ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অধিকাংশ বীমা কোম্পানির টালবাহানা;###;উল্টো কোম্পানিগুলো নানা অভিযোগে মামলা ঠুকে দিচ্ছে

ক্ষতিপূরণ আদায়ে হয়রানির শিকার গ্রাহক

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ক্ষতিপূরণ আদায়ে হয়রানির শিকার গ্রাহক

গাফফার খান চৌধুরী ॥ দেশের অধিকাংশ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহকদেরই ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য টাকা পেতে নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকরা অভিযোগ করেও উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পাচ্ছেন না। উল্টো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলো ক্ষতিপূরণের দাবিদার গ্রাহকদের বিরুদ্ধেই নানা অভিযোগে মামলা ঠুকে দিচ্ছে। গ্রাহকরাই ঘটনাটি ঘটিয়ে পরিকল্পিতভাবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে টাকা আদায় করার অপচেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করা হচ্ছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে দায়েরকৃত মামলাগুলোর অভিযোগে। দায়েরকৃত মামলাগুলো যাতে নিষ্পত্তি না হয়, এজন্য ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে আইনজীবীর মাধ্যমে তদবির করারও অভিযোগ উঠেছে। আইনজীবীদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন পর পর মামলার তারিখ পড়ছে। বছরের পর বছর ধরে মামলাগুলো আদালতে ঝুঁলছে। মামলার পেছনে ছুটতে ছুটতে অধিকাংশ গ্রাহকই শেষ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণের আশা ছেড়ে দিচ্ছেন। তাতে লাভবান হচ্ছেন বীমা কোম্পানি ও ওইসব কোম্পানিতে নিয়োজিত আইনজীবীরা। এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে তার গ্রাহকের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা এবং বহু গ্রাহক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির করা অভিযোগের তদন্ত করতে গিয়ে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনা মাহমুদা জনকণ্ঠকে জানান, এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পক্ষে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় আসামি করা হয় মোঃ আইয়ুব আলী (৪০) ও মোঃ লিটন মিয়া (৩১) নামের দুই ব্যক্তিকে। আইয়ুব আলী ঢাকার মোহাম্মদপুর থানাধীন মোহাম্মদীয়া হাউজিংয়ের ৪ নম্বর সড়কের ১৭২/বি নম্বর বাড়ির বাসিন্দা। তার পিতার নাম মৃত বাদশা মিয়া। বাড়ি ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন থানাধীন দেউলা শিবপুর গ্রামে। অপর আসামি লিটন মিয়ার পিতার নাম মোঃ আকবর আলী মৃধা। বাড়ি ভোলার বোরহানউদ্দিন থানাধীন স্কুলবাড়ি এলাকার মৃধাবাড়ি গ্রামে। তিনি মোহাম্মদপুর থানাধীন চাঁদ উদ্যানের মেইন রোডের ১০৩ নম্বর পলাশ মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামি আইয়ুব আলী পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের আদাবর থানাধীন লিংক রোড ব্রাঞ্চের মাধ্যমে ঋণ নিয়ে ১৮ লাখ টাকায় সিলভার কালারের ঢাকা মেট্রো-গ-২০-৭৯২৬ নম্বর এক্স করোলা একটি গাড়ি কিনেন। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল এক্সপ্রেস ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ঢাকার প্রিন্সিপাল ব্রাঞ্চ থেকে গাড়িটির ইন্স্যুরেন্স করিয়ে নেন। গাড়ির মালিকের দাবি, চালক লিটন মিয়া ২০১৬ সালের ১০ নবেম্বর রাত সাড়ে নয়টার দিকে খিলক্ষেত থানাধীন বিশ্বরোড ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কাছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ফুটপাথ ঘেঁষে গাড়িটি রেখে অদূরে একটি দোকানে চা পান করেন। চা পান শেষে যেখানে গাড়ি রেখেছিল, সেখানে গিয়ে দেখতে পান গাড়িটি নেই। ঘটনাটি গাড়ির মালিককে জানায় চালক। এ ঘটনার পাঁচ দিন পর গত ২০১৬ সালের ১৫ নবেম্বর খিলক্ষেত থানায় একটি চুরির মামলা করেন। পরবর্তীতে আইয়ুব আলীর খিলক্ষেত থানায় দায়েরকৃত গাড়ি চুরির মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান আদালতে ফাইনাল রিপোর্ট দাখিল করেন। এদিকে গাড়ির মালিক আইয়ুব আলী ও