ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

জলবায়ুর প্রভাবে দেশের ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

জলবায়ুর প্রভাবে দেশের ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও অনিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তিন চতুর্থাংশ মানুষের জীবনযাত্রার মানে অবনমন ঘটবে বলে জানিয়েছে বিশ্ব ব্যাংক। সংস্থাটি বলছে, দ্রুত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা বাড়ছে ও অতিবর্ষণ হচ্ছে। এ কারণে বাংলাদেশের ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। যা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪ ভাগের ৩ ভাগ, আর এই সংখ্যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। বুধবার দক্ষিণ এশিয়ার জীবনমানে তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের পরিবর্তনের প্রভাব শীর্ষক বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এই প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার ও শীর্ষ আঞ্চলিক অর্থনীতিবিদ মুথুকুমারা মানি উপস্থিত ছিলেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৬০ বছরে এই অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে এবং এ ধারা অব্যাহত থাকবে। এর ফলে কৃষি, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য খাতে প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশে প্রতি বছর এক থেকে দেড় শতাংশ হারে তাপমাত্রা বাড়ছে। প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনের ঝুঁকি মোকাবেলার বিষয়গুলো যদি না দেখা হয় তাহলে ২০৫০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা ২ দশমিক ৫০ শতাংশ হারে বাড়তে পারে। এর ফলে ১৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের জীবনমানের অবনমনের পাশাপাশি বাংলাদেশ জিডিপির ৬ দশমিক ৭ শতাংশ হারাবে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাসে দেয়া হযেছে। এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হবে চট্টগ্রাম ও বরিশাল। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় কিছু এলাকা ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর প্রভাবে অভিবাসনের চাপ পড়বে অন্যান্য এলাকায়। বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগকে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তালিকায় এর পরেই রয়েছে বরিশাল ও ঢাকা। এছাড়া রাজশাহী ও ময়মনসিংহ মাঝারি ঝুঁকিতে এবং সিলেট, রংপুর বিভাগ মৃদু ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। এতে বলা হয়েছে, দেশের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে ১৬ দশমিক ২০ শতাংশ এলাকা। মাঝারি ধরনের ঝুঁকিতে আছে ৬৬ দশমিক ২০ ভাগ অঞ্চল। এর বাইরে আরও সাড়ে ১২ শতাংশ এলাকায় মৃদু ঝুঁকি রয়েছে। দেশের মাত্র ৫ দশমিক ১০ শতাংশ এলাকা ঝুঁকির বাইরে আছে। জলবায়ু পরিবর্তনে সম্ভাব্য ক্ষতির প্রভাব মোকাবেলায় কৃষি খাতের বাইরে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির তাগিদ দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে কৃষি খাতের বাইরে ১৫ শতাংশ বাড়তি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে জলবায়ু পরিবর্তনে জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে আসবে। কৃষি খাতের বাইরে ৩০ শতাংশ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে জীবনযাত্রার মান না কমে উল্টো বাড়বে। বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফার বলেন, আমরা কক্সবাজার সফর করে এসেছি। সেখানে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গার জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা থাকবে, যতদিন এটা সমাধান না হয়। অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু মোকাবেলায় আমরা অন্যদের তুলনায় অনেক ভাল অবস্থানে রয়েছি। আমরা ভাল করছি। তবে জলবায়ু মোকাবেলায় কম সুদে আরও ঋণ দরকার। বর্তমান সরকার অনেক ভাল কাজ করছে। এক্ষেত্রে সরকার কিছু ঋণের ব্যবস্থাও করেছে। তিনি বলেন, আমরা প্রত্যাশা করছি শেখ হাসিনা সরকার আরও একবার ক্ষমতায় আসবে। তাতে আমাদের ২০৪১ সালে উন্নত রাষ্ট্র হওয়ার যে ভিশন আছে তা পূরণ হতে সহজ হবে। বিশ্ব ব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়ার অঞ্চলিক ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শেফারের সঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে মুহিত বলেন, শেফারের সঙ্গে একটা ভাল আলোচনা হয়েছে। যার মধ্যে ছিল উন্নয়ন ও অর্থের বিষয়। সরকার পরিবর্তন হলেও সংস্থাটি আমাদের পাশে থাকবে। তবে শেফারের সঙ্গে নির্বাচন নিয়ে কোন আলোচনা হয়নি। সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বৈঠকে আলোচনা করার কিছুই ছিল না। সরকার পরিবর্তন হলেও বিদেশী এজেন্সিগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক পরিবর্তন হয় না। আমরা আশা করি, নির্বাচনে জয়ী হব। আমরা আগামীতে আবার ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চাই। নির্বাচনের পর কী করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়েল আই উইল নট বি ডেড। ইলেকশনে তো কাজ করবই। প্রার্থী হচ্ছি না। আমার আসনে অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে, তা তো হবেই।
×