ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ ও ‘জাদুর লাটিম’

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

 শিল্পকলায় ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ ও ‘জাদুর লাটিম’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বপ্নদলের দর্শক নন্দিত প্রযোজনা ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ নাটকের ৯৮তম মঞ্চায়ন হয় শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে রবিবার সন্ধ্যায়। বাদল সরকারের মূল রচনা অবলম্বনে নাটকটি রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। নাটকে উঠে এসেছে পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অপ্রত্যাশিত পরিণতি। নাটকের উপজীব্য যুদ্ধোন্মাদনার বিরুদ্ধে শৈল্পিক প্রতিবাদ। এতে সমান্তরালে গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, বসনিয়া-ফিলিস্তিন, আফগানিস্থান, পাকিস্তান-ভারত, ইরাকে আগ্রাসন, কুয়েত, তিউনিশিয়া, ইয়ামেন, সিরিয়া, তুরস্ক, মিয়ানমার, গুলশানে বর্বর হামলা, সাম্প্রতিক বাসচাপায় শিক্ষার্থী হত্যা প্রভৃতি প্রসঙ্গ। নানাবিধ দৃষ্টিকোণ থেকে নাটকটিতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে যুদ্ধবাজ ও যুদ্ধাপরাধী-অশান্তিকামীদের স্বরূপ এবং তাদের কাজের তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী বীভৎসতার চিত্র উদঘাটিত হয়েছে। এর উপস্থাপনায় প্রয়োগ করা হয়েছে হাজার বছরের নাট্য-ঐতিহ্যের ধারায় আধুনিক বাঙ্গলা নাট্যরীতি। নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন জুয়েনা শবনম, ফজলে রাব্বি সুকর্ন, সামাদ ভূঞা, শিশির সিকদার, জেবুন নেসা, শাখাওয়াত শ্যামল, মেহেদী রানা, সোনালী রহমান, অর্ক অপু ও জাহিদ রিপন। অন্যদিকে একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় কণ্ঠশীলনের নাটক ‘জাদুর লাটিম’। এদিন সন্ধ্যায় ছিল নাটকটির দশম প্রদর্শনী। নোবেল বিজয়ী মিশরীয় ঔপন্যাসিক নাগিব মাহফুজের ‘এ্যারাবিয়ান নাইট্স এ্যান্ড ডেজ’ অবলম্বনে নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন রাফিক হারিরি। নির্দেশনা দিয়েছেন কণ্ঠশীলন অধ্যক্ষ মীর বরকত। নাটকটি এক কল্পিত শহরের ইফরিদ-কুফরিদ নামের দুষ্ট জ্বিনের গল্প হলেও বাস্তবতার বাইরে কিছু নয়। মানুষের শিরায় উপশিরায় ঘুরে বেড়ানো ইফরিদ আর কুফরিদ মানুষের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের বিষ ঢুকিয়ে এবং ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে নগর জুড়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে থাকে। সেই চক্রান্তের বলি হয় ব্যবসায়ী সানান, কোটিপতি কারাম, হামদানি, সালিম, তরুণী। কুফরিদের চক্রান্তে গবর্নর খুন হবার পর ইফরিদ কালো জাদু থেকে মুক্ত হয়ে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। মধ্যপ্রাচ্যের পটভূমিতে লেখা হলেও নাট্যকার বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক, সামাজিক প্রেক্ষাপট, ব্যক্তিগত দ্বিধা দ্বন্দ্ব ফুটিয়ে তুলেছেন নাটকে। অদ্ভুতুড়ে কাহিনীর সঙ্গে বর্তমান বিশ্বের প্রবহমান ঘটনাবলীর সাযুজ্য ফুটিয়ে তুলতে ফ্যান্টাসি ও রিয়েলিস্টিকের মিশ্রণে ঢেলে সাজানো হয়েছে নাটকটি। বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেছেন রইস উল ইসলাম, মোস্তফা কামাল, একেএম শহীদুল্লাহ কায়সার, সোহেল রানা, সালাম খোকন, অনন্যা গোস্বামী, জেএম মারুফ সিদ্দিকী, নিবিড় রহমান, অনুপমা আলম, মোঃ আব্দুল কাইয়ুম, রুবেল মজুমদার, লায়লা নজরুল, নিশরাত জেবিন নিশি, শেখ সাজ্জাদুর রহমান, ফাহিম আবরার, আনিকা মৌনি, তাসিন ইসলাম, মিজানুর রহমান চৌধুরী মিশন ও অনুপ্রভা ম-ল। প্রায় দেড় ঘণ্টার নাটকটির মঞ্চ সজ্জা, পোশাক ও আলোক পরিকল্পনায় আছেন ফয়েজ জহির, সঙ্গীত পরিকল্পনা ও সুর সংযোজন করেছেন শিশির রহমান, কোরিওগ্রাফি করেছেন আমিনুল আশরাফ। গান লিখেছেন রাফিক হারিরি ও মীর বরকত। গানে গানে আব্দুর রহমান বয়াতি স্মরণ ॥ ‘মন আমার দেহ ঘড়ি বানাইয়াছে কোন মিস্তরি একটা চাবি মাইরা দিছে ছাইড়া ঘুরতে আছি জনমভরি’ এই গানে মৃত্যু চেতনা ও জীবনের মর্মকথা অনুসন্ধান করেছিলেন মরমী সাধক বাউল শিল্পী আব্দুর রহমান বয়াতি।
×