ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পয়লা অক্টোবর থেকে আন্দোলনের জন্য রেডি হয়ে যান ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পয়লা অক্টোবর থেকে আন্দোলনের জন্য রেডি হয়ে যান ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বর্তমান সরকারকে অপসারণ করতে হলে সারা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেছেন ১ অক্টোবর থেকে আন্দোলনের জন্য সবাই রেডি হয়ে যান। মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ‘জাতীয়তাবাদী প্রজন্ম-৭১’ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এদিকে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, রাজধানীতে দলের সমাবেশ কর্মসূচী বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শনিবার অনুষ্ঠিত হবে। মওদুদ বলেন, জাতীয় ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। কারণ এই সরকারকে অপসারণ করতে হলে সারাজাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, মাঠে নামতে হবে। জনগণের জোয়ার এই সরকারকে দেখাতে হবে। আমরা এবার খালি মাঠে গোল দিতে দেব না। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ায় সরকারের গাত্রদাহ হচ্ছে। তাই সরকারের কেউ এটা সহ্য করতে পারছে না। মওদুদ বলেন, প্রথমে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াকে সরকারী দল স্বাগত জানাল। কিন্তু পরে আবার বলল এই ঐক্য প্রক্রিয়ায় যারা আছে তারা সবাই দুর্নীতিবাজ, সুদখোর। যাদের নিয়ে ঐক্য করেছে এরা জনগণের জন্য কিছু করতে পারবেন না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে থেকে এ ধরনের অশালীন বক্তব্য কখনই কাম্য নয়। তিনি এই ধরনের বক্তব্য আগেও দিয়েছেন, এখনও দিচ্ছেন। এ থেকে একটা জিনিস প্রমাণ হয়, এই সরকার আতঙ্কিত হয়েছে, এই সরকার বিচলিত হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব বক্তব্য প্রত্যাহার করতে, না হলে রাজনীতিতে শালীনতা বলে কিছু থাকবে না। দেশের মানুষ কি এত বোকা? এ ধরনের বক্তব্যের পর জাতীয় ঐক্যের জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পাবে। মওদুদ বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে’ তার প্রমাণ বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ভৌতিক মামলা। কোন ঘটনাই ঘটেনি অথচ মামলা দেয়া হচ্ছে। থানার এসআইরা সুন্দর করে মামলা করে রাখে। মৃত ব্যক্তির নামেও মামলা, হজ করতে গেছেন এমন মানুষের নামেও মামলা। কোন মামলায়ই ঘটনা ঘটার দরকার নেই। বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে ৪ হাজার মামলা দেয়া হয়েছে ২১ দিনে। এ সব মামলায় ৩ লাখ ৩১ হাজার আসামি করা হয়েছে। আর কত নিচে নামবে আওয়ামী লীগ। মওদুদ বলেন, জনগণকে নিয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেব এবং শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের মাধ্যমে এ সরকারকে অপসারণ করব, কোন সহিংসতার মাধ্যমে নয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মিথ্যাচারে চ্যাম্পিয়ন। আমরা কেউ তাদের সঙ্গে মিথ্যাচারে পারব না। মওদুদ বলেন, সরকারের আচার-আচরণ, চিন্তা-চেতনা ও ধ্যান-ধারণা দেখলেই বোঝা যায় সব। এ সরকারের আর মাত্র তিন মাস বাকি। তাই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নামে যেসব মামলা আছে সকল মামলা প্রত্যাহার করে নেয়া উচিত। একটা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা উচিত, যে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ তাদের ভোট দিয়ে পছন্দের সরকার নির্বাচিত করতে পারে। সেখানে তারা হাজার হাজার মামলা দিচ্ছে। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ঢালী আমিনুল ইসলাম রিপনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য রফিক সিকদার, জাসাস নেতা শাহরিয়া ইসলাম শায়লা প্রমুখ। রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশ শনিবার- রিজভী ॥ রাজধানীতে বিএনপির পূর্বঘোষিত সমাবেশ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে শনিবার বেলা ২টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মঙ্গলবার দুপুরে নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। অসুস্থ বন্দী সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার অনুপস্থিতে বিচারিক কার্যক্রম বেআইনী দাবি করে রিজভী বলেন, আমি দলের পক্ষ থেকে আবারও দৃঢ়কন্ঠে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসাসহ এই মুহূর্তে তাকে মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে দেশের জনগণ বৃহত্তর আন্দোলনে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্যপ্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, তার মুখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার হাস্যকর। প্রধানমন্ত্রীর কাছে জাতি জানতে চায়-বিগত দশ বছরে ব্যাংক, বীমা লুটের টাকা গেল কোথায়? শেয়ার বাজার লুটের টাকা গেল কোথায়? ব্যাংকে আমানতকৃত টাকা চেক দিয়ে মানুষ না পেয়ে ফেরত আসে কেন? বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি করেছে কে? এখনও কেন রিজার্ভ চুরির তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি? আর্থিক খাত ধ্বংস করল কে? ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সাংবাদিকদের সুরক্ষা দেবে- প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা হারানোর ভয়ে কা-জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন। তিনি তার সামনে-পেছনে, ডানে-বাঁয়ে যারা তাকে ঘিরে আছে তাদের দিকে তাকান না, শুধু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কুৎসা রটাতেই ব্যস্ত থাকছেন। ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে একনায়কতন্ত্র কায়েম করার জন্যই তিনি বেহুঁশ। গণতন্ত্র ও নির্বাচন প্রক্রিয়া সন্ত্রাসের বেড়াজাল দিয়ে ঘিরে রাখায় স্বৈরাচার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বজোড়া নামডাক হয়েছে। তার মুখে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার হাস্যকর। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাব হোসেন চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী প্রমুখ।
×