ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম ওয়াসার সরবরাহ লাইন

আসছে আরও ৯ কোটি লিটার পানি

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আসছে আরও ৯ কোটি লিটার পানি

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ সুপেয় পানির জন্য সড়কের পাশের উন্মুক্ত কলটিকে ঘিরে শত শত কলসির লাইন ছিল অতীতে চট্টগ্রাম নগরীতে নিত্যদিনের চিত্র। ভোর থেকে অপেক্ষায় নারী ও শিশু-কিশোররা। কিন্তু ১৭শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়ার পর সেই দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। পানি সঙ্কট অনেকটাই কেটে গেছে। বাস্তবায়নাধীন আরও দুটি বড় প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে। নগরীর পানির চাহিদা মিটিয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার দৃষ্টি এখন কর্ণফুলীর দক্ষিণ পাড়ে। বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে প্রায় ৬০ লাখ মানুষের বাস। দশকের পর দশক কেটেছে পানির হাহাকারে। রাঙ্গুনীয়ার পোমরায় বাস্তবায়িত শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার থেকে দৈনিক ১৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্পের পানি ওয়াসার পাইপ লাইনে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয় গত বছরের ১২ মার্চ। এরপর থেকেই পরিস্থিতির আমূল উন্নতি। এক মাসের মধ্যে যুক্ত হচ্ছে আরও ৯ কোটি লিটার পানি। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ জানান, নগরীর ৭০ ভাগ এলাকায় এখন ২৪ ঘণ্টা ওয়াসার পানি। বাকি এলাকায় পানি সরবরাহ হচ্ছে রেশিনিং ভিত্তিতে। আগামী নবেম্বরের মধ্যে মদুনাঘাট প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যুক্ত হবে দৈনিক আরও ৯ কোটি লিটার পানি। তখন ৯০ ভাগ এলাকায় ২৪ ঘণ্টা পানি সরবরাহ সম্ভব হবে। আর ২০২০ সাল নাগাদ পানির কোন সঙ্কটই থাকবে না। কেননা, রাঙ্গুনীয়ার পোমরায় ‘শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার প্রকল্প-২’ এর কাজ এরমধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তাহলে যুক্ত হবে আরও ১৪ কোটি লিটার পানি। চট্টগ্রাম ওয়াসার জনসংযোগ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নগরীর পানির চাহিদা সম্পূর্ণ মিটে যাচ্ছে। ওয়াসার সেবা বিস্তৃত হবে নগরীর বাইরে কর্ণফুলীর ওপারে বোয়ালখালী, পটিয়া এবং আনোয়ারায়। এর জন্যও প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার আর্থিক সহযোগিতায় বোয়ালখালীর ভা-ালজুরি এলাকায় হবে ৬ কোটি লিটার শোধন ক্ষমতাসম্পন্ন আরেকটি প্রকল্প। এতে ব্যয় হবে ১১শ কোটি টাকা। বর্তমান সরকারের আমলে গৃহীত তিনটি মেগা প্রকল্পের মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার -১ এর মধ্যেই বাস্তবে রূপ নিয়েছে। মদুনাঘাট প্রকল্পের পানি এসে যাচ্ছে একমাসের মধ্যেই। আর শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-২ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে আগামী বছরের শেষ নাগাদ। এই তিন প্রকল্পের মধ্যে প্রথম প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৭শ’ কোটি টাকা। মদুনাঘাট প্রকল্পে ব্যয় ১১শ’ কোটি টাকা। আর সর্বশেষ প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা। এ প্রকল্পের মধ্যে ৬শ’ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপনও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীতে দৈনিক পানির চাহিদা প্রায় ৫০ কোটি লিটার। ওয়াসা সরবরাহ করতে পারত মাত্র ১৮ কোটি লিটার। রাঙ্গুনীয়ার প্রথম প্রকল্প থেকে ইতোমধ্যেই ১৪ কোটি লিটার পানি যুক্ত হওয়ায় ওয়াসার পানি সরবরাহের সক্ষমতা প্রায় ৩২ কোটি লিটার। এর সঙ্গে মদুনাঘাটের ৯ কোটি লিটার যুক্ত হলে পানির সরবরাহের পরিমাণ ৪০ কোটি লিটার ছাড়িয়ে যাবে। তৃতীয় প্রকল্পের পানির যোগান শুরু হলে শতভাগ চাহিদা পূরণ করে তিন উপজেলাকে ওয়াসার সেবার আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে। এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরীতে স্যুয়ারেজ সিস্টেমের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ওয়াসা। সেফটিক ট্যাংকমুক্ত করার লক্ষ্যে গৃহীত এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৪ হাজার কোটি টাকা। একটি আধুনিক, বিশুদ্ধ ও বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করার লক্ষ্যে সরকারের নির্দেশনায় গ্রহণ করা হয়েছে এ মেগা প্রকল্প, যার কাজ শুরু হতে কোন ধরনের দীর্ঘসূত্রতা হবে না বলে আশা করছে ওয়াসা। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, আগামী ২ অক্টোবর একনেক সভায় স্যুয়ারেজ প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার কথা রয়েছে। অনুমোদিত হলে এর কাজও দ্রুততম সময়ে শুরু হয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। তিনি জানান, ওয়াসার প্রায় প্রতিটি প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তা রয়েছে জাপানের সংস্থা জাইকার। স্যুয়ারেজ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে জিওবি অর্থায়নে। চট্টগ্রাম নগরীতে সুপেয় পানি সঙ্কট দূর করতে এ সরকারই গ্রহণ করেছে একের পর এক মেগা প্রকল্প, যেগুলো আলোর মুখ দেখছে। এটাকে চট্টগ্রামের প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি হিসেবেই দেখছে সাধারণ মানুষ।
×