ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ভারতের কাছে বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এবার ভারতের কাছে বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব বাংলাদেশের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ক্রস বর্ডার ইলেক্ট্রিসিটি ট্রেড বা আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে এতদিন বাংলাদেশ বিদ্যুত আমদানি করলেও এবার ভারতের কাছে বিদ্যুত বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে ভারতের ভূখণ্ডে দুদেশের যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করতে চায় বাংলাদেশ। ভারতের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে বিদ্যুত নেয়া এবং যৌথ উদ্যোগে বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে দুদেশের গঠিত টেকনিক্যাল কমিটি পরীক্ষা করে দেখবে। মঙ্গলবার বাংলাদেশ-ভারত যৌথ স্টিয়ারিং কমিটির পঞ্চদশ সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে এসব প্রস্তাব দেয়া হয়। সিলেটের একটি হোটেলে আয়োজিত এই সভায় বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বিদ্যুত সচিব ড. আহমদ কায়কাউস এবং ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন ভারতের বিদ্যুত সচিব শ্রী অজয় কুমার ভাল্লা। বৈঠক সূত্র জানায়, বিদ্যুত আমদানির ক্ষেত্রে সব ধরনের সিডি, ট্যাক্স ভ্যাট থেকে অব্যাহতি প্রদান, রাজনৈতিক কারণে বা ভারতীয় আইন পরিবর্তনজনিত আর্থিক সমস্যা উদ্ভব হলে তা থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়ে দুদেশ নীতিগতভাবে একমত প্রকাশ করেছে। তবে এসব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য কেন্দ্রের অনুমতি চাইবে ভারতের প্রতিনিধিদল। প্রথমবার যখন বাংলাদেশ ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি করেছিল তখন বাংলাদেশকে কোন কর দিতে হয়নি। পরে বাংলাদেশ বিদ্যুত আমদানি বৃদ্ধি করলে ভারত করারোপ করে। তখন থেকেই বাংলাদেশ এর বিরোধিতা করে আসছিল। বৈঠকে কর প্রত্যাহারের বিষয়টি উত্থাপন করা হলে দুদেশের প্রতিনিধিরা আলোচনা করে কর অব্যাহতির বিষয়ে একমত হন। ওয়ার্কিং গ্রুপ এবং স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন জনকণ্ঠকে বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে চায়। দুদেশের মধ্যে তাই বিদ্যুত আমদানি-রফতানির বিষয়ে তারা একমত। এখন টেকনিক্যাল কমিটি খতিয়ে দেখবে। তিনি বলেন, গরমের সময় বাংলাদেশের বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেশি থাকলেও শীতকালে অর্ধেকের বেশি বিদ্যুত কেন্দ্র বসে থাকে। বিশেষ করে সরকারীগুলো। কারণ বেসরকারীগুলো বসিয়ে রাখলে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। এ সময় ভারতে বিদ্যুত রফতানি করতে পারে বাংলাদেশ। কর অব্যাহতির বিষয়ে মোহাম্মদ হোসাইন জানান, কর অব্যাহতির ক্ষেত্রে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগবে। আর ভারতে সাধারণত আমদানির ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেয় না। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি তারা বিবেচনা করবে বলে সভায় তারা আশ্বাস দিয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, ভারতীয় কঠোর নীতি আন্তঃসীমান্ত বিদ্যুত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব থেকে বড় বাধা ছিল। দক্ষিণ এশিয়াতে বিদ্যুত বাণিজ্য সম্প্রসারণ হওয়ার পথ উন্মুক্ত হলে ভারত ২০১৪ সালের শেষের দিকে এ সংক্রান্ত একটি নীতি প্রণয়ন করে। ওই নীতিতে বলা হয়, প্রতিবেশী দেশগুলো ভারতের ভূখ- ব্যবহার করে বিদ্যুত নিতে গেলে বিদ্যুতকেন্দ্রে ভারতের সরকারী বা বেসরকারী কোন কোম্পানির অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। একইসঙ্গে ভারতের কোন ট্রেডিং কোম্পানির মাধ্যমে সেই বিদ্যুত ক্রয় বিক্রয় করতে হবে। এ নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ভারতকে নীতি পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়ে আসছিল। ভারতের নীতির কারণে নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে জলবিদ্যুত কেন্দ্র দ্বিপাক্ষিকভাবে নির্মাণ করতে পারছে না বাংলাদেশ। মঙ্গলবারের বৈঠকে বিষয়টি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হলে ভারতের প্রতিনিধিরা জানায়, এ সংক্রান্ত আগের নীতিটি পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন নীতিতে দ্বিপক্ষীয় নীতি পরিবর্তন করে ত্রিপক্ষীয় বা বহুপাক্ষিক নীতি করছে তারা। এ সংক্রান্ত নীতির খসড়া করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করেই নীতিটি চূড়ান্ত করা হবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে। খসড়াটি বাংলাদেশের কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় সভায়। এছাড়া সভায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যুত খাতে বিরাজমান বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়। সভায় ভেড়ামারা ও ত্রিপুরা ইন্টারকানেকশনের মাধ্যমে বিদ্যুত আমদানির বর্তমান অবস্থা, ভেড়ামারা ইন্টারকানেকশনের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তির আওতায় ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির অগ্রগতি, এইচভিডিসি দ্বিতীয় ব্লক নির্মাণের মাধ্যমে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি, সূর্যমনি-কুমিল্লা নর্থ লিংকের মাধ্যমে জি টু জি-এর আওতায় এনটিপিসির বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে আরও ৩৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি, প্রস্তাবিত কাটিহার-পার্বতীপুর-বড়পুকুরিয়া-বরানগর ৭৬৫ কেভি গ্রিড ইন্টারকানেকশন, বহরমপুর-ভেড়ামারা ৪০০ কেভি দ্বিতীয় ট্রান্সমিশন লাইন ও সূর্যমনি-কুমিল্লা নর্থ লিংকের মাধ্যমে আরও বিদ্যুত আমদানির জন্য কুমিল্লায় ব্যাক টু ব্যাক এইচভিডিসি সাব-স্টেশন নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়। পিডিবির পরিচালক (জনসংযোগ) সাইফুল হাসান চৌধুরী বলেন, স্টিয়ারিং কমিটির সভায় অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে ভারতীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশের বিদ্যুত খাতে অংশগ্রহণ, বাংলাদেশ-ভারত যৌথ উদ্যোগে ভারতে বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ও বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের ভারতের বিদ্যুত উৎপাদন খাতে অংশগ্রহণের বিষয় পর্যালোচনা ছাড়াও জিএমআর কর্তৃক নেপালে উৎপাদিত জলবিদ্যুত ভারতের এনভিভিএনএর মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি, ভুটানের হাইড্রো পাওয়ার প্রজেক্টে বাংলাদেশ, ভারত ও ভুটানের যৌথ বিনিয়োগ ও এই প্রজেক্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুত বাংলাদেশে আমদানিসহ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতার বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়। এছাড়া সভায় রামপালে বাস্তবায়নাধীন মৈত্রী সুপার থারমাল বিদ্যুত প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি বিষয়েও আলোচনা হয়। সভায় এ প্রকল্পের অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ ও বিদ্যুত খাতে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়।
×