তার চালকের বিরুদ্ধে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে দায়ের করা মামলার বাদী ইকবাল হোসেনের পক্ষে আদালতে অভিযোগ করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, গাড়ির মালিক গাড়িটি উদ্ধারে মামলাটির তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কোন যোগাযোগ করেননি। এমনকি গাড়ির উদ্ধারের বিষয়ে মালিকের কোন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি। গাড়ির মালিকের সার্বিক পদক্ষেপ দেখে স্পষ্ট বুঝা যায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে উক্ত গাড়িটি আত্মসাত করার উদ্দেশ্যে চুরির নাটক সাজিয়েছেন। চুরির নাটক সাজিয়ে বীমা কোম্পানিটির কাছে থেকে প্রতারণামূলকভাবে বীমা ক্লেইম করে ক্ষতিপূরণ হিসেবে টাকা পাওয়ার চেষ্টা করছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত গাড়ির মালিক আইয়ুব আলী বরাবর নোটিস পাঠায়। নোটিসে আইয়ুব আলীকে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই আদালতে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য পেশ করতে বলা হয়। আইয়ুব আলী ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে লিখিতভাবে বিচারককে জানান, রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় গাড়ি চুরির বিষয়ে তার দায়েরকৃত মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। মামলার সর্বশেষ অবস্থাও তাকে জানিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে দায়েরকৃত মামলাটির বাদীর পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, কোম্পানি ইন্স্যুরেন্সকৃত গাড়ির ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি। কিন্তু গাড়িটি আদৌ চুরি হয়েছে কিনা তা স্পষ্ট নয়। গাড়িটির চালক কি উদ্দেশ্যে গাড়িটি সেখানে রেখেছিলেন তাও অস্পষ্ট। পরস্পর যোগসাজশে গাড়িটি চুরির নাটক সাজিয়ে আসামিরা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার আশা করেছিলেন বলে সার্বিক পর্যালোচনায় প্রতীয়মান হয়েছে। এরপর ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি আইয়ুব আলীর কাছে একটি লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। তাতে সাজানো চুরির ঘটনার মাধ্যমে কোম্পানির নিকট থেকে বীমা ক্লেইম পাওয়ার আবেদন প্রত্যাহার করার কথা বলা হয়। সেই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে চুরির নাটক সাজিয়ে ইন্সুরেন্স কোম্পানির নিকট থেকে প্রতারণামূলকভাবে বীমা ক্লেইম হিসেবে আর্থিক সুবিধা নেয়ার জন্য আসামিরা আবেদন করে অপরাধ করেছেন বলে আদালতের কাছে আবারও অভিযোগ করা হয় বীমা কোম্পানির তরফ থেকে। এমন অভিযোগের পর ঢাকার সিএমএম আদালত ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে দায়ের করা মামলার বাদী ইকবাল হোসেনের জবানবন্দী রেকর্ড করে। সেইসঙ্গে বাদি পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনেন। সবশেষে বিচারক জটিল এই মামলাটির প্রকৃত রহস্য উদঘাটনের জন্য পিবিআইকে দায়িত্ব দেন। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ হুমায়ূন কবির মোল্লা জনকণ্ঠকে জানান, মূলত আইয়ুব আলীর চালক লিটন মিয়া অবসরে গাড়িটি ভাড়ায় চালাতেন। ভাড়া থেকে আয় করা টাকার একটি অংশ পেতেন গাড়ির মালিক আইয়ুব আলী। যে রাতে গাড়িটি চুরি হয়, সেই রাতে চালক ধানম-ি থেকে একজন বিদেশীকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যান। বিমানবন্দর থেকে মোহম্মদপুর ফেরার পথে গাড়িটি রাস্তার পাশে রেখে চালক চা পান করেন। সেখান থেকেই গাড়িটি চুরি হয়। যদিও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে দায়ের করা মামলাটির বাদী ইকবাল হোসেনের দাবি, চুরির নাটক সাজিয়ে আসামিরা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে টাকা আদায়ের চেষ্টা করছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ির মালিক আইয়ুব আলী ও তার চালক লিটন মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে এবং তদন্তে গাড়িটি সত্যিকারভাবেই চুরি হয়েছে বলে তথ্য মিলে। মামলাটি তদন্তকালেই জানা যায়, চুরি যাওয়া ও