ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংকট ॥ ব্যবসায় বড় ক্ষতি

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সংকট ॥ ব্যবসায় বড় ক্ষতি

অনলাইন ডেস্ক ॥ ২০১৫ সালে করা পারমাণবিক এক চুক্তি থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দেশকে বের করে নিয়েই ক্ষান্ত হননি, কঠোর নিষেধাজ্ঞাও আরোপ করেছেন। নভেম্বর থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে, তবে এখন থেকেই ইরানের সাঙ্গে ব্যবসা করে যেসব দেশ ও কোম্পানি তাদেরকে হুমকি দিতে শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ইউরোপীয় মিত্রদেরও ছেড়ে কথা বলছে না হোয়াইট হাউজ। যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া আর যে পাঁচটি দেশ ইরানের সাঙ্গে চুক্তি করেছিল- ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া ও চীন- তারা এই নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করছে। এমনকি ইরানের সাথে বাণিজ্যে মার্কিন ডলারে লেনদেনের বিকল্প ব্যবস্থা খোঁজা হচ্ছে বলে মঙ্গলবার এক ঘোষণা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। প্রায় সাঙ্গে সাঙ্গেই এই পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। প্রচ্ছন্ন হুমকি উচ্চারণ করেছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের হুমকিতে কোন কোন ব্যবসা বা কোম্পানি এখনও ইরানের সাঙ্গে ব্যবসা করে যাচ্ছে। কারা পাততাড়ি গোটাচ্ছে- সেবিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি। পারমানবিক কর্মসূচি স্থগিত করার শর্তে ছয়টি দেশ তেহরানের সাথে এক চুক্তির পর ২০১৫ সালে ইরানের ওপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। তারপর থেকে বিদেশী স্বাস্থ্যসেবা কোম্পানি বা গাড়ি নির্মাতা থেকে শুরু করে আর্থিক বা বিমান নির্মাতারাও ইরানে ব্যবসার সুযোগ খুঁজতে শুরু করে। জার্মান গাড়ি নির্মাতা ভোক্সওয়াগেন, ফরাসী গাড়ী নির্মাতা র্যেঁন ইরানের বাজারে গেছে। ফরাসী জ্বালানি কোম্পানি টোট্যাল ১০০ কোটি ডলারের ব্যবসা পেয়েছে। জার্মান কোম্পানি সিমেন্স ইরানের রেল-নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের কাজ পেয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সালের মে মাসে পারমানবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাহারের পর নতুন এই অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র শাস্তি দিতে পারে এই ভয়ে ইউরোপীয় এসব কোম্পানির অনেকগুলোই ইরানে কাজকর্ম স্থগিত করেছে। অনেকে চলে গেছে। ফরাসী জ্বালানি কোম্পানি টোট্যাল জানিয়েছে, তারা ইরান এবং চীনা কোম্পানি সিএনপিসি'র সাথে ১০০ কোটি ডলারের যে চুক্তি করেছিল, তা থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ডেনমার্কের শিপিং কোম্পানি মার্স্ক জানিয়েছে তারা ইরানে আর কোনো নতুন চুক্তি করবে না। ইরানে নতুন একটি গাড়ি তৈরির কারাখানার কাজ শুরু করেছিল ফরাসী কোম্পানি র্যেনঁ। তাদের সিনিয়র কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরানে তাদের কাজ স্থগিত রাখা হবে। মার্কিন কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিক, যারা ইরানের তেল ও গ্যাস খাতে কাজ করছিল, জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আইন মানতে তারা নভেম্বরের আগে কাজ বন্ধ করে দেবে। ইরানের দুটি কোম্পানির সাথে বিমান বিক্রির চুক্তি করেছিল বোয়িং। তারা জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিমান সরবরাহ করবে না। ভারতের কোম্পানি রিলায়েন্স জানিয়েছে তারা ইরান থেকে আর অপরিশোধিত তেল আমদানি করবে না। জার্মান কোম্পানি সিমেন্স বলছে ইরানের সাথে নতুন কোনো ব্যবসা তারা করবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন এমন একটি ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে চাইছে যাতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইরানের সঙ্গে বৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। জাতিসংঘের সঙ্গে এ ব্যাপারে ইইউ পরামর্শও করছে। লেনদেনে মার্কিন ডলারের বিকল্প, এমনকি বিনিময় প্রথার মাধ্যমে ব্যবসা করার কথাও ভাবা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে, অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোকে ভরসা দিয়ে ইরানের সাথে ব্যবসা চালিয়ে যেতে রাজী করানো কঠিন হয়ে পড়বে। বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আমেরিকার এতটাই প্রাধান্য যে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলো নিষেধাজ্ঞা ভাঙতে ভয় পাবে। তবে চীন ইরান থেকে জ্বালানি তেল আমদানি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু চীনা মুদ্রা ইউয়ান বা রাশিয়ান রুবল দিয়ে সেই ব্যবসা অব্যাহত রাখা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে অনেক বিশেষজ্ঞ সন্দিহান।
×