ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ শেষতক বৃষ্টি নামল ঢাকায়। বুধবার গরমে ক্লান্ত শ্রান্ত দেহ। রাত গভীর হয়। ঘুম আসে না। আর তার পর হঠাৎ পরিবর্তন। একপশলা বৃষ্টি। বর্ষণ। শীতল হাওয়া। মুহূর্তেই মন কেমন নেচে উঠল। প্রশান্তির বৃষ্টিতে ভিজলেন অনেকেই। বারান্দায় দাঁড়িয়ে বাহিরের পানে হাত বাড়িয়ে দিলেন। তাতেই হিম শীতল একটা অনুভূতি। ঘরের পরিবেশও ঠা-া হয়ে গিয়েছিল। রাতের বৃষ্টি প্রভাব ফেলেছিল দিনের পরিবেশের উপর। বৃহস্পতিবার রোদ থাকলেও, গরম তেমন অনুভূত হয়নি। তাপমাত্রাও কমে গিয়েছিল। আশা করা হচ্ছে, সামনের দিনগুলোতে গরম আরও কমবে। অন্তত গত কয়েক দিন ধরে যে গরম দেশের মানুষকে আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল, সেটি আর স্থায়ী হবে না। এভাবে মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হলে স্বরূপে ফিরবে আশ্বিন। কুসুম কোমল রূপটা নিয়ে সামনে আসবে। এ মাস শেষ হলেই হেমন্ত। প্রিয় ঋতু হেমন্ত আসবে শীতের বার্তা নিয়ে। তারও আগে থেকে পরিবর্তনগুলো দৃশ্যমান হতে থাকবে। সে পরিবর্তন নিঃসন্দেহে উপভোগ্য হবে। আপাতত সেই অপেক্ষা। মহরমের কথায় আসা যাক। আজ শুক্রবার ১০ মহরম। পবিত্র আসুরা। প্রতি বছরই নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়। বহুকালের ধর্মীয় আচার এখন পুরান ঢাকার সংস্কৃতির অংশ। এ উপলক্ষে আজিমপুর ও ফরাশগঞ্জে মহরমের মেলা বসত। বিভিন্ন ইমামবাড়ায় মর্সিয়া, জারি ও লাঠি খেলা অনুষ্ঠিত হতো। এখন অনেক কিছুই আগের মতো নেই। তবে যা আছে, তা এখনও বেশ দৃশ্যমান। কোন কোন ক্ষেত্রে বিচিত্রও বটে। প্রতিবছরের মতো এবারও আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল মহরমের আনুষ্ঠানিকতা। ইসলামের ইতিহাস অনুযায়ী, হযরত মুহম্মদ (সাঃ) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন মহরম মাসের ১০ তারিখে কারবালা প্রান্তরে নিহত হন। নির্মম নিষ্ঠুর এই হত্যাকা-ের কথা আজও কেউ ভুলতে পারেননি। ইসলাম ধর্মাবলম্বী, বিশেষ করে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষেরা যারপরনাই আবেগাপ্লুত হন। কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনাবলী স্মরণ করেন তারা। বিয়োগান্তক ঘটনার স্মরণে পুরান ঢাকার হোসেনি দালান থেকে প্রতিবছর বের করা হয় স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের তাজিয়া মিছিল। এটি আসুরা পালনের অন্যতম প্রধান ও পুরনো অনুসঙ্গ। ধারণা করা হয়, হাজার বছর ধরে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাজিয়া মিছিল। শিয়াদের পাশাপাশি সুন্নি ধর্মে বিশ্বাসী মোগলরা মহরম পালন করত। ব্রিটিশ আমলে ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্যরা এ আয়োজনে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছেন। পাকিস্তান আমলে এগিয়ে আসতে দেখা গেছে অপেক্ষাকৃত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের। বর্তমানেও টিকে আছে তাজিয়া মিছিল। এবারও নির্ধারিত দিনের আগে থেকে ঢাকার বিভিন্ন রাস্তায় ছোটখোট মিছিল বের করা হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার আজিমপুর এলাকায় বিশাল মিছিল বের করতে দেখা যায়। মিছিলে ইমাম হোসেনের সমাধির অনুরূপ স্থাপনা বহন করা হয়। ইমাম হোসেনের ব্যবহার করা ঘোড়াটির নাম ছিল দুলদুল। ছিল দুলদুলের প্রতীকী উপস্থাপনা। ‘হায় হাসান, হায় হোসেন’ বলে মাতম চলছিল। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সবই প্রাক প্রস্তুতি। মূল আয়োজন আজ। আজকের কর্মসূচীতে অসংখ্য মানুষ অংশগ্রহণ করবেন। এই অংশগ্রহণ, নিজের মতো করে ধর্ম পালন নিরাপদ হোক। ভিন্ন প্রসঙ্গ টেনে শেষ করা যাক। রাজধানী শহরের আশপাশ দিয়ে বয়ে চলা তিন নদীর তীর ঘেঁষে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন রাস্তা। রাস্তা মানে হাঁটার পথ। দুই তীরে ২২০ কিলোমিটার হাঁটার পথ তৈরি করবে সরকার। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর তীরে অবৈধ দখল ঠেকানোর জন্য এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে নদী দূষণ রোধ ও নাব্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ৩৮তম সভায় এ তথ্য জানানো হয়। এরইমধ্যে তিন নদীতে ২০ কিলোমিটার হাঁটার পথ নির্মাণ করা হয়েছে। আরও ৫০ কিলোমিটার পথ নির্মাণ কাজ আগামী ৫ অক্টোবর শুরু হবে বলে জানানো হয় সভায়। বাকি ১৫০ কিলোমিটার পথ নির্মাণের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, উত্তম চিন্তা। শহর ঢাকাকে বসবাসের যোগ্য করতে এমন আরও নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ানের বিকল্প নেই। এই চিন্তা সফল হবে, ঢাকাবাসীর তাই প্রত্যাশা।
×