ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের সামনে আজ আফগান চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মাশরাফিদের সামনে আজ আফগান চ্যালেঞ্জ

মিথুন আশরাফ ॥ এশিয়া কাপ শুরুর আগেই আফগানিস্তান ক্রিকেটারদের কণ্ঠে শোনা গেছে, তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তখন এই কথাগুলো নিয়ে আলোচনা-সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে এমনভাবে হারিয়েছে আফগানিস্তান যেন অনেক শক্তিশালী দলই খেলছে। এভাবে খেলেই যদি চ্যাম্পিয়ন হয়ে যায় আফগানরা তাহলে কি আর আশ্চর্যের কিছু থাকবে! তর্ক হতেই পারে। আফগান ক্রিকেটাররা কিন্তু চ্যালেঞ্জ ছুড়েই যাচ্ছেন। যে কোন দলকে হারানোর কথা বলছেন। এই আফগানিস্তান দলটির বিপক্ষেই আজ খেলতে নামবে বাংলাদেশ। আবুধাবীর শেখ জায়েদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সাড়ে ৫ টায় শুরু হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচটি। বাংলাদেশ কি পারবে আফগানদের হারাতে? শ্রীলঙ্কার কাছে যদি আফগানিস্তান হেরে যেত তাহলে হয়তো প্রশ্নগুলো উঠত না। কিন্তু যখন আফগানিস্তান লঙ্কানদের পাত্তাই দিল না, ৯১ রানে হারিয়ে দিল, তখন বাংলাদেশ আফগানদের হারিয়ে দেবেই এমন উচ্চবাচ্য নেই। থাকারও কথা নয়। যতই শ্রীলঙ্কাকে ১৩৭ রানে উড়িয়ে দিক বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওপেনার তামিম ইকবাল খেলেছেন। শুধু খেলেনইনি, ব্যথা পাওয়ার পরও যখন শেষদিকে নেমেছেন; এক হাতে এক বল খেলেছেন তা বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের অনুপ্রাণিত করে তুলেছে। সেই অনুপ্রেরণা থেকে লঙ্কানদের উড়িয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে থাকছেন না তামিম। তার বদলে হয় নাজমুল হোসেন শান্ত, নয়তো মুমিনুল হককে দেখা যেতে পারে। শান্ত অথবা মুমিনুল যেই খেলতে নামবে তারা কি ফর্মের তুঙ্গে থাকা তামিমের অভাব পূরণ করতে পারবে? সেই প্রশ্ন থাকছেই। তামিম না খেললে দল স্বাভাবিকভাবেই একটু হলেও দুর্বল হয়ে পড়ে। সাকিব আল হাসান আবার শতভাগ ফিট নন। আঙ্গুলের ব্যথা নিয়ে খেলবেন ঠিক। কিন্তু পুরোদমে কি আর খেলতে পারবেন? এখানেও দুর্বলতাই ধরা পড়ছে। এরপর মুশফিকুর রহীম শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁজরে ব্যথা নিয়েই ১৪৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। এই ব্যথা নিয়ে প্রতিদিন কি মুশফিকের কাছ থেকে এমন ইনিংসই মিলবে? তামিম নেই। আছেন সাকিব ও মুশফিক। তবে এই দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের অবস্থা কাহিল বলা চলে! সেই সুযোগটি না আবার আফগানিস্তান নিয়ে ফেলে। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে। দলের ক্রিকেটাররা মানসিকভাবেও চাঙ্গা আছে। ‘সুপারফোর’ খেলাও নিশ্চিত হয়ে গেছে। তাই একটু নিশ্চিন্তও। আফগানিস্তানেরও একই অবস্থা। প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ‘সুপারফোরে’ খেলবে আফগানিস্তান। প্রথমবারের মতো গ্রুপপর্বের গ-ি অতিক্রম করেছে আফগানিস্তান। অবশ্য ২০১৪ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে খেলছে আফগানিস্তান। দ্বিতীয়বারেই ইতিহাসের সেরা সাফল্য কুড়িয়ে নিয়েছে। দলটিও এখন প্রতিনিয়ত জয়ের মধ্যেই আছে। দলের ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক শক্তি এখন অনেকগুণ বেড়ে গেছে। অভিজ্ঞ শাহজাদ, রহমত শাহ, আসগর স্ট্যানিকজাই, শহীদি, নবী, নজিবুল্লাহদের সঙ্গে তরুণ ইহসানুল্লাহ তো যে কোন দলের জন্যই আতঙ্কের হয়ে উঠেছেন। বোলিংয়ে তো রশিদ খান পুরোদস্তুর বিপজ্জনক! সঙ্গে মুজিব জাদরান, মোহাম্মদ নবী ও পেসার গুলবাদিন নাইবও আতঙ্ক। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে রহমত শাহ (৭২) ও ইহসানুল্লাহর (৪৫) অসাধারণ ব্যাটিংয়েই তো বড় স্কোর দাঁড় করানো গেছে। এরপর বল হাতে রশিদ, মুজিব, নবী, নাইবরা লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়া করে তুলেন। তাতে বড় জয় মিলে। লঙ্কানদের বিদায় করে ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশকে নিয়ে এক জয়েই ‘সুপারফোরে’ উঠে যায় আফগানিস্তান। তাতে দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে যে কোন দলকে হারানোর বিশ্বাস এসে পড়ে। রশিদ খান আগেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সম্ভাবনার কথা বিশ্বাসের সঙ্গে জানিয়েছিলেন। আফগানিস্তান চ্যাম্পিয়ন হতে পারে? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে এমন প্রশ্নে রশিদ বলেছিলেন, ‘অবশ্যই। আমাদের এটা (টুর্নামেন্ট) জেতার প্রতিভা ও দক্ষতা আছে। আমরা শুধু স্নায়ুচাপে না ভুগে মাথা ঠা-া রাখতে পারলেই হলো।’ সঙ্গে জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের শুধু খেলাটা উপভোগ করা দরকার এবং কার বিপক্ষে খেলছি এ চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আমাদের বল খেলা উচিত, বলের পেছনের খেলোয়াড়টিকে নয়। আমরা যদি চাপ সামলে সঠিক কাজটা করতে পারি, সঠিক সময়ে ভাল সিদ্ধান্ত নেই, এটাই ওদের ও আমাদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেবে। আমাদের ভাল প্রতিভা আছে, ভাল স্পিন বোলিং, ব্যাটিং ও ফাস্ট বোলিং। তারাই জিতবে, যারা চাপ সামলাতে পারবে। অবশ্যই সুযোগ আছে, আমরা যে কোন দলকে হারাতে পারি।’ সোমবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের ম্যাচসেরা রহমত শাহ একই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা ব্যালান্স দল। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে প্রমাণও করেছি। আমরা যে কোন দলের বিপক্ষেই জিততে পারি।’ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে রহমত এমন কথা বলেছেন। এমন আত্মবিশ্বাস বৃহস্পতিবার ম্যাচেও দেখা গেলে বাংলাদেশের বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে। এর আগে যে একবার (২০১৪ সালে) ওয়ানডে ফরমেটের এশিয়া কাপে খেলেছিল আফগানিস্তান, একটিমাত্র জয় পেয়েছিল। সেটি বাংলাদেশের বিপক্ষেই। আবার সর্বশেষ ম্যাচটি আবুধাবিতেই খেলেছে আফগানিস্তান। আফগানদের জন্য অনেক দিক দিয়েই ইতিবাচক প্রভাব আছে। তবে এটাও ঠিক। বাংলাদেশ দল যেদিন কোন মোমেন্টাম পেয়ে যায় সেদিন কোন দলই বাংলাদেশের সামনে কিছু না। তখন প্রতিপক্ষকে মাথানত করতেই হয়। লিটন কুমার দাস, মিঠুন, মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মিরাজদের ব্যাটিং আর মাশরাফি, মুস্তাফিজ, রুবেল, সাকিবদের দক্ষ বোলিং তা করতেই পারে। লড়াইয়ে এখন আফগানিস্তানকেও আজ মাথানত করাতে পারলেই হয়। আফগানিস্তান যে চ্যালেঞ্জ ছুড়ছে, সেই চ্যালেঞ্জ জিতে নিজেদের শক্তিমত্তা আফগানদের বুঝিয়ে দিতে পারলেই হলো।
×