ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছোট হয়ে গেছে বিএনপির পৃথিবী -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ছোট হয়ে গেছে বিএনপির পৃথিবী -স্বদেশ রায়

তারেকের সীমাহীন দুর্নীতি, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা এবং বিরোধী রাজনীতিক হত্যার সঙ্গে খালেদা যোগ করেন পেট্রোলবোমা দিয়ে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যা। এর পরে স্বাভাবিকই কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠীর আর দেশের আপামর জনসাধারণের কাছে কোন আবেদন থাকে না। এমনকি তাদের কোন রাজনীতিও থাকে না। রাজনীতি করার অধিকারও থাকার কথা নয়। শেখ হাসিনা যেহেতু দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নেবার জন্য অনেক বেশি সহিষ্ণুতার রাজনীতি করছেন, তাই বিএনপি এখনও রাজনীতি করার অধিকার পাচ্ছে। তবে মানুষের কাছে তাদের রাজনৈতিক পৃথিবী ছোট হয়ে যাবে এটাই সত্য। দেশের রাজনীতি নিয়ে যারা ভাবেন তারা বুঝতে পারছিলেন, ছোট হয়ে আসছে বিএনপির পৃথিবী। কিন্তু কতটা ছোট হয়ে এসেছে তার কোন প্রকৃত মাপ পাচ্ছিলেন না। এবার বিএনপি নিজেই সেটা জনগণকে জানিয়ে দিল। বিএনপি নেতারা যখন ড. কামাল ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নাম সর্বস্ব রাজনৈতিক দলের মঞ্চে গিয়ে ওঠেন, তখনই প্রমাণিত হয় বিএনপি এখন তাদের থেকেও ক্ষুদ্র দল। বিএনপিকে তাদের থেকে ক্ষুদ্র দল বললে, অনেকেই তেড়ে আসতে পারেন। বলবেন, তা কীভাবে। বিএনপির তো সারাদেশে হাজার হাজার লোক আছে। এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, নৈতিকভাবে এখন বিএনপি ড. কামাল ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দলের থেকে ছোট দল হয়ে গেছে। আর সারাদেশে তাদের লোক কারা তা বিএনপি নিজেরাই প্রকাশ করছে। যেখানেই পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করছে বিএনপি বলছে, তারা তাদের লোক। বাস্তবে তারেক রহমান ও খালেদা-নিজামীর নেতৃত্বে সারা দেশে যে সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছিল, এরাই এখন বিএনপির লোকবল। সাধারণ মানুষ বা নেতা-কর্মী যে তাদের নেই তার প্রমাণ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিন বৃষ্টির ভেতর বিএনপি প্রার্থী বুলবুলের একা একটি মোবাইল ফোন নিয়ে বসে থাকা। এটা কোন মিথ্যে ছবিও ছিল না, কারণ জামায়াত-বিএনপির প্রতি ভালবাসায় আপ্লুত প্রথম আলোতেও ছাপা হয় ছবিটি। এই অসহায় বিএনপি এখন তাদের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে ড. কামাল ও বদরুদ্দোজা চৌধুরীর কোলে গিয়েছে। বদরুদ্দোজা চৌধুরী এই বিএনপিকে কতক্ষণ কোলে রাখবেন তা নিয়ে এখনও প্রশ্ন আছে। কারণ, মহানগর নাট্যমঞ্চে যা ঘটেছে তা নাটকের প্রথম অঙ্কের প্রথম দৃশ্য। এর এখনও অনেক দৃশ্য ও পুরো চারটি অঙ্ক বাকি। যেমন ওই নাট্যমঞ্চের আরেক অভিনেতা আসম আবদুর রব কোথায় থাকবেন তা এখনও স্থির বলা যাচ্ছে না। আর ড. কামাল! ড. কামাল যার মিত্র তার আর কোন শত্রুর প্রয়োজন হয় না। এক্ষেত্রে শুধু একটাই উদাহরণ দেয়া যেতে পারে ড. কামাল যতদিন শেখ হাসিনার নীতিনির্ধারণী নেতা ছিলেন ততদিন শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে পারেননি। ড. কামালকে উচ্ছিষ্ট হিসেবে ফেলে দেবার চার বছরের মধ্যে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় যান। শুধু তাই নয়, ড. কামালকে শেখ হাসিনা ফেলে দেবার আগে অর্থাৎ ৯১-এর নির্বাচনে শেখ হাসিনা পরাজিত হবার পরের দিন ৩২ নম্বরে ঢুকতে গিয়ে আওয়ামী লীগ কর্মীদের হাতে নাজেহাল হন ড. কামাল। অর্থাৎ ততদিনে আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীরাও বুঝে গেছে গাছের তলায় বসে গাছের শেকড় কাটছে কে কে? অনেকে ভুল করে বলেন, ড. কামাল রাজনীতি করেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে। বঙ্গবন্ধু কখনও ড. কামালকে আওয়ামী লীগের নেতা বানাননি। তিনি ড. কামাল কেন মোশতাককেও তো সঙ্গে রাখতেন। জিয়াউর রহমান ষড়যন্ত্র করছিল, সে কারণে তাকে রাষ্ট্রদূত করার সিদ্ধান্ত নেবার পরেও জিয়া গিয়ে বঙ্গবন্ধুর পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার সেনাবাহিনীতে রাখেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন রাজনীতির এক মহাসাগর। সেখানে অনেক কীটপতঙ্গ থাকতেই পারে। তবে ড. কামালকে বিশ্লেষণ করতে হলে যেমন দেখতে হবে, তাকে ফেলে দেবার পরে শেখ হাসিনা রাষ্ট্র ক্ষমতায় গেছেন তেমনি আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করতে হবে, ড. কামাল আওয়ামী লীগ থেকে বের হবার পরে তার সঙ্গে নিয়েছেন, খুনের