ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঐক্য প্রক্রিয়ার আগেই বিএনপির সমাবেশের ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঐক্য প্রক্রিয়ার আগেই বিএনপির সমাবেশের ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় ঐক্য গঠনের রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্যে এবার রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। আগামী বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সোমবার নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, বৃহস্পতিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অথবা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এই জনসভা করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছি। জনসভা নিয়ে আমাদের প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করেছি। অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনও গণপূর্ত অধিদফতরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। বর্তমান রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সেই জনসভা অনুষ্ঠিত হবে। সেটা সেদিনই জানতে পারবেন। এর আগে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে বিএনপিকে নিয়ে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য গঠন করা হয়। ওই সমাবেশ থেকে আগামী ১ অক্টোবর পাঁচ দফা দাবি আদায়ে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এর আগেই বিএনপির পক্ষ থেকে রাজধানীতে সমাবেশের ঘোষণা দেয়া হলো। এদিকে বিএনপি নিয়ে জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া গঠনের পর সোমবার এক অনুষ্ঠানে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ঐক্য প্রক্রিয়া হওয়ায় সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। সরকারকে তাড়াতে এবং স্বৈরাচার সরকারের পতনের জন্য জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। সরকারের বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্র করছি না। জনগণ তাদের ভোটের অধিকার আদায়ের এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে কয়েকটি বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে গেছে। আমরাও তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। এবং তা প্রকাশ করছি। এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নাই উল্লেখ করেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেলের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু স্মৃতি সংসদ এ প্রতিবাদ সভায় আরও বলেন, ঐক্যের মোকাবেলা করার শক্তি সরকারের নেই। সেজন্য সরকার আবোল-তাবোল বলছে। দেশের সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, যুবক-শিশু-কিশোর, পেশাজীবী সবার এই ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এটা তাদের স্বপ্নের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সে জন্য সরকার জাতীয় ঐক্য নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। আওয়ামী লীগকে ছাড়া জাতীয় ঐক্য কীভাবে হবে? দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, এটা হাস্যকর। ওবায়দুল কাদের যদি হাস্যকরভাবে বলেও থাকেন, এরপরও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদককে বলতে চাই, আপনারা যে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করে দিয়ে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছেন, হত্যা, গুম, নির্যাতন ও অত্যাচার করছেন, এর জন্য আগে আপনারা জনগণের কাছে ক্ষমা চান। তিনি বলেন, সরকার যদি ক্ষমা চেয়ে জাতীয় ঐক্যর লক্ষ্যে নাগারিক সমাবেশে ঘোষিত ৫ দফা দাবির সঙ্গে একমত হয়ে ঘোষণা দেন, তাহলে আপনাদের জাতীয় ঐক্যে আহ্বান জানাব। কারণ এই দাবিগুলোর সঙ্গে সবাই একমত। এই দাবিগুলো যদি আপনারা মেনে নেয়ার ঘোষণা দেন, তাহলে আপনাদের জাতীয় ঐক্যে স্বাগত জানাব। কিন্তু এটা পারবেন না। এটা না পারলে জাতীয় ঐক্যে নেয়াও সম্ভব না। বিএনপির চেয়ারপার্সনকে ছাড়া দেশে কোন জাতীয় নির্বাচন হবে না উল্লেখ করে বলেন, সঙ্কট থেকে মুক্তির একমাত্র পথ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু আমরা চাই তা নয়, বন্ধু রাষ্ট্রগুলোও চায়। এর আগে যেসব নির্বাচন হয়েছে, কোনটাই সুষ্ঠু হয়নি। খালেদা জিয়াকে ছাড়া কোন নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। দেশে আগামীতে যদি কোন নির্বাচন হয়, মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই নির্বাচন হবে। অন্যথায় কোন নির্বাচন হবে না। খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ৫ জানুয়ারির মতো নির্বাচন এ দেশে আর হবে না। হতে দেয়া হবে না। এই ভয়ে সরকার বিএনপিকে কোণঠাসা করতে চায়। যারা নির্বাচনে ভূমিকা রাখবেন, তাদের কারাগারে রাখতে চাচ্ছে। সে কারণে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে। আমাদেরও যে কোন সময় নিয়ে যেতে পারে। এই একটি পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। তিনি বলেন, মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে এই কাকানুন বালের আহ্বান জানাচ্ছি। দেশে গণতন্ত্র ও জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো যতগুলো কালা-কানুন আছে, সেসব থেকে মানুষ মুক্তি পাবে। অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে খন্দকার মোশাররফ দাবি করেন, ১ সেপ্টেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ১৩ হাজার ১৩০ জনের বিরুদ্ধে ৩ হাজার ৬৩৬টি মামলা দেয়া হয়েছে। এসবের কারণে দেশ একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেন। এদিকে নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আওয়ামী রাজনীতি দলীয় সঙ্কীর্ণতার বলয় থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। ক্ষমতাসীনরা ব্যাংক-বীমা, শেয়ারবাজার, বিদ্যুত, জ্বালানি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেক্টর সবই আত্মসাত করেছে। এখন বেওয়ারিশ লাশ দাফনের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ওপরেও এদের নেক নজর পড়েছে। যুবলীগের মহানগরীর নেতারা আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ওপরে চড়াও হয়েছে বিপুল অঙ্কের চাঁদা আদায়ের জন্য। এই ঘটনা জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আর কিছু দিন পর হয়ত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা লাশের কাছ থেকেও চাঁদা চাইবে। ‘গণমাধ্যমের একাংশ আওয়ামী লীগের প্রতি অবিচার করছে’ ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের জবাবে বলেন, অবিচার করছে না, বরং গণমাধ্যমের বিরাট অংশ সাহসের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছে। সংবাদমাধ্যমের গলায় দড়ি ঝোলাতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করে ওবায়দুল কাদের সাহেবদের তৃপ্তি মিটছে না, তাই এখন গোটা গণমাধ্যমকেই পকেটে ঢোকানোর চেষ্টায় কিছুটা বেগ পাওয়াতে আফসোস করে নানা কথাবার্তা বলছেন। সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, আবদুস সালাম আজাদ, আসাদুল করীম শাহিন, মুনির হোসেন, আবদুল আউয়াল খান ও সাইফুল ইসলাম পটু উপস্থিত ছিলেন।
×