ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

তিয়াত্তর শতাংশ বন অভয়ারণ্য ঘোষণা

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

তিয়াত্তর শতাংশ বন অভয়ারণ্য ঘোষণা

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ বনকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে। তবে এ ঘোষণা করা হয়েছে বনের ওপর নির্ভরশীল জেলে ও বাওয়ালদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই। এ অবস্থায় জীবিকার অভাবে তিন মাস ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছে প্রায় ২০ হাজার মানুষ, যাদের অধিকাংশই জেলে পরিবারের সদস্য। উপজেলার বনসংলগ্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নদী ও খালের পাশে জেলেদের মাছ ধরার নৌকাগুলো পড়ে আছে। কোন কোন নৌকা রাস্তায় উঠিয়ে রাখা হয়েছে। এ সময় কথা হলে চরপাড়া গ্রামের জেলে আল আমিন বলেন, তিন মাস ধরে বনের মধ্যে নদীতে মাছ সংগ্রহ করতে যেতে পারছি না। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চলছিলাম বেশ কিছুদিন। এখন দাদনও মিলছে না। এখন আমার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের চার সদস্য নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। কীভাবে দাদনের টাকা ফেরত দেব তাও বুঝতে পারছি না। শরণখোলা চরপাড়া গ্রামের জেলে আল আমিন (৩৫) বলেন, পনের বছর বয়স থেকেই সুন্দরবন থেকে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি। গত ৩ মাস ধরে বনের মধ্যে মাছ সংগ্রহ করতে যেতে পারছি না। মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে চলছিলাম বেশ কিছুদিন। আমার উপর নির্ভরশীর পরিবারের চার সদস্য নিয়ে এখন খুবই সমস্যায় আছি। জেলে মামুন আকন (৩২) বলেন, সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের ৭৩ শতাংশ অঞ্চল অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হলেও চাঁদপাই রেঞ্জের মাত্র ১৮ শতাংশ এলাকাকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছে বনবিভাগ। অভয়ারণ্য ঘোষণার পর বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম। সেখানে সপ্তাহখানেক দিনমজুরের কাজ করছিলাম। এক ছেলে এক মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে গেলাম। স্যাররা বললেন ভর্তি নেয়া যাবে না। আপনারা এখানে এসেছেন কাজ করার জন্য আবার কখন চলে যাবেন। তাই আমরা ভর্তি নিতে পারব না। এরপর উপায়ন্তর না পেয়ে ফিরে এসেছি বাপের ভিটায়। চালিতাবুনিয়া গ্রামের জেলে রেজাউল (৩৬) বলেন, সুন্দরবন থেকে মাছ সংগ্রহ করে ভালভাবে জীবন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বনে যাওয়া বন্ধ হওয়ায় খুবই বিপদে পড়েছি। শরণখোলা বাজারের মৎস্য ব্যবসায়ী জালাল মোল্লা বলেন, মাছ আহরণের জন্য জেলেদের সুন্দরবনে পাঠাতে গেলে দাদন দিতে হয়। ওই দাদনের একটি অংশ পরিবারকে দিয়ে এবং বাকি অংশ জেলেরা সুন্দরবনে অবস্থানকালে ভোগ করার জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করে নিয়ে যায়। এ অবস্থায় শতাধিক জেলের কাছে আমার প্রায় ২১ লাখ টাকা দাদন দেয়া রয়েছে। আমার কাছেও অন্য বড় বব্যসায়ীরা টাকা পাবে। গত তিন মাস ধরে ব্যবসা বন্ধ। দিশেহারা হয়ে পড়েছি। সাউথখালী ইউনিয়ন পরিষদের ৯নং ওয়র্ডের সদস্য বাচ্চু মুন্সী বলেন, ৩ মাস ধরে স্থানীয় জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের জন্য কেউ কেউ ইতোমধ্যে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। যারা আছে তারাও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। এ অবস্থা থাকলে ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের জেলেদের বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন ১৯৭৪-এর ক্ষমতাবলে সুন্দরবন পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ অঞ্চলের ১ লাখ ৩৯ হাজার ৬শ’ নিরানব্বই হেক্টর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়। এ অবস্থায় সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল অনেকে বেকার হয়ে পড়ে। এসব বেকারকে পুনর্বাসনের জন্য ৪শ’ ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্প আসছে। যার মধ্যে ৫ বছর মেয়াদী লাইভলিহুড ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে ২শ’ ৫০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে, বনজীবীদের পুনর্বাসনের জন্য। আশা করছি এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জেলেদের বেকার সমস্যা সমাধান হবে।
×