ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাত হাজারি ক্লাবে রোহিত শর্মা

প্রকাশিত: ০৬:৩২, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সাত হাজারি ক্লাবে রোহিত শর্মা

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সুপার ফোরের ম্যাচে তার ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি এসেছে। আর সেই সঙ্গেই তিনি ঢুকে পড়েছেন ৭ হাজারের দলে। রবিবার দুবাইয়ে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট হাতে নেমেছিলেন ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা তখন তিনি ৭ হাজারের থেকে মাত্র ৯৪ রানে পিছিয়ে ছিলেন। সেই লক্ষ্যে তো পৌঁছলেনই সঙ্গে তুলে নিয়েছেন ওয়ানডেতে নিজের ১৯তম সেঞ্চুরিটিও। ভারতীয়দের মধ্যে তিনি নবম সাত-হাজারি। এর আগে এই তালিকায় রয়েছেন, গ্রেট শচীন তেন্ডুলকর, সৌরভ গাঙ্গুলী, রাহুল দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিং ধোনি, বিরাট কোহলি, মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, যুবরাজ সিং এবং বীরেন্দ্র শেহবাগ। এই এশিয়া কাপের শুরু থেকেই দারুণ ছন্দে রয়েছেন ভারত অধিনায়ক। ভারতীয়দের মধ্যে দ্রুততম ৭ হাজারের তালিকায় তৃতীয় স্থানে তিনি। এক্ষেত্রে রোহিতের আগে এবং তাঁরও আগে রয়েছেন বিরাট কোহলি (১৬১) এবং সৌরভ গাঙ্গুলী (১৭৪)। রোহিত শর্মা খেলেন ১৮১-র ইনিংস। ১৫০ ইনিংসে ৭ হাজার রান করে বিশ্ব ক্রিকেটে শীর্ষে রয়েছেন হাশিম আমলা। বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দেয়ায় তার হাতেই তুলে দেয়া হয়েছিল ভারতীয় দলের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব সামলানোর সঙ্গে সঙ্গেই নিজেকেও টানা প্রমাণ করে চলেছেন রোহিত। এই নিয়ে তিন ম্যাচেই ৫০-এর ওপর রান করলেন তিনি। ৫২, অপরাজিত ৮৩ ও অপরাজিত ১১১। রবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওপেন করতে নেমে রোহিত ১১৯ বলে ১১১ রান করতে গিয়ে হাঁকালেন সাতটি বাউন্ডারি ও চারটি ওভার বাউন্ডারি। একই সঙ্গে সেঞ্চুরি করলেন আরেক ওপেনার শিখর ধাওয়ানও। এই নিয়ে তৃতীয়বার কোন দুই ভারতীয় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একসঙ্গে সেঞ্চুরি হাঁকালেন। এর আগে ১৯৯৬ সালে শারজায় শচীন টেন্ডুলকর (১১৮) ও নভজোৎ সিধু (১০১)-এর জুটি সেঞ্চুরি করেছিল এবং ২০০৫-এ কোচিতে বীরেন্দ্র শেহবাগ (১০৮) ও রাহুল দ্রাবিড় (১০৪) জুটি জোড়া সেঞ্চুরি তুলে এনেছিল। তৃতীয় রোহিত শর্মা (১১১) ও শিখর ধাওয়ান (১১৪) জুটি। এশিয়া কাপে ভারতের সঙ্গে দ্বিতীয়বারের দেখাতেও স্রেফ উড়ে গেছে পাকিস্তান। গ্রুপপর্বে ভারত জিতেছিল ৮ উইকেটে। আর গতকাল সুপার ফোরের ম্যাচ জিতেছে ৯ উইকেটে। এর পুরো কৃতিত্ব শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার। দু’জনের ২১০ রানের উদ্বোধনী জুটি ৬৩ বল বাকি থাকতেই ভারতকে পৌঁছে দেয় জয়ের বন্দরে। ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে এটিই ভারতের সর্বোচ্চ। ধাওয়ান ও রোহিত ভেঙেছেন সৌরভ গাঙ্গুলী ও শচীন টেন্ডুলকরের ২০ বছরের পুরনো রেকর্ড। ১৯৯৮ সালে জুবিলি কাপে ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ১৫৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েছিলেন দুই ভারতীয় গ্রেট গাঙ্গুলী ও টেন্ডুলকর। রোহিত-ধাওয়ান জুটির এদিনের ২১০ রান যে কোনো উইকেটেই পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এই দুজনের ওপরে আছেন শুধু ১৯৯৬ সালে শারজাতে টেন্ডুলকার ও নভজোৎ সিং সিধুর ২৩১ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। এশিয়া কাপেও ভারতের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি এখন ধাওয়ান-রোহিতের। ১৯৯৫ সালের আসরে শারজায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মনোজ প্রভাকর ও টেন্ডুলকর জুটির ১৬১ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ। এ ছাড়া রান তাড়ায় ভারতের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডটাও নতুন করে লিখলেন ধাওয়ান ও রোহিত। দুজন ছাড়িয়ে গেছেন ২০০৯ সালে হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বীরেন্দর শেবাগ ও গৌতম গম্ভীরের অবিচ্ছিন্ন ২০১ রানের জুটিকে। দুবাইয়ে গতকাল ধাওয়ান করেছেন ১১৪ রান। অধিনায়ক রোহিত অপরাজিত ছিলেন ১১১ রানে। একই ওয়ানডেতে ভারতের দুই ওপেনারের সেঞ্চুরি পাওয়ার সপ্তম ঘটনা এটি। এর মধ্যে রান তাড়ায় এমন নজির আছে আর মাত্র একটিই, ২০০২ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন দুই ওপেনার গাঙ্গুলী ও শেবাগ। ধাওয়ান-রোহিতের শতরানের জুটি হলো এই নিয়ে ১৩টি। ভারতের হয়ে তাদের চেয়ে বেশি শতরানের জুটি আছে শুধু টেন্ডুলকর ও গাঙ্গুলীর (২১টি)। সেঞ্চুরির পথে পঞ্চম দ্রুততম ৭ হাজার রানের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন রোহিত। অন্যদিকে পাকিস্তান গড়েছে বিব্রত রেকর্ড। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে আগে কখনই ৯ কিংবা এর বেশি উইকেটে হার ছিল না পাকিস্তানের। গতকাল প্রথম সেই তিক্ত স্বাদ পেল চ্যাম্পিয়নস ট্রফির চ্যাম্পিয়নরা। সুপার ফোরে ম্যাচের আগেই প্রশ্ন রাখা হয়েছিল, অবশেষে কি বহু আকাক্সিক্সক্ষত ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের দেখা মিলবে? নাকি আবারও ম্যাচে কর্পূরের মতো উড়ে যাবে এসব চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী কথাবার্তা? এশিয়া কাপে দ্বিতীয় ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর এসব প্রশ্নের উত্তরে বলে ফেলাই যায়, মহারণ-টহারণ এসব আর ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে ব্যবহার না করাই ভাল। পাকিস্তানকে নিয়ে যে রীতিমতো খেলল ভারত। ২৩৮ রানের মতো ভদ্রস্থ লক্ষ্যকেও মামুলি বানিয়ে দিয়েছে। ৬৩ বল হাতে রেখে পেয়েছে ৯ উইকেটের অনায়াস জয়। উদ্বোধনী জুটির কথা ভাবলেই ভারতীয় সমর্থকরা এখনো শচীন টেন্ডুলকর ও সৌরভ গাঙ্গুলীর কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে ২০ বছর আগে ১৫৯ রান তুলেছিলেন এ দুজন। সে রেকর্ড এত দিন অধরা ছিল সবার। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গড়া সে রেকর্ড আজ দুমড়ে মুচড়ে গেল দুবাইয়ে। পাকিস্তানের বোলারদের গলির মানে নামিয়ে এনে দু’জনে তুলে নিলেন ২১০ রান। উদ্বোধনী জুটিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দ্বিশতক জুটি গড়ার খানিক পরেই আউট হয়ে গেছেন শিখর ধাওয়ান। ইনিংসের বয়স তখন মাত্র ৩৩.৩ ওভার! কোন বোলার পারেননি ১০০ বলে ১১৪ রান করা ধাওয়ানকে আউট করতে। শোয়েব মালিকের সুবাদে রান আউট হয়েছেন ফর্মে থাকা ধাওয়ান। পাকিস্তান তবু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারে। যাক, একজন তবু আউট হয়েছে। না হলে যে ১০ উইকেটে ম্যাচ হারার লজ্জা পেতে হতো। তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করে ১০ উইকেটে ম্যাচ হারার একটি রেকর্ডও হয়ে যেত। ৩৪তম ওভারের তৃতীয় বলে রানআউট হয়ে ধাওয়ান সে যন্ত্রণা থেকে বাঁচিয়েছেন পাকিস্তানকে। সঙ্গীকে হারানোর পর আর দেরি করেননি রোহিত শর্মা (১১১*)। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ফিফটি করা ভারত অধিনায়ক আজ সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ১০৬ বলে। ধাওয়ান অবশ্য সে কাজটা করেছেন ৯৫ বলেই। এশিয়া কাপে প্রথম দেখায় ২১ ওভার হাতে রেখে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল ভারত। আজ সেদিনের চেয়ে ৭৫ রান বেশি করেও বলের ব্যবধান অর্ধেক কমিয়ে এনেছে পাকিস্তান। অথচ এবারের এশিয়া কাপে প্রায় বি দল নিয়ে এসেছে ভারত। তবু পাত্তাই পাচ্ছে না পাকিস্তান। সত্যটা তাই আর লুকানো যাচ্ছে না, ভারতের কাছে এখন পাত্তাই পাচ্ছে না পাকিস্তান। সামনে কি হয়, সেটিই দেখার অপেক্ষা।
×