বীমা ক্লেইম করা গাড়িটি ২০১৬ সালের ১৩ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানাধীন কাগমারী মোড়ে যাত্রী ছাউনির সামনে থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৪৮ বোতল ফেনসিডিলসহ পুলিশ উদ্ধার করে। এ ব্যাপারে কোটচাঁদপুর থানায় মামলা হয়। তদন্তাধীন মামলাটির আলামত হিসেবে জব্দ হওয়া গাড়িটি ঝিনাইদহ জেলার কোটচাঁদপুর থানার মালখানায় ছিল। গাড়িটি সচল রাখতে সেটি কোটচাঁদপুর থানা পুলিশ ব্যবহার করে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে গাড়িটি কোর্টের মালখানায় আছে। গাড়ির মালিক আইয়ুব আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, গাড়িটি নিতে নানা মহল তৎপর। এমন অপতৎপরতার কারণে একের পর এক নানা টালবাহানা চলছে। সেজন্য আজও তিনি গাড়িটি হাতে পাননি। গাড়ি চুরি হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গাড়ি উদ্ধারের পেছনে, থানা পুলিশ আর আদালতে দৌড়ঝাঁপ করতে করতে তার প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যা গাড়ির দামের চেয়েও সাত লাখ টাকা বেশি। তিনি বলেন, মামলা হওয়ার কারণে তিনি মাঝপথে গিয়ে আর থামতে পারছেন না। অন্যদিকে তিনি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকেও আজ পর্যন্ত একটি টাকাও পাননি। গাড়ির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে তার একপ্রকার পাগল হওয়ার যোগাড় হয়েছে। তারপরেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না। একদিকে গাড়ি পাওয়ার জন্য খরচ হচ্ছে। আরেক দিকে গাড়িটি যেহেতু ব্যাংক থেকে ঋণ করে কেনা, সেজন্য ব্যাংকে মাসিক কিস্তি হিসেবে ২১ হাজার টাকার বেশি দিতে হচ্ছে। ব্যাংকের কিস্তি দিতে দিতে আর গাড়ির পেছনে দৌড়াতে দৌড়াতে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকা তিন কাঠার প্লটটি বিক্রি করে দিতে হয়েছে। এখন তিনি একেবারেই নিঃস্ব। শুধু রাস্তায় নামতে বাকি। পিবিআইয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানান, আইয়ুব আলীর মামলাটি উদাহরণ মাত্র। তাদের কাছে বাংলাদেশের অধিকাংশ বীমা কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তার মধ্যে গ্রাহকদের একটি কমন অভিযোগ হচ্ছে, বীমা কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের ক্লেইম করা টাকা না দিতে নানা টালবাহানার অভিযোগ। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে বীমা কোম্পানিগুলোর মামলা দায়ের। গ্রাহকরা পরিকল্পিতভাবে ঘটনা ঘটিয়ে বীমা ক্লেইম করে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে বীমা কোম্পানিগুলো আদালতে মামলা ঠুকে দেয়। সেই মামলার তারিখ পড়ে অনেক দেরিতে। তার পেছনেও বীমা কোম্পানিগুলো টাকা খরচ করে। যাতে দীর্ঘ দিন মামলা ঝুঁলে থাকে আদালতে। এতে আইনজীবী আর বীমা কোম্পানিগুলোর লাভ। কারণ গ্রাহকরা মামলার পেছনে ঘুরতে ঘুরতে এক সময় স্বাভাবিক কারণেই হতাশ হয়ে পড়ে। টাকার আশায় ছেড়ে দেয়। যার সুবিধা পায় বীমা কোম্পানিগুলো ও আইনজীবীরা। এটি বীমা কোম্পানিগুলোর কমন কৌশলে হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত হয়ে গেছে। মূলত এসবই হচ্ছে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না করার কৌশল। তারই অংশ হিসেবে পরিকল্পিতভাবে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিটি গাড়ির মালিক ও তার চালককে চোর বানিয়েছে। গাড়ির মালিক ও তার চালকের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে গাড়ি চুরি করে বীমা ক্লেইম করে কোম্পানির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে বীমা কোম্পানিটির তরফ থেকে। এ ব্যাপারে মামলার বাদী ইকবাল হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জনকণ্ঠকে বলেন, তারা অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে থাকেন। পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে জানান, তাদের তদন্তে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির নানা অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। বিশেষ করে দেশের অধিকাংশ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি