ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল

বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে বিনিয়োগ ধারণা জনপ্রিয়তা পাওয়ায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরের বছরই ২০১০ সালে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করার ঘোষণা দেয়। সরকারের এই ঘোষণা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে প্রতিষ্ঠা করা হয় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ বা বেজা। মূলত এরপর থেকে ইজেড নিয়ে দেশের সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বাড়ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ। এখন পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ৮০ হাজার একরেরও বেশি জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। এ পর্যন্ত অনুমোদন পেয়েছে ৭৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার মধ্যে বেসরকারী খাতের অর্থনৈতিক অঞ্চল রয়েছে ২০টি। গত তিন বছরে বিভিন্ন সময়ে প্রাকযোগ্যতা নিবন্ধন পাওয়া অঞ্চলগুলোর প্রাথমিক কাজ সম্পন্ন করতে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত হয়েছে। এতে কর্মসংস্থান হয়েছে ৭ হাজার ৯৯৫ জনের। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় চীন, ভারত, জাপানসহ উন্নত দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে। বাংলাদেশে পাঁচটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য ভারত মোট ২৭৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের এমন ব্যাপক আগ্রহ দেশের অর্থনীতিতে অমিত সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে বলে বলে আশা করা যায়। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৫ বছরের মধ্যে ১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতিবছর অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রফতানি আয় এবং ২০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রত্যাশা নিয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্যে দেশপ্রেমকে ধারণ করে দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতার সঙ্গে কর্তব্য পালনের অঙ্গীকার প্রত্যাশিত। রাষ্ট্রের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি শিল্প খাত। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২১ সালের আগেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে হলে বেশি সংখ্যক অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার দেশে অধিকতর উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেছেন। এটা ঠিক যে, দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্থানীয় সম্পদের পর্যাপ্ততার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠা ইতিবাচক ফল দেবে। কৃষিজাত পণ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প স্থাপনও নিঃসন্দেহে দূরদর্শী কাজ হবে। নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা মানেই নতুন বিনিয়োগ। পুরনো ধ্যানধারণা নিয়ে স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা যে কঠিন, তা বলাই বাহুল্য। প্রয়োজন পড়বে নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করার। নতুন বিনিয়োগে ব্যাপক শিল্পায়ন হলে দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও বিরাট সম্ভাবনার দরোজা খুলে যাবে। সব মিলিয়ে দেশে ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটবে। বর্তমান সরকার শিল্পবান্ধব। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার সংবাদ পরিবেশিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক বিষয়ে সমীক্ষা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ বাংলাদেশের অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাওয়ার তথ্য দিয়ে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য সব কিছুর আগে প্রয়োজন জমি। শিল্পায়নের জন্য জমি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোপূর্বে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি শিল্পায়নের জন্য অবিবেচনাপ্রসূতভাবে কৃষিজমি নির্বাচন করা হয়েছে। কৃষি জমিতে কোনভাবেই যাতে কোন শিল্প ও আবাসন গড়ে উঠতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। শিল্পায়নের জন্য ভূমি ব্যবহারে এমন নীতির অনুসরণ জরুরী, যাতে অল্প জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। এজন্য প্রয়োজনে বহুতলবিশিষ্ট শিল্পভবন ও কারখানা নির্মাণ করতে হবে।
×