ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

গরিবের খাদ্য পাচার

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গরিবের খাদ্য পাচার

তেজগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম থেকে খাদ্যদ্রব্য পাচারের ঘটনা কি ঘটতেই থাকবে? কয়েক দিন আগে বিপুল পরিমাণ চাল, গম ও আটা পাচারকালে র‌্যাব সদস্যরা তা জব্দ করেন। ওএমএসে বিক্রির জন্য মজুদ এ চাল, গম ও আটা পাচারের সময় হাতেনাতে আটকের পাশাপাশি গুদামের ম্যানেজারকে আটকের খবর ইতিবাচক। পরে তাকে নিয়ে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে অভিযান চালিয়ে সরকারী ট্যাগ লাগানো অনেক বস্তা চাল উদ্ধার করা হয়। এটাই প্রথম নয়, এর আগেও এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই ভ্রাম্যমাণ আদালতের সবচেয়ে দীর্ঘ অভিযান। দেশের বৃহত্তম কেন্দ্রীয় খাদ্যগুদাম হিসেবে পরিচিত এই প্রতিষ্ঠানটিতে রয়েছে কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনী ও উঁচু প্রাচীরে ঘেরা। দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা এখানে থাকে সশস্ত্র প্রহরী। একটি বৈধ চালানের ট্রাক বের হতে ও প্রবেশ করতে কমপক্ষে ছয়টি পয়েন্টে তল্লাশি করা হয়। কোন ধরনের খাদ্যশস্য কোথায় কি পরিমাণ খালাস করা হয়, তার জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া। এমন নিরাপদত্তাবেষ্টিত প্রায় নিñিদ্র পরিবেশ ভেদ করে কিভাবে বিপুল পরিমাণ চাল আটা ও গম খোলাবাজারের পরিবর্তে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে পাচার করা হয়, তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি গুদাম কর্তৃপক্ষ। বলতেই হবে সর্ষের ভেতরেই রয়েছে ভূত। তাই ভূতের বংশ নির্মূলই এখন প্রধান করণীয়। সরকারী গুদাম থেকে কেবল এক-দু’জন কর্মচারীর পক্ষে চাল চুরির মতো বড় অপরাধ করা সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে খালাসি, ওজনকারী, পরিদর্শক থেকে ম্যানেজারÑ সবারই কম-বেশি যোগসাজশ থাকে। এ কারণে খাদ্য গুদামে নিয়মিত নজরদারির উদ্যোগ নেয়া দরকার। উল্লেখ্য, প্রতি ঈদেই বিত্তহীনদের জন্য সংগ্রহকৃত সরকারী চাল নয়ছয় হচ্ছে। বলাবাহুল্য, ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের চাল বিতরণ কর্মসূচী গণতান্ত্রিক সরকারের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এতে খাদ্য নিরাপত্তা বজায় থাকে। অথচ প্রতি বছরই দেখা যায় কিছু লোভী জনপ্রতিনিধি গরিবের এই হক মেরে দেয়। এবারও ঈদে ভিজিএফের চাল বিতরণ কর্মসূচী ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর পাওয়া গিয়েছিল। বিভিন্ন স্থানে চাল আত্মসাত করে কালোবাজারে বিক্রি, পাচারের চেষ্টা, গরিবদের না দিয়ে অন্যদের মধ্যে বিতরণের অভিযোগ রয়েছে। চালের টোকেনপ্রাপ্তরা নিজেরাই কালোবাজারিদের কাছে টোকেন বিক্রি করে দিয়েছে এমন খবরও মিলেছে। অনেক স্থানে ভিজিএফের চাল আটক করা হয়েছে। এসব নেতিবাচক সংবাদ দেশের মানুষ আর কত শুনবে? স্মরণযোগ্য, রোজার ঈদের আগেও ভিজিএফের চাল নিয়ে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছিল দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। জনকণ্ঠের প্রতিবেদনে তার বিশদ চিত্রও উঠে এসেছিল। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভিজিএফের চাল আটক, ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর অবরুদ্ধ এবং অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে সে সময়। ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগে কোথাও বিক্ষুব্ধ জনতা ইউপি চেয়ারম্যানকে অবরুদ্ধ করে রাখে, কোথাও বা চাল বিতরণের সময় সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর ও বস্তা বস্তা চাল লুট হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারী খাদ্যগুদাম এবং জনপ্রতিনিধির হেফাজতে থাকা খাদ্যশস্য চুরি ও পাচারের লজ্জাজনক কা-কারখানা বন্ধ করতে কঠোর অবস্থানে যেতে হবে। গরিবের হক মারার এই সর্বনাশা সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী। খাদ্যগুদামের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং জনপ্রতিনিধির কাজ হচ্ছে জনতাকে সেবা প্রদান, তাদের হক আত্মসাত করা নয়। তাই এমন অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ঘৃণাই প্রাপ্য। কোন করুণা নয়, শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
×