ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউইয়র্কে সৌদি, মার্কিন, আমিরাত ও ইসরাইলী পক্ষের মধ্যে সংলাপ

তেহরানে শাসক পরিবর্তনের ডাক

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তেহরানে শাসক পরিবর্তনের ডাক

ইরানে সরকার পরিবর্তনের বিষয়ে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ওয়াশিংটনে নিযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ও ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পরিচালক একমত হয়েছেন। নিউইয়র্কে ইরান বিরোধী এক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর পাশাপাশি সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল-জুবায়ের ইরানের সরকারকে উৎখাতের আহ্বান জানান। আল-জাজিরা। নিউইয়র্কে ইউনাইটেড এগেইনস্ট নিউক্লিয়ার ইরান (এনইউএএনআই) সম্মেলনে আল জুবায়ের এ কথা বলেন, ‘আমি মনে করি না ভেতর থেকে প্রচ- চাপ না বাড়ালে ওদের বাগে আনা সম্ভব। আমাদের সেভাবে কাজ করা উচিত।’ ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে করা পরমাণু চুক্তির বিরোধী দেশগুলো বৈঠকে যোগ দেয়। আরব আমিরাত পরিচালিত সংবাদপত্র দ্য ন্যাশনালকে জুবায়ের বলেন ‘আমরা কিভাবে একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারি যারা আমাদের হত্যা করতে ইচ্ছুক।’ সৌদি ও আরব আমিরাতের কর্মকর্তারা ২০১৫ সালের ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন। জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্লান অব এ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে ওই চুক্তিটি পরিচিত। ওই চুক্তির অধীনে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার বিনিময়ে ইরান তার পারমাণবিক কর্মসূচী বন্ধ রাখতে রাজি হয়েছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ওতাইবা বলেন, বাহ্যিক চাপ প্রয়োজন এবং এটি ইরানে শাসক পরিবর্তনের লক্ষ্য পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হবে। তিনি বলেন, ‘বাইরের নীতি থেকেই ইরানের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তন আসবে।’ তিনি আরও বলেন, তেহরানকে বিচ্ছিন্ন করতে ইউরোপীয় শক্তিগুলো, এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো ও একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে। ওতাইবা বলেন, ‘যদি সৌদি আরব ও আমিরাতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় তাহলে এর প্রতিক্রিয়া কি হবে এবং কিভাবে আমাদের রক্ষা করব তা আমাদের ভেবে দেখতে হবে। আমি বলছি ওটা কাল্পনিক কিন্তু এটা সত্যিকার অর্থে কাল্পনিক নয়। উপসাগরীয় দেশগুলো, ইসরাইল এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আসন্ন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।’ ইরান ইয়েমেনে কর্তৃত্ব গ্রহণের আয়োজন করছে বলে সতর্ক করে ওতাইবা বলেন, সাম্প্রতিক জাতিসংঘ নেতৃত্বাধীন শান্তি আলোচনার বিষয়ে হুতি নেতৃত্বের মাধ্যমে ইরানের মনোভাবই প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, লেবাননে যা ঘটেছে ইয়েমেনে যেন তা না ঘটে তা নিশ্চিত করতে আমাদের কায়েমি স্বার্থ রয়েছে। জেনেভায় ইয়েমেন শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ইরানকে দোষারোপ করেন। ৬ সেপ্টেম্বর জেনেভায় এই শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। গত প্রায় দুই বছরের মধ্যে এটাই প্রথম শান্তি আলোচনা হতে পারত। তবে হুতি প্রতিনিধিরা এই আলোচনায় যোগ দেয়নি। ইয়েমেনে লড়াই করা সৌদি-ইউএই জোট তাদের অবরোধ করে রেখেছে এই অভিযোগ এনে তারা আলোচনা বর্জন করে। ওতাইবা বলেন, আমাদের বিশ্লেষণ বলছে এই নির্দেশনার ঘাঁটি হচ্ছে তেহরান যার ফলে তারা আলোচনায় উপস্থিত হয়নি। ইরানের জন্য নিযুক্ত পররাষ্ট্র দফতরের বিশেষ প্রতিনিধি ব্রায়ান হুকও সম্মেলনে বক্তৃতা করেন এবং ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করার জন্য ইরানকে অভিযুক্ত করেন যেগুলো হুতি বিদ্রোহীরা সৌদি আরব ও ইউএইতে নিক্ষেপ করেছে। তিনি বলেন, ইরানের বিস্তার রোধ না করে আমরা মধ্যপ্রাচ্যে ঝুঁকি বাড়াচ্ছি। এই ক্ষেপণাস্ত্রের সম্বন্ধে বেশ কৌতূহল রয়েছে, এমনকি তারা এগুলো লুকাচ্ছেও না। এটা গভীর উদ্বেগের বিষয় এবং তারা এর দ্রুত ও যথাযথ জবাব পাবে বলেও তিনি বলেন। এদিকে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ইরানের পরমাণু সমঝোতা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। বুধবার রুহানি দাবি করেন যে, তার দেশ পরমাণু সমঝোতার বিষয়ে শতভাগ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে।কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে পরমাণু সমঝোতা থেকে সরে এসেছে। এটা কখনই কাম্য নয়।
×