ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশেষজ্ঞদের অভিমত

মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত সঠিক হয়নি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শেয়ারবাজারের স্বার্থে ২০১০ সালে মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে কোন রকম যাচাই-বাছাই ছাড়াই সরকারের নির্দেশনায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এটি সঠিক হয়নি বলে মনে করছেন শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা। যা মিউচুয়াল ফান্ড খাতটিকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে বলে মনে করেন তারা। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, শেয়ারবাজারের স্বার্থ চিন্তা না করে, শুধু সরকারের নির্দেশনায় মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক হয়নি। এটি শেয়ারবাজারের অন্তরায় কাজ করবে। একইসঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ড খাতের জন্য এই সিদ্ধান্ত বড় ধাক্কা। এছাড়া এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে একটি গোষ্ঠীকে সহযোগিতা করা হলেও বিনিয়োগকারীদের বিপদের মুখে ও তাদের স্বার্থকে ঝুঁকিতে ফেলা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিএসইসি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর মাধ্যমে বিনিয়োগকারীরা নতুন বাস্তবতার স্বীকার হবে। মিউচুয়াল ফান্ড আইনে মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও শেয়ারবাজারের স্বার্থে ২০১০ সালে তা স্থগিত করা হয়। তবে একটি সম্পদ ব্যবস্থাপক বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য সেটিও আবার প্রত্যাহার করে নিয়েছে বিএসইসি। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এবি মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, মেয়াদি ফান্ডগুলো গঠন করা হয়েছে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে অবসায়নের জন্য। তাই ফান্ডগুলোর মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক না। এ সিদ্ধান্ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করতে পারে। প্রয়োজনে নতুন ফান্ড গঠন করা যেতে পারে। তিনি আরও বলেন, বিএসইসি একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সকল সিদ্ধান্ত বিএসইসির নেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে সরকারের কোন সিদ্ধান্ত দেয়া ঠিক না। তবে শেয়ারবাজারের স্বার্থে সরকার সুপারিশ করতে পারে। যা যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে বিএসইসি। জানা গেছে, একটি এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠানের কিছু ফান্ডের মেয়াদ কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হবে। তবে ওই এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠান ফান্ডগুলোর টাকা অপব্যবহার করেছে। যাতে মেয়াদ শেষে অবসায়নে ইউনিট হোল্ডারদের টাকা প্রদানের সক্ষমতা নেই। এ কারণে শুরুতে ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিএসইসিতে তদবির করে। তবে এক্ষেত্রে বিএসইসি সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়। পরে ওই এ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করা হয়। যার আলোকে অর্থমন্ত্রী ফান্ডের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য বিএসইসিতে সুপারিশ করে। এর আগে ২০১৪ সালে বেশ কিছু মেয়াদী ফান্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে আসার প্রেক্ষাপটে দেশের প্রথম বেসরকারী সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি এইমস বাংলাদেশ এইমস প্রথম এবং গ্রামীণ ওয়ান স্কিম-১ মিউচুয়াল ফান্ডের আরও ১০ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু শেয়ারবাজারের স্বার্থে বিএসইসি তা নাকচ করে দেয়। যা নিয়ে ২০১৬ সালের ৩১ মে এইমস ফার্স্ট ও গ্রামীণ ওয়ান : স্কিম ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়ন-সংক্রান্ত দায়ের করা সব রিট খারিজ করে দেন সুপ্রীমকোর্টের আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসেন হায়দারের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ। এ রায়ের ফলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির প্রজ্ঞাপন অনুসারে মিউচুয়াল ফান্ডের অবসায়নের বাধা দূর হয়। মিউচুয়াল ফান্ড আইন ২০০১ এর ৫০খ ধারায় বলা হয়েছে, মেয়াদী স্কিমের মেয়াদ অনুরূপ একটি মেয়াদের জন্য বাড়ানো যাবে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার ১ বছর আগে বিশেষ সভার (ইজিএম) মাধ্যমে ইউনিট হোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে। এক্ষেত্রে তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভোটের মাধ্যমে এই মেয়াদ বাড়ানো যাবে। তবে ২০১০ সালে বিএসইসি এক আদেশের মাধ্যমে তা স্থগিত করেন। ২০১০ সালের ২৪ জানুয়ারির ওই আদেশে বলা হয়, শেয়ারবাজারের অব্যাহত উন্নয়ন ও জনস্বার্থে সকল মেয়াদী মিউচুয়াল ফান্ডের মেয়াদ ১০ বছরের বেশি হইবে না। আর চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বরের এক আদেশে সেটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। শেয়ারবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বিএসইসির উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্তের কারনে মিউচুয়াল ফান্ড খাতটি ধ্বংসের পথে।
×