ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

‘ফুটবলের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার শপথ নিন’

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

‘ফুটবলের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার শপথ নিন’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘ফুটবলের সোনালি দিন ফিরিয়ে আনার শপথ নিন’... এই স্লোগানকে সামনে রেখে আগামী শনিবার বেলা ১১টায় কক্সবাজারের একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভা। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ বন্দরনগরী চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিশিষ্ট ফুটবল সংগঠক বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব তরফদার মোঃ রুহুল আমিন দেশের তৃণমূলের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠকদের বরণ করে নেবেন। এই সাধারণ সভায় অংশ নেবেন দেশের ৬৪ জেলা এবং আট বিভাগের ফুটবল সংগঠক। বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন নামের নতুন এই সংগঠনটি নিয়ে ফুটবলাঙ্গনে তৈরি হয়েছে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনার। অনেকেই বলছেন, এটি হচ্ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে (বাফুফে) টেক্কা দেয়ার জন্য সমান্তরাল একটি সংগঠন। কেননা বাফুফের অধীনে যেখানে জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন (ডিএফএ) আছে, সেখানে একই ধারার আরেকটি সংগঠনের হেতু কি। জানা গেছেÑ বাফুফের কর্মকা-ে এবং সার্বিকভাবে দেশের ফুটবলের অব্যাহত অধঃপতনে বীতশ্রদ্ধ হয়েই এই সংগঠনের জন্ম। বাফুফের সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিনের প্রতিই সমস্ত অভিযোগ। তিন-তিনবার সভাপতি হয়েও তিনি আজ পর্যন্ত পুরুষ জাতীয় দলকে শক্তিশালী করতে পারেননি। তার আমলে একবারও সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেই উঠতে পারেনি বাংলাদেশ। বছর দুয়েক আগে তিনি তৃতীয়বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়েই ঘোষণা দিয়েছিলেন এটাই তার সভাপতি হিসেবে শেষবারের মতো দায়িত্ব পালন করা। অথচ সম্প্রতি জানা গেছে, তার সিদ্ধান্ত বদলে গেছে। আবারও খায়েশ হয়েছে নির্বাচন করার! অতীতে দেখা গেছে সালাউদ্দিন যাদের সাহায্য নিয়ে নির্বাচনের বৈতরণী পার হয়েছিলেন, তাদেরই তিনি ‘ল্যাং’ মেরে ফেলে দিয়েছেন। প্রথমবার তিনি সভাপতি হন ২০০৮ সালে। সেবার তাকে ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুলের সাধারণ সম্পাদক এবং তৎকালীন বাফুফের সহ-সভাপতি মনজুর হোসেন মালু তার ক্লাবের কাউন্সিলরশিপ দিয়ে নির্বাচনে দাঁড় করানোর পাশাপাশি নির্বাচনে জেতাতে যাবতীয় সাহায্য করেছিলেন। অথচ বিস্ময়করভাবে জয়ী হয়েই সালাউদ্দিন মালুকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দিয়ে ‘উপকারের যোগ্য প্রদিতান’ দেন! পরের নির্বাচনে (২০১২) সালাউদ্দিনকে একইভাবে সমর্থন-সহযোগিতা করে পাস করান তারই ঘনিষ্ঠ বন্ধু, শেখ জামাল ধানম-ি ক্লাবের সভাপতি এবং জেলা ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, ফুটবল অন্তঃপ্রাণ সংগঠক মনজুর কাদের। যে কাদের সালাউদ্দিনের জন্য এতকিছু করলেন, সেই কাদেরকেই তিনি পরবর্তীতে শত্রু বলে গণ্য করেন এবং তাকেও বাফুফেতে নিস্ত্রিয়-অবমূল্যায়িত করেন। সবর্শেষ নির্বাচনে ২০১৬ সালে সালাউদ্দিনকে জয়ী করাতে প্রধান ভূমিকা নেন তরফদার রুহুল আমিন। এরপর স্বভাবসুলভ স্টাইলে তাকেও চরম শত্রু বানিয়ে ফেলেন সালাউদ্দিন! সালাউদ্দিনের আমেলই ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর বাংলাদেশের ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ফল রচিত হয়। ‘এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফ-২’এ ভুটানের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ। এর ফলে পরের তিন বছর বাংলাদেশ ফিফা ও এএফসি স্বীকৃত কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ হারায়। বাংলাদেশের ফুটবলের এই অধঃপতনের দায়ভার কোনভাবেই এড়াতে পারে না বাফুফে। তাদের সাংগঠনিক ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং অদূরদর্শিতায় দেশের ফুটবলের এই অবস্থা। সালাউদ্দিনের আমলে তৃণমূল ফুটবল বলতে গেলে নির্বাসনেই চলে যায়। গত নয় বছরে সালাউদ্দিন পাত্তাই দেননি তৃণমূল এবং বয়সভিত্তিক ফুটবলকে। মজেছিলেন জাতীয় দল এবং পেশাদার লীগ নিয়েই। পাইপলাইনে দক্ষ ফুটবলার না থাকার পরিণাম এই নয় বছরে পরিষ্কার হয়ে গেছে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২০১৭ সালে যেসব কার্যক্রম পরিচালনা করার কথা ছিল সেগুলো সময়মতো করতে পারেনি বাফুফে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ সময়মতো শুরু এবং শেষ করা যায়নি। ফেডারেশন কাপ, স্বাধীনতা কাপও সময়মতো হয়নি। মার্চে এএফসির আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট থাকায় এবার আন্তর্জাতিক আসর বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের সূচীতেও পরিবর্তন এসেছে। শেখ কামাল ক্লাব কাপ আয়োজনেরও কোন খবর নেই। সর্বশেষ নির্বাচনের আগে নির্বাচনী ইশতেহারে সালাউদ্দিন জেলা ফুটবলেই বেশি নজর দেয়ার প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন। কিন্তু কথার সঙ্গে কাজের কোন মিল রাখতে পারেননি তিনি। আর এ প্রেক্ষিতেই জন্ম হয়েছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশনের মতো বিকল্পধারা-সমান্তরাল নতুন সংগঠনের। শুধু তাই নয়, সালাউদ্দিন এ রকম যে ২৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেগুলোর বেশিরভাগই পূরণ করতে পারেননি তিনি। বরং এখন তিনি তার পদ আঁকড়ে ধরে রাখতে চান মহিলা ফুটবলের সাফল্য দিয়ে। অনেকেই বলেন, সালাউদ্দিন যে কোন কাজই শুরু করেন ঢাকঢোল পিটিয়ে, মহাসমারোহে। কিন্তু তার কাজের শেষটা আর দেখা যায় না। এখন দেখার বিষয়, সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে ঢাকঢোল পিটিয়ে নতুন এই সংগঠনের পথচলা কেমন হয়। তবে আশা করা যায় একেবারে খারাপ হবে না।
×