জন্মিলে মরিতে হবে এই সত্য সবাই জানে আমাদের প্রিয় নবী (সা) বলেছেন তোমরা প্রত্যেক দিন অন্ততপক্ষে ৭০ বার মৃত্যু চিন্তা করবে। কোরান মজিদে ইরশাদ হয়েছে কুল্লু নাফসিন যায়িকাতুন মওত প্রত্যেক জীবাত্মাকে মৃত্যুর আস্বাদন গ্রহণ করতে হবে।
হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে কত মানুষের যে মৃত্যু হয়েছে তা নির্ণয় করা কঠিন। প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ভাই কাবিলের পাথরের আঘাতে হাবিলের। আর মৃত্যুর পেছনে আকলিমা নামের এক নারীকে পাওয়ার ঘটনা ছিল। কোরান শরীফে এই ঘটনার উল্লেখ আছে।
পৃথিবীতে এক লাখ চব্বিশ হাজার মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রসুল এসেছেন। তাঁরা পৃথিবীতে এসেছিলেন মানুষকে হিদায়েত করার জন্য। তাঁরা কেউ বেঁচে নেই। হযরত সোলায়মান (আ) জেরুজালেমে একটা এবাদতগাহ নির্মাণ করান জিনদের দিয়ে। নির্মাণের শেষ পর্যায়ে হযরত আজরাইল (আ) আল্লাহর নির্দেশে তাঁর জান কবজ করতে এসেছিলেন। তিনি একটা লাঠি ভর দিয়ে নির্মাণ কাজে তদারকি করছিলেন। এই অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হলে জিনরা তাদের কাজে বিরতি দেবে। তাই তিনি কিছুটা সময়ের জন্য দোয়া করলে ওই অবস্থাতেই তাঁর জান কবজ করা হয়। আর তিনি লাঠি ভর দেয়া অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকেন। জিনরা টেরই পায়নি নবী সোলায়মান মারা গেছেন। তারা পুরো উদ্যমে কাজ করেই চলছে এবং শেষমেশ এবাদতগাহ নির্মাণ সমাপ্ত হলে লাঠিটায় উঁই লেগে ভেঙ্গে পড়ে। হযরত সোলায়মান (আ) মাটিতে পড়ে যান। তখনই জিনরা টের পায় তাদের নবী সোলায়মান (আ) আর ইহলোকে নেই। জালালউদ্দিন রুমীর মহানবী শরীফে আছে হযরত সোলায়মান (আ)-এর দরবারে এক ভারতীয় ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর সময় ঘনিয়ে এলে হযরত আজরাইল (আ) এসে দেখেন, যেখানটায় তার মৃত্যু হওয়ার কথা সে সেখানে নেই। আজরাইল ফেরেশতা তার সামনে গিয়ে ভয় প্রদর্শন করতে লাগলেন। ওই ভারতীয় অস্থির হয়ে উঠল। হযরত সোলায়মান (আ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন তুমি এত অস্থির হয়ে উঠছ কেন। ভারতীয় ব্যক্তি বললেন আমার দেশের বাড়িতে যাওয়ার জন্য এ রকম অবস্থা হয়েছে। তখন হযরত সোলায়মান (আ) দ্রুতগামী কার্পেটের ওপর চড়ায়ে তাকে হিন্দুস্তান পাঠিয়ে দিলেন। হিন্দুস্তান এসে তিনি দেশের মাটিতে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজরাইল (আ) তার জান কবজ করলেন।
আমাদের দেশে একটা প্রবাদ আছে। মৃত্যু যদি থাকে বায়/দুর্বাবনে বাঘে খায়। কার মৃত্যু যে কখন কোথায় হবে তা আল্লাহ্্ জাল্লা শানুহু ছাড়া কেউই জানে না।
মানুষের বয়স বাড়ে কিন্তু আয়ু কমে যায়। তাই হায়াত দারাজি বা লম্বা হায়াতের জন্য দু’আ করা হয়, মানুষের মৃত্যু হলে তার লাশ দ্রুত মুসলিমের লাশ গোসল দিয়ে সাদা কাফন পরিয়ে সাধ্যিমতো সুগন্ধি মাখিয়ে কবরে দাফন করা, ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরাও কবরে দাফন করে, হিন্দু ও বৌদ্ধরা দাহ করে, আবার পারসিকরা লাশ উঁচু স্থানে রেখে আসে, সমুদ্র পথে কেউ মারা গেলে তার লাশ বিশেষ ব্যবস্থাপনায় ছেড়ে দেয়া হয়।
মানুষ মারা যায় অর্থাৎ তার পার্থিব জীবনের স্থায়িত্বের অবসান ঘটলেও কিন্তু তার গমন ঘটে মৃত্যুর ওপারে আর এক জগতে। যাকে বলা হয় আলমে বরযাখ বা অন্তর্বর্তীকালীন জগত বা কবরের জগত। এই জগতে আত্মারা সংরক্ষিত থাকে, ভাল আত্মা থাকে ইল্লিনে এবং মন্দ আত্মা থাকে সিজ্জিনে। কেয়ামতের দিন সব আত্মাকে হাশরের ময়দানে ওঠানো হবে এবং সেখানে বিচার করা হবে, বিচারে যারা নির্দোষ প্রমাণিত হবে তারা স্থান পাবে জান্নাতে আর যারা বিচারে দোষী সাব্যস্ত হবে তাদের স্থান হবে জাহান্নামে।
হযরত আদম আলায়হিস্্ সালাম থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত যত মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাদের আত্মা কবর জগতে সংরক্ষিত রয়েছে পৃথিবীতে কোটি কোটি কবর রয়েছে। মক্কা শরীফে রয়েছে জান্নাতুল মুযাল্লা। এই কবরস্থানে রয়েছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের পূর্ব পুরুষগণের কবর, এখানেই রয়েছে উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহার মাজার শরীফ এবং তাঁর পায়ের দিকে রয়েছে তাঁর দুই পুত্রের মাজার। বর্তমান লেখক হজে গিয়েছেন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে। ওই মাজারগুলো জিয়ারত করেছিলেন। এই জিয়ারতকালে এক অপূর্ব আবেগ সঞ্চারিত হয়েছিল। মদিনা শরীফে রয়েছে জান্নাতুল বাকি। এই কবরস্থান পুত্র আবিফবিল্লাহ্্ মিঠুকে সঙ্গে নিয়ে জিয়ারত করেছিলেন বর্তমান লেখক। কবর জিয়ারতের মধ্যে এক অপূর্ব অনুভূতি সঞ্চারিত হয়। মৃত্যুচিন্তা সর্বক্ষণ ধারণ করতে পারলে পাপকর্ম থেকে দূরে থাকা যায়।
লেখক : পীর সাহেব দ্বারিয়াপুর শরীফ