দায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোস্তফা মহসিন মন্টুকে। তবে তার থেকে বড় বিষয় হলো, ড. কামাল ও মোস্তফা মহসিন মন্টুকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করার পরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হওয়া বন্ধ হয়েছে। মহানগর নাট্যমঞ্চের এই জোটের পরে সকল প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এখন খুব সচেতন থাকতে হবে। যে কোন মুহূর্তে যে কোন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বা ছাত্র সংগঠনের মধ্যে লাশ পড়তে পারে। কারণ, ড. কামাল, মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে যোগ হয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্না- যিনি, ২০১৩তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে লাশ ফেলার জন্য সাদেক হোসেন খোকাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই ত্রি-রতেœর সঙ্গে এখন ছাত্র শিবির ও ছাত্র দলের জঙ্গী ও সন্ত্রাসীরা এক হয়েছে। এ কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। কারণ, এখন যে কোন মুহূর্তে ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’কে কাজে লাগিয়ে এই সন্ত্রাসী চক্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে লাশ ফেলার চেষ্টা করতে পারে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অর্থাৎ পুলিশ, র‌্যাবসহ সকল গোয়েন্দা বাহিনীকেও সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে। কারণ, কামাল, মন্টু ও মান্না এখন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের শিবির নেতাদের মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কোন মুহূর্তে একটি অঘটন ঘটানোর চেষ্টা করবেন। আর বিএনপি নেতারা ভালভাবে জানে, তাদেরও যেমন কোন গণআন্দোলন করার সামর্থ্য নেই, সাইনবোর্ড সর্বস্ব এই ড. কামাল গংয়েরও সে সামর্থ্য নেই। তার পরেও এরা এক হয়েছে মূলত একটি সন্ত্রাসী কর্মকা-ের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। এ কাজে তারা সুশীল নামধারী কিছু সন্ত্রাসীকেও ব্যবহার করতে পারে। কারণ, তাদের সঙ্গে সেই সব সুশীল আছে যাদের কাছে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা অর্থ পাঠায় যার প্রমাণ সরকারের কাছে আছে। আর কোন রাজনীতি না করলেও এই জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় তাদেরকে সব সময়ই সামনে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। শুধু এখানেই শেষ নয়, এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে খুনী মোশতাকের সহযোগী ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। তাই এদের উদ্দেশ্য যে দেশকে অস্থিতিশীল করা, মানুষ হত্যা করা- তা নিয়ে কারও কোন সন্দেহ থাকা উচিত নয়। বিএনপি নেতারা বলছে, অক্টোবরে অনেক অঘটন ঘটবে। অঘটন মানে একটাই তারা ২০১৩, ২০১৫তে পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করেছিল, এবারও নতুন কোন ফরম্যাটে সাধারণ মানুষ হত্যা করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এদের সঙ্গে সুদখোরও যোগ হয়েছেন। সুদখোর কে তা এ দেশের মানুষের কাছে এখন আর অচেনা নেই। বাংলাদেশের মানুষ যতদিন পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করবে ততদিনই মনে রাখবে এই দেশের একজন সুদখোর এই পদ্মা সেতু তৈরিতে বিশ্বব্যাংক যাতে টাকা না দেয় সেজন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছিলেন। এই সুদখোরের অনেক অর্থ। সে অর্থ ব্যয় হচ্ছে ড. কামালের নেতৃত্বে তৈরি এই জোটের পেছনে। জামায়াত-বিএনপির অর্থের পাশাপাশি সুদখোরও প্রচুর পরিমাণে অর্থ দিচ্ছেন দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য। সর্বোপরি তাদের প্রভু পাকিস্তানের আইএসআই তো রয়েছেই। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করার যাবতীয় অর্থ ব্যয় করছেন এই সুদখোর তার প্রমাণও রয়েছে যথাকর্তৃপক্ষের কাছে। আর তারা চায় যে কোন প্রকারে নির্বাচন ভ-ুল করতে। বেশ কয়েক মাস আগে এদের পৃষ্ঠপোষক এক সম্পাদকের বাসায় এই কুচক্রী মহলের একটি অংশ মিলিত হয়েছিলেন। তাদের আলোচনার বিষয় ছিল যে কোন প্রকারে হোক শেখ হাসিনাকে আগামী নির্বাচন করতে দেয়া যাবে না। তার আগেই দেশকে অস্থিতিশীল করে দিতে হবে। এই ধরনের সন্ত্রাসী জোটগুলো কখনই নির্বাচনের পক্ষে থাকে না। তারা সব সময়ই দেশকে একটি অস্থিতিশীলতার পথে ঠেলে দিতে চায়। তবে তারা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছে, বাংলাদেশ আর ২০০৬ সালে নেই। বাংলাদেশ এখন ২০১৮ সালে পৌঁছে গেছে। [email protected]
×