ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজকে জয়ের কৃতিত্ব দিলেন ম্যাচসেরা এ মিডলঅর্ডার

ইমরুল কায়েসের প্রশংসায় মাহমুদুল্লাহ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ইমরুল কায়েসের প্রশংসায় মাহমুদুল্লাহ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় মুহূর্তটা ছিল মুস্তাফিজুর রহমানের জন্য। শেষ ওভারে দলকে জেতাতে ৭ রানের কম দিতে হবে। কাজটি খুবই কঠিন বর্তমান সময়ের ওয়ানডে ক্রিকেটে। আর বাংলাদেশ দল তো এমন পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকবারই হেরেছে! কিন্তু এবার কাজটি করতে পেরেছেন ‘কাটার মাস্টার’ খ্যাত মুস্তাফিজ। একটি উইকেট শিকারের পাশাপাশি মাত্র ৪ রান দিয়ে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন ৩ রানের অবিশ্বাস্য জয়। এ কারণেই সব কৃতিত্ব এ তরুণ পেসারকে দিলেন দলকে ব্যাটিং বিপর্যয় থেকে বাঁচানো ৭৪ রানের ইনিংস খেলা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ম্যাচসেরা হওয়া এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান অবশ্য ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৬ নম্বরে ব্যাট করতে নামা ইমরুল কায়েসের সঙ্গ ছাড়া দলের ইনিংস মেরামত করতে পারতেন না। সেজন্য ইমরুলেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি। রবিবার আবুধাবিতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষের সংবাদ সম্মেলনে মাহমুদুল্লাহ দাবি করেন ব্যাটিং অর্ডারে এমন অদল-বদল ছিল পরিকল্পনারই অংশ। ব্যাটিং অর্ডার হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশ দলের চরম মাথাব্যথার কারণ। এশিয়া কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দারুণ জয়ের ম্যাচেই ওপেনার তামিম ইকবাল মারাত্মক ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে যান। এরপর রানখরায় ভুগতে থাকা লিটন দাসের সঙ্গে নতুন মুখ নাজমুল হোসেন শান্ত টানা তিন ম্যাচ ওপেনিং করেছেন। রবিবার আফগানদের বিপক্ষে টুর্নামেন্টে টিকে থাকা ও মর্যাদার লড়াইয়ে ব্যাটিং অর্ডারে আনা হয় ব্যাপক পরিবর্তন। সাকিব আল হাসানের তিনে মোহাম্মদ মিঠুন এবং সাকিব পাঁচে নেমেছেন। আর মাত্র একদিন আগে হুট করে বাংলাদেশ থেকে আরব আমিরাত গিয়েই ওপেনার কিংবা তিন নম্বর ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিচিত ইমরুল কায়েস নামেন প্রথমবারের মতো ছয়ে। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা এই সুনির্দিষ্ট ম্যাচটির জন্যই ব্যাটিং অর্ডার সাজিয়েছিলাম। আমাদের টপঅর্ডারে বেশ কজন বাঁহাতি আছে। আমরা শুরুতে ধুঁকছিলাম। আজকে লিটন কিছুটা ভাল খেলেছে। তার পর মাঝে লড়াই করতে হয়েছে। পরে আমার আর ইমরুলের জুটিতে আমরা টেনে নেয়ার চেষ্টা করেছি।’ অথচ এই ম্যাচে ইমরুলের হঠাৎ অন্তর্ভুক্তিই ছিল বিস্ময়কর। তাকে ৬ নম্বরে নামানোর পর আরেকটি বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। কারণ, ঘরোয়া আসরেও তিনি টপঅর্ডারেই নিয়মিত। আন্তর্জাতিক ম্যাচে ওপেনার হিসেবেই বেশিরভাগ সময় খেলেছেন এবং মাঝে মাঝে তিনে। এ বিষয়ে মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘এটা আমাদের পরিকল্পনার অংশ ছিল। ওর অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগানো দরকার ছিল আমাদের। শেষ পর্যন্ত তার অভিজ্ঞতা দারুণভাবে কাজে এসেছে।’ সত্যিই ইমরুল একেবারে আলোচনায় না থেকেও দলে ঢুকে যেভাবে নিজেকে মেলে ধরলেন সেটা অনেকদিন ক্রিকেট ভক্তরা মনে রাখবেন। পাহাড়সম চাপের মুখে অভিজ্ঞতার মূল্য বোঝালেন তিনি। মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে গড়লেন রেকর্ড ১২৮ রানের জুটি। এই জুটির ওপর দাঁড়িয়ে আফগানদের শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় বাংলাদেশ। সতীর্থকে তার প্রাপ্য প্রশংসাটুকু দিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ, ‘ইমরুল যেভাবে শনিবার রাতে উড়ে এসেছে, রবিবার গরমের মধ্যে এমন অসাধারণ ইনিংস খেলেছে তাতে খুব ভাল লাগছে। আমার কাছে ওর ইনিংসটা দারুণ লেগেছে। কারণ ও টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান, কখনও ছয়ে ব্যাট করেনি। প্রথমবার মিডল অর্ডারে ব্যাট করতে নেমে ভাল খেলাটা সত্যিই আসাধারণ। আশা করছি ও ধারাবাহিকতা ধরে রাখবে।’ আফগান লেগস্পিনার রশিদ খান ভীতিকর হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশ দলের জন্য। আগের ম্যাচগুলোয় হারের কারণটাও ছিলেন তিনিই। কিন্তু এবার তাকে পরিকল্পিতভাবে মোকাবেলা করেছে বাংলাদেশ। তাই রশিদ বেশি সমস্যায় ফেলতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ গত কয়েক বছর বেশ কিছু ম্যাচে শেষ ওভারে গিয়ে হেরেছিল। যার সবশেষ উদহারণ নিদাহাস ট্রফির ফাইনাল। এছাড়া ২০১২ এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফাইনাল এবং ২০১৬ টি২০ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটির কথা ক্রিকেটাররা কখনোই ভুলবেন না। রবিবার আফগানিস্তান জয়ের খুব কাছে গিয়েও জিততে পারেনি। এটাই তৃপ্তি দিচ্ছে মাহমুদুল্লাহকে, ‘ম্যাচ জেতার অনুভূতি কখনোই প্রকাশ করা যায় না। বাংলাদেশের হয়ে যেকোন ফরমেটে যেকোন ম্যাচ জয়ই ভাল লাগার। তবে বেশি ভাল লাগছিল যে আমরা অনেকবারই ৬ বলে ৮ বা ৯ রুখে দিতে পারিনি। আজকে আমাদের বোলাররা এটা ডিফেন্ড করেছে। এটা দারুণ তৃপ্তির।’ আর জেতার এ কাজটি করেছেন মুস্তাফিজ। শেষ ওভারে ৮ রান নিতে দেননি তিনি আফগান ব্যাটসম্যানদের। এ কারণে এটিকে জীবনের সবচেয়ে বড় মুহূর্ত বলে দাবি করে কাটার মাস্টার টুইটারে পোস্ট দিয়েছেন। আর মাহমুদুল্লাহ বললেন, ‘মুস্তাফিজের শেষ ওভারের বোলিংকেই টার্নিং পয়েন্ট বলব। আমাদের জুটি হয়তো গুরুত্বপূর্ণ ছিল, কিন্তু ৬ বলে ৮ রান আটকানো সহজ নয়। মুস্তাফিজ যেভাবে করেছে, সেটা ছিল অসাধারণ। সব বোলারই ভাল করেছে, ম্যাশ (মাশরাফি), সাকিব, মিরাজ সবাই। মুস্তাফিজকে তবু আলাদা কৃতিত্ব দিতে হবে। পায়ের সমস্যা নিয়েও সে দারুণ বোলিং করেছে।’
×