ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সীমান্তে জিরো টলারেন্স- আর নয় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 সীমান্তে জিরো টলারেন্স- আর নয় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ ১২ লক্ষাধিক অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাকে নিয়ে টইটুম্বর কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ এলাকা। জনপদজুড়ে গিজ গিজ করছে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠীর সদস্য। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার কথা বলে মিয়ানমার বিভিন্ন কৌশল নিয়ে পিছিয়ে গেছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে আরও রোহিঙ্গা বাংলাদেশে চলে আসার একটি খবর ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে সীমান্ত এলাকাজুড়ে বিজিবির টহল আরও জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি নাফ নদীসহ সীমান্তের সাগর সংলগ্ন এলাকায় কোস্টগার্ডের তৎপরতাও বাড়ানো হয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্টের রাতের পর থেকে রাখাইন রাজ্য থেকে ইতোমধ্যে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ পেয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মানবিক কারণে তাদের আশ্রয়ও দেয়া হয়েছে। ধারণা করা হয়েছিল মিয়ানমার এদেরকে শীঘ্রই ফিরিয়ে নেবে। সে লক্ষ্যে কাজও শুরু হয়। উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক চুক্তিও হয়। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে দেখা যায় মিয়ানমার পক্ষ এসব রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে না নেয়ার উদ্দেশে নানা ছলচাতুরী করেই যাচ্ছে। আগে চেয়েছিল তালিকা। এখন চাচ্ছে পরিবারভিত্তিক তালিকা। এ তালিকা আবার তারা যাচাই বাছাইও করবে। অর্থাৎ কালক্ষেপণের যত প্রক্রিয়া আছে সবই করে যাচ্ছে মিয়ানমার পক্ষ। এ অবস্থায় রাখাইন প্রদেশের রাজধানী সিটওয়ে (আকিয়াব) রাচিদং, বুচিদং ও মংডুসহ ১৭ টাউনশিপের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মাঝে বাংলাদেশে চলে আসার ব্যাপক আগ্রহ চাউর হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে সিটওয়ে, রাচিদং, বুচিদং ও মংডুসহ ১৭ টাউটশিপে এখনও ৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গার বসবাস রয়েছে। আর ইয়াঙ্গুনে (সাবেক রেঙ্গুন) রয়েছে ৫০ হাজারের মতো। ইয়াঙ্গুনে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত, অনেকে ধনাঢ্য। এদের মাঝে দেশ ছাড়ার কোন আগ্রহ নেই। কিন্তু যত জট পাকিয়েছে রাখাইন রাজ্যজুড়ে। গত বছর রাখাইন রাজ্যে সেনা বর্বরতার মুখে প্রাণ বাঁচাতে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে প্রবেশের ঢল নামে। এরপর থেকে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে আরও অনেকে চলে এসেছে। ইউএনএইচসিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ বছর চলে আসা রোহিঙ্গার সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৬৪টি। এর মধ্যে গত ২০ মে থেকে ২২ জুলাইয়ের মধ্যে নতুন এসেছে তিন সহস্রাধিক। সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী জুলাইয়ে ৪১৩, আগস্টে ৪৫৬ এবং চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকে পনের দিনে নাফ নদী পেরিয়ে ৫৭১ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে। বিভিন্ন ফাঁক ফোকরে অনুপ্রবেশের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় বিজিবির পক্ষে এখন জিরো টলারেন্স গ্রহণ করা হয়েছে। একে তো সীমান্ত সীল করা আছে। তারপরও রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ প্রবণতা থাকায় এখন বিজিবির পক্ষে আরও জোরালো তৎপরতা শুরু করা হয়েছে। বিজিবি টেকনাফ-২ ব্যাটেলিয়নের উপঅধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জমাদ্দার জানিয়েছেন, ওই পার থেকে রোহিঙ্গারা অনুপ্রবেশের যে চেষ্টা চালাচ্ছে সে খবর তাদের রয়েছে। তাই টহলও বৃদ্ধি করা হয়েছে। ওপার থেকে আর কাউকে অনুপ্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে তিনি জানান। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রবিউল হাসানও জনকণ্ঠকে জানান, সীমান্তজুড়ে কড়া নজরদারি বলবৎ রয়েছে। আর কোন অনুপ্রবেশ নয়। অনুপ্রবেশের চেষ্টা যখই মিলবে তখনই হবে পুশব্যাক। রবিবার উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালি ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওপারের অবস্থা এখনও তাদের অনুকূলে নয়। মিয়ানমারের ৩ গুপ্তচর আটক ॥ এদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে অবৈধভাবে এপার থেকে ওপারে যাওয়ার সময় ৩ বাংলাদেশী উপজাতীয়কে আটক করেছে বিজিবি।
×