ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

১৮ শিশু পরিবারে অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

১৮ শিশু পরিবারে অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে

সমুদ্র হক ॥ বগুড়া সরকারী শিশু পরিবারসহ দেশের ১৮ টি শিশু পরিবারকে আরও আধুনিকায়ন করে অবকাঠামো নির্মিত হচ্ছে। মা বাবা হারা অনাথ শিশুদের জীবনমানের অধিকতর উন্নয়নের সঙ্গে একাডেমিক শিক্ষা ও কম্পিউটারসহ প্রয়োজনীয় কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করে তোলা এই প্রকল্পের লক্ষ্য। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সমাজসেবা অধিদফতর ও গণপূর্ত অধিদফতর। প্রকল্পে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২শ’ ৯৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে অতি পুরাতন বগুড়া সরকারী শিশু পরিবারে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৭ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরেই এই কাজ শুরু হবে। বগুড়া সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক সহিদুল হক খান জানালেন, ওই ১৮ টি সরকারী শিশু পরিবারের বিদ্যমান অবকাঠামো যেগুলো অতি পুরনো হয়ে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে তা ভেঙ্গে পুনর্নির্মাণ করা হবে। নতুন অবকাঠামো নির্মিত হবে আধুনিক নির্মাণ শৈলীতে। যেখানে শিশু পরিবারের নিবাসীরা (শিশু পরিবারে যারা থাকে তাদের পরিচিতি নিবাসী) নতুন ধরনের আসবাবপত্র পাবে। একই সঙ্গে কারিগরি প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে চলমান বিষয়ের সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি বিশেষ করে কম্পিউটারের বিভিন্ন কোর্স সংযুক্ত করা হবে। যাতে অনাথ শিশুরা বেড়ে ওঠার পর কাজের সংস্থান করে নিতে পারে। উপ পরিচালক জানান, অনেকেই এখনও জানে না সরকারী শিশু পরিবারে বৃদ্ধাশ্রম গড়ে তোলা হয়েছে। বগুড়া শিশু পরিবারে দুই বছর আগে ৬৫ বছরের উর্ধে নারীদের দশটি আসন সংরক্ষিত আছে। বয়স্কা নারী যারা নানা কারণে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন তারা শিশুদের মধ্যে আনন্দঘন পরিবেশে থেকে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকতে পারেন সে জন্য সরকার প্রতিটি শিশু পরিবারে বৃদ্ধাশ্রম চালু করেছে। বগুড়া শিশু পরিবার ১৯৮৪ সাল থেকে শুধু মেয়ে শিশুদের নিবাসী হওয়ার জন্য নির্ধারিত। এর আগে ছেলে শিশুরা থাকত। বগুড়া শিশু পরিবারে দেখা যায়, নিবাসীদের অনেকেই এখন উচ্চ শিক্ষা নিচ্ছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি নাচ গান নাটক খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় সুনাম কুড়িয়েছে। বগুড়া শিশু পরিবার ১৯৫৯ সালে কয়েকটি ঘর নিয়ে ফুলবাড়ি এলাকায় মহাসড়কের ধারে প্রতিষ্ঠা করা হয়। নাম ছিল সরকারী এতিমখানা। ১৯৬২ সালে ১৩ দশমিক ২২ একর জায়গার ওপর দ্বিতল অবকাঠামো নির্মিত হয়। নাম হয় সরকারী শিশু পরিবার। এর ভিতরে আছে বড় মাঠ, শিশু বিনোদনের স্থান, আম কাঁঠাল ও ফলফলাদির বাগান। তিনটি বড় পুকুর। যার একটি সান বাঁধা। ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত এই শিশু পরিবারে শুধু এতিম ছেলেদের নিবাসী করা হতো। বর্তমানে শিশু পরিবারে নিবাসীদের মোট আসন ১শ’৭৫। এর মধ্যে মেয়ে নিবাসী আছে ১শ’৬৩ জন। যারা প্রাক প্রাথমিক শ্রেণী থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করছে। নিবাসীরা ১৮ বছর পর্যন্ত সেখানে থাকতে পারে। কেউ উচ্চতর ডিগ্রী নিতে চাইলে তাদের সহযোগিতা দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানালেন নিবাসীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চায় গড়ে তোলা হয়। নাচ ও গানের শিক্ষকও আছেন। লেখাপড়ার জন্য কাছের কোন স্কুল ও কলেজ বেছে নেয়া হয়। তারা পাঠ শেষে ফিরে আসে। তাদের ইনডোর আউটডোর গেমসে পারদর্শী করে তোলা হয়। অবসরে এরা খেলে। ভাল বর পেলে নিবাসীদের বিয়ের ব্যবস্থা করা হয়। রোজগারের জন্য যে কারিগরি শিক্ষা পেয়েছে তার উপকরণ কিনে দেয়া হয়। বগুড়ার সমাজসেবা অধিদফতরের উপ পরিচালক সহিদুল ইসলাম খান জানালেন, এই শিশু পরিবারে বগুড়ার বাইরের জেলা থেকেও অনেক শিশু আসছে। বগুড়া শিশু পরিবার উন্নতমানের প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
×