ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ মামুন আল মাহতাব (স্বপ্নীল)

তোরা সব জয়ধ্বনি কর

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তোরা সব জয়ধ্বনি কর

ছাত্রলীগের সঙ্গে আমার প্রথম সখ্য ১৯৮৫ সালে ঢাকা কলেজের করিডরে। তারপর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাসে মিছিলে-সেøাগানে আমাদের সেই যে প্রগাড় বন্ধন আজও তা অটুট। সময়ের বিবর্তনে তা বেড়েছে বৈ কমেনি। জীবনে বহু সংগঠনের সঙ্গে আমি জড়িত হয়েছি- রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা পেশাজীবী, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক। নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমার প্রিয়তম সংগঠন ওই বাংলাদেশ ছাত্রলীগই। সাংগঠনিক পদ-পদবিও পেয়েছি নানা সংগঠনে। সামাজিক এবং অবস্থানগত কারণে এখন কেউ আর কোন পদবি ছাড়া আমাকে কোন সংগঠনে সংশ্লিষ্ট হবার আমন্ত্রণও জানান না। কিন্তু দুই দশকেরও বেশি সময় আগে অর্জিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য পদটি এখনও আমার কাছে আমার পাওয়া সবচেয়ে বড় পদবি। আমি দেখি এক সময় যারা ছাত্রলীগকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন আজ তারা কতটাই সুপ্রতিষ্ঠিত আর অনুপ্রাণিত হই আমার প্রতি চিকিৎসক হিসেবে তাদের আস্থায়। তাদের একেকজন আমাকে প্রতিনিয়ত গর্বিত করেন স্ব-স্ব পেশায় তাদের প্রতিষ্ঠায় আর বঙ্গবন্ধু আদর্শের প্রতি তাদের অবিচল আস্থায়। আমি সামান্য চিকিৎসক, নই তেমন নামী-দামী, কেউকেটা। কিন্তু আমি যখন আমার আশপাশে তাকাই, আমি তো এমন অনেককেই দেখি যারা তাদের চিকিৎসক পেশার উর্ধে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছেন আর ছাত্রজীবনে প্রত্যেকেই করেছেন ছাত্রলীগ। তাদের আমরা এক নামে চিনি, জানি না শুধু তাদের ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড। ডাঃ দিপু মনি, এদেশের সফল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। তার সময়ই দেশের সমুদ্র মানচিত্র হয়েছে সম্প্রসারিত। জানি না জানতেন কিনা যে রাজনীতিতে তার হাতেখড়ি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে এই ছাত্রলীগের হাত ধরেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডাঃ কনক কান্তি বড়ুয়াকে সবাই চিনি একজন প্রখ্যাত নিউরো সার্জন হিসেবে। কয়জন জানি তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সাবেক সদস্য? মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের পাড়ার যে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালটি বছরের পর বছর পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়ার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে শ্রেষ্ঠ হাসপাতালের তকমা জিতে চলেছে, জানতেন কি তিনি ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক? একজন অধ্যাপক ডাঃ হারিসুল হক। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নয় বরং কবি হিসেবেই দুই বাংলায় অধিক পরিচিতি তার। নোবেল কমিটির উদ্যোগে ইউরোপের শহরে শহরে অনুষ্ঠিত হয় যার কবিতা আবৃতির অনুষ্ঠান, তিনিও কিন্তু চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের প্রাক্তন সভাপতি। শহীদ কন্যা ডাঃ নুজহাত চৌধুরী- আমার স্ত্রী হিসেবে নয়, বরং যুদ্ধাপরাধের বিচারের যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠায় তিনি যুব সমাজের মাঝে যে অসীম আগ্রহের সঞ্চার করেছেন, সেই বিবেচনাতেই তার নামটাও টেনে আনা। জানতেন কি এই ডাঃ নুজহাত চৌধুরীও ছাত্র জীবনে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট ছিলেন? আমি চিকিৎসক তাই অন্য পেশায় যাচ্ছি না, কিন্তু হলফ করে বলতে পারি প্রতিটি পেশায় সফলদের তালিকা ঘাটলে দেখতে পাবেন ছাত্রলীগের এমনি অসংখ্য পদচিহ্ন। সব মাছ বর্জ্য খেলেও দায়-দায়িত্ব গিয়ে পড়ে দু’একটা মাছের ঘাড়েই। আর ছাত্রলীগের বেলায় ব্যাপারটা বোধকরি একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই প্রযোজ্য। কেন্দ্র থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত ছাত্রলীগের কমিটিগুলোয় পদবিধারী সংখ্যা আমি ভুল না জেনে থাকলে ২৫ লাখের বেশি। এটি-ই সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। অথচ এত বড় যে সংগঠন, এত লাখ যার নেতা ও কর্মী, তার কোন একটি ইউনিটের যে কোন একজন নেতা বা কর্মীর যে কোন অন্যায়ের দায়-দায়িত্ব আমরা কি অবলীলায় না চাপিয়ে দিতে দেখি ছাত্রলীগের ঘাড়ে। কেউ যদি পাড়ার দোকানিকে বাকির টাকা শোধ না দেয় তবে সেই দোষ ছাত্রলীগের, চাঁদা তুললে তো কথাই নেই আর প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়ে কোন অঘটন ঘটালে তা তো আট কলামের হেডলাইন। এমনি অপপ্রচার বরাবরই ছিল, ছিল একাত্তরের আগে আর