ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনা ও সন্ত্রাস এক সঙ্গে চলতে পারে না ॥ নয়াদিল্লী

পাক-ভারত বৈঠক বাতিল

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পাক-ভারত বৈঠক বাতিল

পাক-ভারত আলোচনা শুক্রবার বাতিল করেছে ভারত। আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই ঘোষণা দেয়া হলো। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার এ কথা জানিয়েছেন। এদিকে বৈঠক বাতিলের পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ আখ্যা দিয়ে পাকিস্তান বলেছে, অভ্যন্তরীণ চাপেই এটি করল ভারত। খবর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও ডনের। জম্মু-কাশ্মীরে তিন পুলিশ খুনের ঘটনার জেরে পাকিস্তানের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক বাতিল করল ভারত। পাকিস্তানের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ভারত নিউইয়র্কে আগামী সপ্তাহে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠানে রাজি হয়েছিল। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কোরেশির সঙ্গে আলোচনায় বসার কথা ছিল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীরে পুলিশ সদস্যদের অপহরণ ও হত্যার ঘটনার পর পাকিস্তানকে দোষারোপ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আলোচনা আর সন্ত্রাস এক সঙ্গে চলতে পারে না। পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর ইমরান খান এক চিঠিতে বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে। ভারত বৃহস্পতিবার তাতে রাজি হলেও জানিয়েছিল, এ বৈঠকের অর্থ এই নয় যে, দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে আবার সংলাপ শুরু হবে। এরই মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরের সোপিয়ানে বৃহস্পতিবার রাতেই জঙ্গীরা অপহরণ করে চার পুলিশ সদস্যকে। তাদেরই তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে পরদিন। অপহৃতদের একজন পালিয়ে আসতে পেরেছেন। এক সংবাদ সম্মেলনে রবিশ কুমার জানিয়েছেন, পাকিস্তানের নতুন করে আলোচনা শুরুর প্রস্তাবের পেছনে তাদের শয়তানী পরিকল্পনাটাও যে বেরিয়ে এসেছে তা এখন স্পষ্ট। নতুন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের মুখোশ সরে গিয়ে আসল চেহারাটা বেরিয়ে পড়েছে। এ রকম একটি পরিবেশে কোনরকম আলোচনা অর্থহীন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে নতুন আলোচনা ঘোষণার পর দুটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ভারত ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক ঘোষণার পর থেকে দুটি সবচেয়ে খারাপ ঘটনা ঘটে। পাকিস্তান কর্তৃপক্ষের মদদে আমাদের নিরাপত্তা কর্মীদের সর্বশেষ নৃশংস হত্যাকা- এবং সম্প্রতি সন্ত্রাসীদের গৌরবান্বিত করে পাকিস্তানের ২০টি ধারাবাহিক স্ট্যাম্প প্রকাশ পাওয়ার পর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে যে, পাকিস্তান তার আগের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি। পাক-ভারত আলোচনা বাতিল করার ঘোষণাকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। আলোচনা বাতিলের প্রতিক্রিয়ায় পাক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কোরেশি বলেন, আলোচনা বাতিলের মানে হচ্ছে ভারত আগামী বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেখা যাচ্ছে যে, ভারত সংলাপে বসার চেয়ে অন্য কিছুকে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। নয়াদিল্লীতে এমন কিছু গোষ্ঠী রয়েছে যারা চায় না দুদেশের সমস্যা নিয়ে কোন আলোচনা হোক। বেলুচিস্তানে ভারতের হস্তক্ষেপের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান আগ বাড়িয়ে আলোচনায় বসার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আনুষ্ঠানিক আলোচনা ইসলামাবাদে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়। সে সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হঠাৎ করে লাহোর সফরে যান। তখন দু’দেশই সর্বোচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে একমত হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক ২০১৬ সালের পাঠানকোট বিমান ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলার পর স্থগিত করা হয়। পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কয়েকটি হামলার পর ভারত সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালের লাইন অব কন্ট্রোল বরাবর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সার্জিক্যাল হামলা চালায়। এরপর দু’দেশ আর এক সঙ্গে আলোচনায় বসেনি। সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে দুই দেশের মধ্যে বৈঠক হয় ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে। সে সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হার্ট অব এশিয়া সম্মেলনে যোগদান করেন। সম্মেলন চলাকালে সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সারতাজ আজিজের সঙ্গে বৈঠকে বসেন।
×