ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ

হাওড়কন্যা সুনামগঞ্জ পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওড়কন্যা সুনামগঞ্জ পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত

এমরানুল হক চৌধুরী, সুনামগঞ্জ ॥ বিশ^ পর্যটন দিবস আজ। পর্যটনের সঙ্গে মানুষের সেতুবন্ধ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে দেশে উদযাপন করা হয় দিনটি। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তত্ত্বাবধানে ’৮০ সাল থেকে সদস্য সব দেশ ২৭ সেপ্টেম্বর তাই বিশ্ব পর্যটন দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। শরতের এই মৌসুমে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত সুনামগঞ্জের সব পর্যটন স্পট। সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে আসা ‘ক্রিস্টাল ক্লিয়ার ওয়াটার’ খ্যাত জাদুকাটা নদী। মিশেছে বিশ্ব ঐতিহ্য টাংগুয়ার হাওড়ে। ঠিক উপরে রয়েছে শত শত ঝর্ণাধারার বাঙালভিটা, সুবিশাল বারেকের টিলা, দেশের সর্ববৃহৎ শিমুল বাগানসহ টেকেরঘাট খনিজ প্রকল্প ও সাব-সেক্টর, বালাট (ডলুরা) সাব- সেক্টর, বাঁশতলা সাব-সেক্টর, মহেশখলা সাব-সেক্টরসহ অসংখ্য মুক্তিযুদ্ধের নিদর্শন। এগুলোর সৌন্দর্য উপভোগ করতে দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকরা সুনামগঞ্জ ছুটে আসছেন। এই শরতে ভ্রমণ পিপাসুদের চিত্তবিনোদনে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে সেজেছে হাওড়কন্য সুনামগঞ্জ। শত শত হাওড় থৈ থৈ পানিতে পূর্ণযৌবনা। ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। যেন এক ছোট্ট সাগর। চারদিকে শুধু পানি আর পানি, যেন হাওড়ের পানিতে ভেসে রয়েছে গ্রামগুলো। বাংলার প্রথম রাজধানী লাউরেরগড়ের তীরে ও মেঘালয়ের পাদদেশে অবস্থিত সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী জাদুকাটা। যাকে প্রকৃতিপ্রেমীরা বলে থাকেন রূপবতী মেঘকন্যা। তাহিরপুর উপজেলার উত্তর-পূর্ব সীমান্তজুড়ে মেঘালয় পাহাড়ের শত শত ঝর্ণাধারার পাহাড়ী গ্রাম বাঙালভিটা। অন্য পাশে বিস্তৃত বিশ্ব ঐতিহ্য (রামসার সাইড) টাংগুয়ার হাওড়। জাদুকাটা নদীর সীমান্ত ঘেঁষা মেঘালয় আর বারেকের টিলার সুদৃশ্য উপত্যকা শহীদ সিরাজ লেক বা নীলাদ্রি। বিশাল সবুজের মাঝে নীল স্বচ্ছ জলের সমাহার। কেউ যেন মনের সুখে সাঁতার কাটছে, আবার কেউ ছোট ছোট ডিঙ্গিতে হাওড়ে ভাসছে। ঠিক তার উল্টো দিকে টেকেরঘাটের শত শত ছোট ছোট মনোমুগ্ধকর টিলা। এখানেই রয়েছে দেশের একমাত্র চুনাপাথর খনিজ প্রকল্প ও শুল্ক স্টেশন। আছে একাত্তরের পাকিদের পরাজয়ের অন্যতম নিদর্শন টেকেরঘাট সাব-সেক্টরসহ ইতিহাসের অনেক প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন। রয়েছে লাউড় রাজার প্রাচীন স্থাপত্যশৈলী-অনেক ঐতিহ্যবাহী শত শত বছরের পুরনো জমিদার বাড়ি। এছাড়াও রয়েছে শত শত বাউল সাধক, গীতিকার, সুরকার, চারণকবি হাছন রাজা, রাধারমন, দুরবীন শাহ, শাহ আব্দুল করিমের স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও আধ্যত্মিক স্থাপনা। এদিকে সড়ক যোগাযোগ, ট্যুরিস্ট পুলিশিং ব্যবস্থা, হোটেল- মোটেল আবাসিক অবকাঠামোসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকার কথা জানিয়েছেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকরা। সুনামগঞ্জের এডিশনাল পুুলিশ সুপার (মিডিয়া উইং), মাহবুবুর রহমান বলেন, আলাদা ট্যুরিস্ট পুলিশ না থাকলেও পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে থানা ও স্থানীয় পুলিশ সর্বক্ষণিক তৎপর থাকে। সব পর্যটন স্পটে দায়িত্বশীল পুলিশ অফিসারের নাম্বার দেয়া হয়েছে কোন ট্যুরিস্ট যখনই প্রয়োজন মনে করবেন তখনই সহযোগিতা চাইতে পারবেন। সুনামগঞ্জ দেশের পর্যটন সম্ভাবনার একটি অন্যতম খাত উল্লেখ করে সরকারের স্থানীয় এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, সরকার পর্যটন সম্ভাবনাময় হাওড়কন্যার উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিছু প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। তারপরও অবকাঠামো হোটেল-মোটেল আবাসিক সুযোগ-সুবিধাসহ অন্যান্য খাতে বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা হচ্ছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী উদ্যোগ আবশ্যক বলে তিনি মনে করেন। এসব পর্যটন কেন্দ্র দেশ-বিদেশে আরও জনপ্রিয় করতে ও বেসরকারী বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে কাজ করবে সরকার, এমনটাই প্রত্যাশা প্রকৃতিপ্রেমীদের।
×