পরে, ছিল আশির দশকে, আছে এখনও। কখনও ছাত্র ইউনিয়ন, কখনও জাসদ ছাত্রলীগ, কখনও ছাত্রদল আর কখনও আবার ইস্যুভিত্তিক ছাত্র মোর্চাগুলোকে মহিয়ান করার অপচেষ্টা আমরা দেখে এসেছি শুধু ছাত্রলীগকে হেও করার হীন উদ্দেশ্য থেকে। তাতে ছাত্রলীগ থেমে থাকেনি। ইতিহাস পেছন ফিরে ছাত্রলীগকে তার প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছে বার বার। এদেশের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আর প্রগতিশীলতার প্রতিটি আন্দোলনের ইতিহাস তাই ছাত্রলীগ ছাড়া অপূর্ণ। ছাত্রলীগের ইতিহাস তাই গৌরবের, ভবিষ্যত তাই জোড় কদমে সামনে এগিয়ে চলার। আজ বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় উল্লাসের উপলক্ষ। এটি একজন মহীয়সী নারীর জন্মদিন। তিনি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন সাবেক নেত্রী। তার নেতৃত্বে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দ্রুতবেগে ধাবমান। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ নিয়ে ভুট্টোর মন্তব্য ছিল, ‘বাংলাদেশ কিভাবে টিকবে? ওদের তো আলু কেনার পয়সাই নাই।’ একজন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ শুধু গর্বিত অহঙ্কারে টিকেই নাই, দেশটি আজ আলু উৎপাদনে পুরো পৃথিবীতে চতুর্থ স্থানে। তাই তো পাকিস্তানের টিভি টকশোতে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাদের সুশীলের আর্তি, ‘সুইডেন নেহি, পাচ বারাসমে নেহি, খোদাকি ওয়াস্তে হামে দাস বারাসমে বাংলাদেশ বানাদো!’ দাম্ভিক ভুট্টোর দলকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যে এ্যামেচার রাজনীতিবিদ আজকের পাকিস্তানের ক্ষমতার শীর্ষে তিনি এমন একটি রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিয়েছেন যার প্রবৃদ্ধির হার পাঁচের ঘরে আর আমাদেরটা সাতের ওপরে। তাদের বার্ষিক রফতানি আয় বিশ বিলিয়নের ঘরে আর আমাদেরটা চল্লিশ ছুঁই-ছুঁই। এক ডলার ভাঙ্গালে আপনি পাবেন এক শ’ বিশটি পাকিস্তানী রুপি, কিন্তু মাত্র চুরাশিটি বাংলাদেশী টাকা। মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রতিটি সূচকেই তারা আমাদের যোজন-যোজন পেছনে। যে পারমাণবিক শক্তি নিয়ে তাদের এত গর্ব, সেই প্রযুক্তিও এখন আমাদের হাতের নাগালে। ওদের প্রযুক্তি এখন ওদের বোঝা, মাথাব্যথার কারণ আর আমাদের পারমাণবিক বিদ্যুত আমাদের সামনে ঠেলে দেবে আরও দ্রুততায়। আমার প্রয়াত পিতা ছিলেন সরকারের উর্ধতন যোগাযোগ কর্তা। বিএনপি সরকারের অধীনে চাকরি করার দুর্ভাগ্যও তার হয়েছিল। সে সময়কার যোগাযোগমন্ত্রীর মুখে হরহামেশা শোনা যেত বুলেট ট্রেনের গল্প। আমার পিতাকে প্রশ্ন করলে তা উড়িয়ে দিতেন এক ফুৎকারে। বলতেন সব লোক দেখানো, কার্যত সরকারের কোন পরিকল্পনাই নেই এসব বিষয়ে। সেই বাংলাদেশ এখন আবার বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন দেখছে। আমার পিতা অবসরপ্রাপ্ত এবং প্রয়াত। কাজেই ভেতরের খবরটা জানার সুযোগ আমার তাই আর নেই। কিন্তু আমি জানি এবার ছুটবেই বুলেট ট্রেন। শুধু আমি না, এমন বিশ্বাস এদেশের প্রতিটি নাগরিকের, তা তিনি নৌকার ভোটার হন, আর না-ই হন। কারণ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের এটা বিশ্বাস করতে শিখিয়েছেন। আমরা চোখের সামনে দেখছি পদ্মা ব্রিজের বাস্তবতা, ঢাকার রাস্তার বুকচিড়ে গর্বিত ভঙ্গিমায় দাঁড়াতে দেখছি মেট্রোরেল আর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একের পর এক পিলার। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র, চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ আর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক আর কর্ণফুলীর নিচের টানেলও আজকের বাস্তবতা। আর এই প্রতিটি বাস্তবতা যার একক অবদান, সেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতির সূতিকাগারও কিন্তু এই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ-ই। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেত্রী হিসেবে তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রীত্বের শপথ নিয়েছেন তিনি। হয়তো চতুর্থবারও নিবেন। কিন্তু জানতেন কি, নির্বাচিত হিসেবে প্রথমবারের মতো তিনি শপথ নিয়েছিলেন ছাত্রলীগের মনোনয়নে তৎকালীন ইডেন গার্ল কলেজ, বর্তমানে বেগম বদরুন্নেসা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সংসদের ভিপি হিসেবে। শেখ হাসিনা শুধু আওয়ামী লীগের নেত্রীই নন, ছাত্রলীগের নেতৃত্বও তার হাতেই সমর্পিত। আজ প্রধানমন্ত্রীর ৭২তম জন্মদিন- বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় উৎসবের দিন। আটাশকে সামনে রেখে তাই টকবগিয়ে ওঠে রক্ত, উছলিয়া উঠে চিত্ত/‘ওরে -তোরা সব জয়ধ্বনি কর’! লেখক : অধ্যাপক ও গবেষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
×