ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর আস্থাশীল, ৪৯ ভাগ মানুষ তাদের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে আশাবাদী। ৫১ শতাংশ মানুষ দেশের গণতন্ত্র নিয়ে সন্তুষ্ট। বর্তমান সংসদের ওপর আস্থাশীল ৫১ শতাংশ মানুষ। তবে ৪৯ শতাংশ মানুষ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাশীল। ৬৭ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে সন্তুষ্ট। ৬৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুতের বর্তমান অবস্থায় সন্তুষ্ট। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সন্তুষ্ট ৬১ শতাংশ মানুষ। আর ৮১ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন তারা আসন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ৬৬ ভাগ নাগরিকের কাছে জনপ্রিয় শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের প্রতি ৬৪ ভাগ নাগরিকের সমর্থন রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বর্তমান সরকার। আর সে কারণেই ৬৮ ভাগ নাগরিক জননিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট। এর মধ্যে ৫৭ ভাগ মনে করছেন, সামনে জননিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নতি হবে। দেশের বর্তমান গণতান্ত্রিক আবহ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন নাগরিকরা। পার্লামেন্টের কার্যক্রমের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়। নাগরিকদের কাছে ভোটাধিকার প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ৮১ ভাগ জানান, আগামী নির্বাচনে তারা ভোট দেবেন। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক বাস্তবতার পাশাপাশি ভোটের বছরের বাজেটে গ্রামের কৃষিজীবী মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, তার ফলও আওয়ামী লীগ নির্বাচনে পাবে। তারও আগে বিএমআই রিসার্চ তার এক প্রতিবেদনে ভবিষ্যতের যে দশটি উদীয়মান বাজার চিহ্নিত করেছিল তার মধ্যে প্রথম ছিল বাংলাদেশ। সংস্থাটির মতে, আগামী ১০ বছরে বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধির নতুন চালিকাশক্তি হবে এই ১০ উদীয়মান বাজার।
×