ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে শেষ হলো বনসাই প্রদর্শনী

বৃহৎ বৃক্ষের ক্ষুদ্র রূপ শৈল্পিক ছোঁয়ায় নান্দনিকতা

প্রকাশিত: ০৪:৪৪, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বৃহৎ বৃক্ষের ক্ষুদ্র রূপ শৈল্পিক ছোঁয়ায় নান্দনিকতা

মামুন-অর-রশিদ ॥ প্রতিবারের মতো এবারও পদ্মাপাড়ের শহর রাজশাহীতে শুরু হয়েছে বনসাই প্রদর্শনী। টবে বসানো আস্ত সবুজ গাছ যেমন-বাংলাবট, লাইকড়, তেঁতুল, কামিনী প্রভৃতি সব গাছের সমারোহ। এসব গাছ শিল্পীর ছোঁয়ায় একেকটি নান্দনিক বৃক্ষের সমাহার। এসবই হলো বনসাই। যেন প্রকৃতির সাজানো রূপে সজ্জিত একেকটি বৃক্ষ। শুরু থেকেই বনসাই দেখতে ভিড় জমছে নগরীর মণিবাজার চত্বরে। গত বৃহস্পতিবার শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী প্রদর্শনী। পুরস্কার বিতরণের মধ্য দিয়ে রবিবার শেষ হলো। রাজশাহী বনসাই সোসাইটি নগরীর সিএ্যান্ডবি মোড়ের মনিবাজার চত্বরে এবার ১৯তম প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহী সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। শনিবার সকালে নগরীর মণিবাজারে গিয়ে দেখা যায়, থরে থরে সাজানো বনসাই। প্রতিটি বৃক্ষেই শিল্পের ছোঁয়া। তরুণ প্রজন্মতো বটেই, বনসাই প্রদর্শনীতে এসে অভিভূত সব বয়সী মানুষ। তারা চেয়ে চেয়ে এসব বৃক্ষ দেখেন। কেউ কেউ ছবি তুলে রাখেন। বনসাই দেখতে আসা রাজশাহী কলেজের শিক্ষার্থী ফাতেমা খাতুন, সারমিন আহমেদ ও তানিসা জানান, তারা বনসাই সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। বড় বড় গাছকে নিজের মতো করে টবে সাজিয়ে সুন্দর করে বাঁচিয়ে রাখা যায়, প্রদর্শনীতে না আসলে তারা জানতেই পারতেন না। আয়োজকরা জানান, প্রকৃতির প্রতি ভালবাসা থেকে জন্ম বনসাই চর্চার। হাজার বছর থেকে চলে আসছে বনসাই চর্চা। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এর পরিধি, সৌন্দর্য্য আর আধুনিকতা। সবমিলিয়ে বনসাই চর্চা এখন আধুুনিক ও মননশীল শিল্পে পরিণত হয়েছে। এর নান্দনিকতা তৃপ্তি যোগায় মনে। একটি জীবন্ত শিল্পকে টিকিয়ে রাখা খুবই কষ্টকর হলেও জীবন্ত শিল্পকে ধরে রাখার জন্য শ্রম ও ভালবাসার মধ্যে গড়ে তোলাই হলো বনসাই। আস্ত একটি বটগাছকে টবে আটকানো, বড় ধরনের তেঁতুল গাছ স্থান পেয়েছে ঘরের কোনের ছোট্ট টবে। অপরূপ সৌন্দর্য্যে ভরা এ বনসাই আনন্দ দেয় মানুষের হৃদয়, মনকে। বনসাইপ্রেমীদের মতে ‘প্রকৃতি তার বিচিত্র রূপ নিয়ে সর্বদা আকর্ষণ করে, সেই প্রকৃতির পুরো রহস্য পাওয়া যায় একটি জীবন্ত বনসাইয়ের মাধ্যমে। বনসাই এমনই এক শিল্পকর্ম যার সৌন্দর্য্য প্রকৃতির সঙ্গে একই সীমারেখায় মিশিয়ে দিতে সক্ষম। উত্তরাঞ্চলের রাজশাহীতেও গড়ে উঠেছে এ শিল্পকর্ম নিয়ে চর্চাকেন্দ্র। রাজশাহী বনসাই সোসাইটি এ জীবন্ত শিল্প ধরে রাখতে আর চর্চার পরিধি বাড়াতে আয়োজন করছে নানা অনুষ্ঠানের। নিচ্ছে নানা উদ্যোগ। ১৯ বছর ধরে রাজশাহী বনসাই সোসাইটি এগিয়ে চলেছে তাদের চিত্রকর্ম নিয়ে। এবারের প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ২৫২টি বনসাই। এগুলোর মধ্যে রয়েছে লাইকড়, চাইনা বট, কামিনী, শেওড়া, জেট, ফুকেন্টি, বট (বেনজামিনা), বাংলাবট, পাইকর, ম্যাওড়া, তমাল, বাগানবিলাস, জিলাপী, তেঁতুল, বিভিন্ন প্রকার ফাইকাস, কৎবেল, ঘুর্নিবীচি, বৈচী, থাইচেরী, ভাইরেনসহ আরও বিরল প্রজাতির বনসাই গাছ। ব্রুম, কেসকেড, সেমিকেসকেড, ইনফরমাল, ফরমাল, রুটওভার ও ল্যান্ডস্ক্যাপ আকারে প্রদর্শন করা হচ্ছে এগুলো। প্রদর্শনী প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শকদের জন্য খোলা থাকবে। আয়োজকরা জানান, বনসাইর মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজাতির বৃহৎ গাছকে ক্ষুদ্র আকারে দেখানো সম্ভব হয়। এ নান্দনিক শিল্প মানুষকে তৃপ্তি দেয়। এর মাধ্যমে সুস্থ পরিবেশ রক্ষা করা যায়। বনসাইর অর্থনৈতিক গুরুত্বও অনেক। রাজশাহী বনসাই সোসাইটির সভাপতি সৈয়দ মাহফুজ-ই-তৈাহিদ টিটুর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন-রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কবি জুলফিকার মতিন, বনসাই সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার মোর্শেদ প্রমুখ।
×