ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বার্ধক্য নির্ণয়ে নতুন গবেষণা!

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বার্ধক্য নির্ণয়ে নতুন গবেষণা!

বয়স বাড়া নিয়ে অনেকের মনে হতাশা, আশঙ্কার মতো অনুভূতি সৃষ্টি হয়। সেই প্রক্রিয়ার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা খোঁজার ও শরীরে বয়সের পরিমাপের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছেন এক বিজ্ঞানী। লস এঞ্জেলেস শহরের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ো-স্ট্যাটিস্টিশিয়ান স্টিভ হর্ভাট বেশ কয়েক বছর ধরে মানুষের শারীরিক বয়স পরিমাপের পদ্ধতির খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বয়স কেন বাড়ে, তা জানার ইচ্ছা আমাকে সবচেয়ে বেশি নাড়া দেয়। সেটা কী এবং চিকিৎসা বা ওষুধের মাধ্যমে তাতে কিভাবে হস্তক্ষেপ করা যায়, তা অবশ্যই জানতে চাই। এভাবে বার্ধক্যের প্রক্রিয়ার গতি কমাতে চাই। বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষণার ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার পরিমাপ অন্যতম প্রধান বাধা ছিল। আগে অনেকে দাবি করতেন, অমুক ট্যাবলেট খেলে তারুণ্য ধরে রাখা যায়। কিন্তু তা যাচাই বা পরীক্ষা করার কোন উপায় ছিল না।’ বেশ কিছুকাল ধরে বার্ধক্য সংক্রান্ত গবেষকদের ধারণা ছিল, যে ক্রোমোজোমের প্রান্তে টেলোমেরেস পরীক্ষা করেই মানুষের বয়স মাপা সম্ভব। কিন্তু দেখা গেছে, সেই পরীক্ষা মোটেই উপযুক্ত নয়। ভুলের মাত্রা ১৫ বছর কম বা বেশি থাকত। হর্ভাট কাকতালীয়ভাবেই সঠিক পথে অগ্রসর হয়েছিলেন। হর্ভাট আবিষ্কার করলেন যে, বয়স অনুযায়ী ডিএনএ-র মধ্যে এপি-মার্ক বদলে যায়। তিনি ডিএনএ-র মধ্যে এমন কিছু জায়গা চিহ্নিত করলেন, যা বয়স নির্ধারণের জন্য বিশেষভাবে উপযুক্ত। সেই সব জায়গায় ছাপ বা চিহ্নের বিন্যাস অত্যন্ত সমান থাকে। বালুর ঘড়ির মতো এ ক্ষেত্রেও তিনি এপি-মার্ক বিশ্লেষণ করতে পারলেন। হর্ভাট এমন ৩৬৩টি এপিজেনেটিক বালুর ঘড়ি খুঁজে পেয়েছেন। সেগুলোর গড় নির্ণয় করে মানুষের বয়স জানা সম্ভব। ভুলভ্রান্তির সম্ভাবনার পরিসর সর্বোচ্চ ৩ বছর ৫ মাস। হর্ভাট তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছে যাওয়া সত্ত্বেও কোন বৈজ্ঞানিক পত্রিকা তাঁর আবিষ্কারের খবর ছাপতে প্রস্তুত ছিল না। সেই ঘড়ির কথা বিশ্বাস করতে তাঁদের সম্ভবত সমস্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমি সেখানে গিয়ে বললাম, বয়স পরিমাপের মানদ- খুঁজে পেয়েছি। যে কোন কোষের ওপর তা প্রয়োগ করা সম্ভব। এবং ফর্মুলাও হুবহু এক। মনে হলো আমি যেন কাল্পনিক ইউনিকর্ন বা একশৃঙ্গ জন্তুর বর্ণনা দিয়েছি এবং প্রাণিবিদ বলছেন, এমন কোন প্রাণীর অস্তিত্ব নেই, চলে যান।’ হর্ভাট দমে যাবার পাত্র নন। অবশেষে তিনি প্রকাশককে বোঝাতে পেরেছিলেন। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে পত্রিকায় তাঁর গবেষণামূলক লেখাটি প্রকাশিত হয়। ফলে বৈজ্ঞানিক জগতে আলোড়ন পড়ে যায়। স্টিভ হর্ভাট বলেন, ‘ঘড়ি দিয়ে শুরু হলো। কোন অণু বা জিন এই মুহূর্তে প্রভাব খাটাচ্ছে কিনা, এই ঘড়ি ব্যবহার করে তা বিচার করাই আমাদের লক্ষ্য।’ আমাদের বয়স বাড়ার রহস্যের এখনও কোন সমাধান পাওয়া যায়নি বটে, কিন্তু তার উপর থেকে প্রথম যবনিকা উঠে গেছে।
×