ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনপিএস মাদকের ট্রানজিট রুট বাংলাদেশ! আরও দুটি বড় চালান জব্দ, আটক ২

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

এনপিএস মাদকের ট্রানজিট রুট বাংলাদেশ! আরও দুটি বড় চালান জব্দ, আটক ২

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও এনপিএস নামে মাদকের বড় দুটি চালান ধরা পড়েছে। দুটি চালানে ৫৪০ কেজি এনপিএসসহ দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। চালান দুটি এসেছে গ্রীনটির প্যাকেটে গ্রীন টি বা সবুজ চা নামে। ঢাকায় ধরা পড়া চালানে ৩৩০ কেজি আর চট্টগ্রামে ধরা পড়া চালানে ২১০ কেজি মোট ৫৪০ কেজি এনপিএস বা খাত (ইথিওপিয়ান গাঁজা) বা আরবের সবুজ চা জব্দ হয়েছে। এ নিয়ে দেশে আটটি এনপিএসের চালান জব্দ হলো। চালানগুলোর মধ্যে সাতটিই জব্দ হয়েছে ঢাকায়। সব মিলিয়ে মাদকটির সঙ্গে জড়িত তিন জন গ্রেফতার হয়েছে। বুধবার রাতে উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশ উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টরের ১ নম্বর রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালায়। অভিযানে বাড়িটি থেকে উদ্ধার হয় ৩৩০ কেজি এনপিএস। সেগুলো চৌত্রিশটি কাগজের কার্টনে ভরে গুদামে রাখা হয়েছিল। মাদক মজুদের দায়ে গ্রেফতার করা হয় গুদাম মালিক মোঃ নাজমুল ইসলাম তালুকদার (৩৯) ও মাহবুবুর রহমান পলাশকে (৫১)। নাজমুলের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ থানার ঠাকুরজ্যাকান্দি গ্রামে। আর মাহবুবুর রহমানের বাড়ি পাবনার ঈশ্বরদী থানার শেরশাহ রোডে। তবে অপর একজন পলাতক রয়েছে। মূলত গার্মেন্টস পণ্য হিসেবে সেগুলো গুদামজাত করা হয়েছিল। বুধবারই বৈদেশিক ডাক বিভাগের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও ফেনীর ঠিকানায় আসা দুইটি পার্সেল পরীক্ষা করে ২০৮ কেজি এনপিএস জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মাদকগুলো গ্রীন টি বা সবুজ চা হিসেবে এসেছে। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কাস্টমস কমিশনার ড. এ কে এম নুরুজ্জামান জানান, ইথিওপিয়া থেকে জিয়াদ মোহাম্মদ চট্টগ্রামের হালিশহরের ইফতেখার হোসেনের নামে এক ব্যক্তির ঠিকানায় একটি পার্সেলে মোট তেরোটি কার্টন পাঠায়। আরেকটির গ্রাপক হিসেবে নাম লেখা আছে ফেনীর আরিফ এন্টারপ্রাইজ। এই ঠিকানায় তিনটি কার্টনে ৪৮ কেজি পণ্য আসার কথা ছিল। বৈদেশিক ডাক বিভাগের মাধ্যমে পাঠানো এসব পার্সেলে গ্রীন টি বা সবুজ চা এসেছে বলে জানানো হয়। গ্রীন টির বিষয়ে কড়াকড়ি থাকায় সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। পরে দেখা যায়, গ্রীন টির আড়ালে এসেছে মাদক। যে ঠিকানায় মাদক এসেছে ওই সব ঠিকানা ভুয়া। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বলছে, এনপিএস খাট বা খাত আবার মিরা নামেও পরিচিত। কেউ কেউ একে আরবের চা বলে থাকেন। এটি ইথিওপিয়ার গাঁজা হিসেবেও পরিচিত। মাদকটি আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে সোমালিয়া ও ইথিওপিয়ায় উৎপন্ন হয়। ইদানীং বিভিন্ন দেশে হেরোইন বা ইয়াবার মতো মাদকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে এই ভেষজ নেশার পাতা। চায়ের পাতার মতো দেখতে শুকনো ওই নেশাদ্রব্য মুখে নিয়ে চিবিয়ে বা পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া হয়। ওই পাতায় ক্যাথিনোন ও ক্যাথিন এ্যালকালয়েড থাকায় ইয়াবার মতোই নেশা হয়। এ ধরনের বিকল্প নেশাদ্রব্যগুলোকে চিহ্নিত করা হচ্ছে ‘নিউ সাইকোট্রফিক সাবসটেনসেস’ বা এনপিএস নামে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ চলতি বছরের ৩১ আগস্ট শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ডাক বিভাগের সর্টিং এয়ারপোর্ট অফিসের গোডাউন থেকে তেইশটি কার্টনে মোট ৪৬৮ কেজি এনপিএস জব্দ হয়। পরে ওই মাদকের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার তথ্য মোতাবেক আরেকটি অভিযানে ঢাকার কাকরাইল থেকে রাতেই আমদানি-রফতানিকারক ব্যবসায়ী দুবাই ফেরত মোহাম্মদ নাজিমকে গ্রেফতার করা হয়। নাজিমের তথ্য মোতাবেক শান্তিনগরে অভিযান চালিয়ে প্রায় চারশ’ কেজি এনপিএস উদ্ধার করা হয়। দুই দফায় চালানো অভিযানে মোট ৮৬১ কেজি এনপিএস জব্দ হয়। উদ্ধারকৃত মাদকের মূল্য প্রায় সোয়া কোটি টাকা। গত ৮ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ইউনিটের ভেতরে অবস্থিত ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আসা ১৬০ কেজি এনপিএস জব্দ করে ঢাকা কাস্টমস হাউস। ঢাকা কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার ওথেলো চৌধুরী জানান, এনএসআইর সহযোগিতায় গত ৬ সেপ্টেম্বর ভারত থেকে আসা জেট এয়ারওয়েজের একটি বিমানে চালানটি আসে। পণ্যগুলোর রফতানিকারকের নাম জিয়াদ মোহাম্মদ ইউসুফ, ঠিকানা আদ্দিস আবাবা, ইথিওপিয়া। আর আমদানিকারক হিসেবে লেখা রয়েছে রাজধানীর তুরাগ থানাধীন এশা এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। গত ১১ সেপ্টেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ফরেন পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পার্সেল হিসেবে আসা ১৬শ’ কেজি এনপিএস জব্দ করে সিআইডি। মাদকগুলো ৯৬ কার্টনে বিশটি ঠিকানায় গ্রীন টি নামে আনা হয়েছিল। বাংলাদেশকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে মাদকটি বিদেশে পাচার হওয়ার তথ্য মিলেছে। যদিও এখন পর্যন্ত কতটি চালান বিদেশে গেছে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন তথ্য মেলেনি। বাংলাদেশ হয়ে মাদকটির বেশ কয়েকটি চালান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ায় গেছে। এতদিন মাদকগুলো দেশে জনপ্রিয় গ্রীন টির প্যাকেটে করে আসত। ফলে সহজেই চালানগুলো পার পেয়ে গেছে। দেশে মাদকটির প্রবেশ ঠেকাতে আমদানি করা গ্রীন টির উপর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
×