ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সৌদিতে পাচার হওয়া মেয়েকে ফিরে পেতে দিনমজুর বাবার আকুতি

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সৌদিতে পাচার হওয়া মেয়েকে ফিরে পেতে দিনমজুর বাবার আকুতি

স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা ॥ সৌদি আরবে পাচার হয়ে যাওয়ার পর নির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েকে ফিরে পেতে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক দিনমজুর। বুধবার বেলা ১১টায় ওই দিনমজুর মিন্টু সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করে তার মেয়েকে ফিরে পেতে ও ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সদর উপজেলার মাগুরা কর্মকার পাড়ার দিনমজুর মিন্টু সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তার মেয়ে জান্নাতিকে (২২) হাসপাতালে ৪০ হাজার টাকা মাসিক বেতনে নার্সের চাকরি দেয়ার নাম করে গত পহেলা ফেব্রুয়ারি বাড়ি থেকে নিয়ে যায় প্রতিবেশী নাছিমা খাতুন। নাছিমা খাতুন ও তার সহযোগী খুলনা শহরের টুটপাড়ার কামরুজ্জামান ওরফে সোহাগ বাবু ঢাকার কলাবাগানের তানিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে জান্নাতিকে সৌদি আরবে পাঠিয়ে দেয়। সৌদিতে যাওয়ার পরপরই সেখানকার দালাল ফরহাদের মাধ্যমে সেখানকার সমুদ্র বন্দর ‘দাম্মাম খাবজি’-এর নিকটবর্তী দুম্বা খাটালের মালিক ‘হায়ান ম্যাডাম অরফা’-এর কাছে চার লাখ টাকায় বিক্রি করা হয় জান্নাতিকে। এর আগে প্রকৃত জন্মসনদ বাদ দিয়ে তালা উপজেলার নগরঘাটা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিপুর কাছ থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে জন্মসনদ সংগ্রহ করে পাসপোর্ট তৈরিতে ব্যবহার করে নাছিমা ও সোহাগ বাবু। প্রথম দিন থেকেই জান্নাতিকে ১০ থেকে ১১ জন পুরুষের সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়। অপারগতা প্রকাশ করায় সারা দিনে মাত্র একটি রুটি ও পানি খাইয়ে রেখে নির্যাতন চালানো হয়। সে যাতে বাড়িতে যোগাযোগ করতে না পারে সেজন্য তার মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। সম্প্রতি বাড়িওয়ালীর ইমো মোবাইল ফোন থেকে জান্নাতি তার ওপর নির্যাতনের কাহিনী পরিবারের সদস্যদের জানায়। এখানে শুধু সে নয়, বাংলাদেশী আরও বেশ কয়েক নারীকে সেখানে এনে একইভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে। গত ২৩ আগস্ট আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী দলের সদস্য খুলনার সোহাগ বাবু তাদের বাড়িতে এসে বড় মেয়েকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইতোপূর্বে দাবিকৃত এক লাখ টাকা ও পাসপোর্ট বই নিতে আসেন। ওই দিন কৌশলে তাকে ছেড়ে দিয়ে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে র‌্যাবের সহযোগিতায় গত ২৮ আগস্ট সন্ধ্যায় খুলনা সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে এসে এক লাখ টাকা ও বড় মেয়ের পাসপোর্ট দেয়ার কথা বলে সোহাগ বাবুকে আটক করা হয়। র‌্যাবের কাছে সোহাগ বাবুর স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পরদিন মাগুরার কর্মকারপাড়া থেকে দালাল নাছিমাকে গ্রেফতার করে সদর থানার পুলিশ। এ ঘটনায় তিনি বাদী হয়ে ২৯ আগস্ট রাতেই নাছিমা ও সোহাগ বাবুর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা চারজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক অনুপ কুমার দাস সোহাগ বাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন জানালেও নাছিমাকে রিমান্ডের জন্য আবেদন করেননি। অভিযোগ, বহু পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী হতে আপত্তি করায় ইতোমধ্যেই মেয়ের দু’স্তন, ঊরু, পা ও হাত গরম ইস্ত্রি দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
×