ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইইউ, চীন ও রাশিয়ার নয়া পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ইইউ, চীন ও রাশিয়ার নয়া পরিকল্পনা

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ইরান নিয়ে দূরত্ব আরও বেড়েছে। মঙ্গলবার নিউইয়র্কে ইউরোপীয় নেতৃবৃন্দ মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেহরানের সঙ্গে বাণিজ্য বিষয়ে কর্মকৌশল ঘোষণার পর উভয় পক্ষের মধ্যে সম্পর্কে তিক্ততা আরও বেড়েছে। এএফপি ও গার্ডিয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের একতরফাভাবে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইরান, চীন ও রাশিয়া একটি পরিকল্পনা ঠিক করেছে। ইরানের অর্থনীতিকে দুর্বল করা এবং দেশটি যেন ২০১৫ সালে সম্পাদিত চুক্তি নতুন করে প্রণয়নের জন্য আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় সেই উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্র ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইইউ কূটনীতিকরা আশা করছেন, স্পেশাল পারপোজ ভেহিকল (এসপিভি) নামে পরিকল্পিত পদক্ষেপ অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরানকে চুক্তির মধ্যে থাকতে উদ্বুদ্ধ করবে। কারন এটি হতে পারে তাদের ভেঙ্গে পড়া অর্থনীতিকে বাঁচানোর অন্যতম উপায়। ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন শুরুর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো যেমন বাদানুবাদ করেছিল ঠিক সেরকম ঘটনাই ঘটে মঙ্গলবার। ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করতে অনিচ্ছুক ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন। রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি ব্রিটেন, জার্মানি ও ফ্রান্স ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তিতে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ব্যর্থ হয়। ওই চুক্তিতে পরমাণু কর্মসূচী বন্ধের বিনিময়ে ইরানের ওপর থেকে একাধিক নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র্র ওই চুক্তি থেকে সরে গিয়ে ইরানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যা নবেম্বর থেকে পূর্ণমাত্রায় কার্যকর হবে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফের সঙ্গে বৈঠকের পর ইইউর পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান ফেডেরিকো মোগেরিনি বলেন, মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করতে ইউরোপীয় দেশগুলো একটি ‘আইনী কাঠামো’ তৈরি করছে। ইরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্র বের হয়ে যাওয়ার পর তেহরানের ওপর ওয়াশিংটন যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে তার ফলে অধিকাংশ ইউরোপীয় কোম্পানি ইরানের সঙ্গে ব্যবসা করা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। নতুন ‘আইনী কাঠামো’য় তারা আবারও ব্যবসা শুরু করতে পারবে। এই ব্যবস্থা কী করে কাজ করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। মোগেরিনি বলেছেন, এসপিভি এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যা তেলসহ ইরানের রফতানিকৃত সামগ্রীর মূল্য পরিশোধ এবং আমদানির ক্ষেত্রে অর্থ পরিশোধের কাজ ইইউর আইন অনুসারে করা যাবে। ইরান ও ইইউর মধ্যে জাতিসংঘ সদর দফতরে বৈঠকের পর এ ঘোষণা আসে। বিশ্ব বাণিজ্যে যুক্তরাষ্ট্রও ডলারের প্রাধান্যের কথা বিবেচনায় রেখে ইইউরোপীয় কূটনীতিকরা এ পথে পা বাড়িয়েছেন। তারা চান ইরানের সঙ্গে তাদের দেশের কোম্পানিগুলো ব্যবসা চালিয়ে যাক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ভাষণে বলেন, তেহরানের নেতৃত্ব মধ্যপ্রাচ্যে বিশৃঙ্খলা, প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের বীজ বপন করছে। পরে ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি তার ভাষণে বলেন, তেহরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের একক নিষেধাজ্ঞা আরোপ অর্থনৈতিক সন্ত্রাসের একটি ধরন। সাধারণ পরিষদের পার্শ্ব আয়োজনে বক্তৃতা দেয়ার সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, তিনি ইউরোপীয়দের এমন পরিকল্পনায় হতাশ ও বিরক্ত। তার মতে, এটি আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে অস্থিতিশীল করবে। তিনি বলেন, তেহরানকে রাজস্ব সরবরাহের মাধ্যমে আপনারা দেশটিকে সন্ত্রাসবাদের এক নম্বর মদদদাতার অবস্থানটি ধরে রাখতে সহায়তা করছেন। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনও এদিন ইরানের বিরুদ্ধে তার দেশের কঠিন অবস্থান তুলে ধরেন। ইরানকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, সীমা অতিক্রম করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছর মে মাসে ট্রাম্প ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে সই করা পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে যান। জয়েন্ট কম্প্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন নামের চুক্তিটি সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় সই করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে ট্রাম্প মনে করেন এই চুক্তি ‘একপেশে’, ‘বিপর্যয়কর’ এবং এত বাজে চুক্তি তিনি ‘জীবনে দেখেননি’।
×