গ্রাহকরা বীমা ক্লেইম করে যে পরিমাণ টাকা দাবি করেন, তার চার ভাগের একভাগও অনেক সময় দেয় না। এটি ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর বড় ধরনের দুর্নাম। কোন গ্রাহক তার গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর স্বাভাবিক কারণেই গাড়িটি মেরামতের জন্য কারখানায় পাঠান। কারখানায় গাড়িটি মেরামত করতে এক লাখ টাকা খরচ হলে স্বাভাবিকভাবেই গ্রাহক মেরামতের টাকা বীমা কোম্পানির কাছে দাবি করেন। এরপর শুরু হয় কোম্পানিগুলোর হয়রানি। কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের বিরুদ্ধে এক ধরনের অভিযোগ আনেন। কোম্পানির তরফ থেকে জানানো হয়, তারা সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে দেখেছেন, এ ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি মেরামত করতে ৩০ হাজার বা ৪০ হাজার টাকার বেশি লাগে না। এর অর্থ হচ্ছে গ্রাহক বেআইনী বা অনৈতিকভাবে বীমা কোম্পানির কাছে বেশি টাকা দাবি করছেন। আর কিভাবে গাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হলো সে সম্পর্কেও গ্রাহকদের নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে। বেশিরভাগ সময়ই গ্রাহকের ভূলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে গ্রাহক ইন্সুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে বেশি টাকা পাওয়ার আশায় এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। আবার গ্রাহক মেরামত বাবদ খরচ করা টাকার ভাউচার দিলেও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির তরফ থেকে অভিযোগ করা হয়, মেরামতকারী কোম্পানি ও গাড়ির গ্রাহক যোগসাজশে ইচ্ছাকৃতভাবে বেশি বিল দেখিয়েছেন। নানা ঘোরপ্যাচে গ্রাহকদের নানাভাবে হয়রানি করার পর শেষ পর্যন্ত লাখ টাকার জায়গায় হয়তো ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা গ্রাহককে দেয়। এই কর্মকর্তা বলছেন, এতে করে দুদিকেই ক্ষতি হয়। এক ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ বা গ্রাহকদের খারাপ ধারণার জন্ম হয়। আবার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর এ ধরনের প্রতারণার কারণে গ্রাহকদেরও নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে যায়। প্রথম দফায় ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এ ধরনের প্রতারণার কারণে দ্বিতীয় দফায় কোন গ্রাহকের কোন কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হলে স্বাভাবিক কারণেই গ্রাহক প্রয়োজনের তুলনায় তিন গুণ বা কোন কোন ক্ষেত্রে চার গুণ বেশি টাকা দাবি করে থাকেন। কারণ গ্রাহকদের ধারণা জন্মে যায়, যা দাবি করা হবে, তার তিন বা চারভাগের একভাগ পাওয়া যাবে। এসব কারণে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিও যেমন তাদের গ্রাহকদের ওপর বিরক্ত, তেমন গ্রাহকরাও তাদের বীমা করা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ওপর বিরক্ত। মূলত এতে করে দেশের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এজন্য বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষের ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহক হওয়ার প্রবণতা তুলনামূলক অনেক কম। নেহায়েত প্রয়োজন না হলে সাধারণত কেউ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহক হন না। পিবিআই প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জনকণ্ঠকে জানান, শুধু এক্সপ্রেস নয়, এমন ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে দেশের অধিকাংশ ইন্সু্যুরেন্স কোম্পানির বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে। তারা সারাদেশে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি ও তাদের গ্রাহকদের দায়ের করা এমন বহু মামলার তদন্ত করেছেন। তদন্তে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর গ্রাহকদের ক্ষতিপূরণের টাকা না দেয়ার না টালবাহানার এমন চিত্র ওঠে এসেছে। তবে অনেক সময় গ্রাহক দ্বারাও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার তথ্য ওঠে এসেছে। তবে তা তুলনামুলকভাবে অনেক কম।
×