ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামীকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়া;###;সম্ভাব্য প্রার্থীদের ছবি ৩-এর পাতায়

ঘাঁটি আগলে রাখতে একাট্টা আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে বিভক্তি ॥ বাগেরহাট

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ঘাঁটি আগলে রাখতে একাট্টা আওয়ামী লীগ, বিএনপিতে বিভক্তি ॥ বাগেরহাট

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন আর ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদ নিয়ে গাঢ় সবুজের জনপদ বাগেরহাট। এখানে সংসদীয় আসন চারটি। এ জেলায় আওয়ামী লীগের অবস্থান ‘শক্ত’ বলা হয়। তবে পাকিস্তান সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নীতি-নির্ধারক প্রভাবশালী মন্ত্রী সবুর খানের বাড়ি ছিল বাগেরহাটে। জামায়াত নেতা মাওলানা ইউসুফের বাড়িও এ জেলায়। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের একদিন পর বাগেরহাট ‘শত্রুমুক্ত’ হয়েছিল। তাছাড়া বিএনপির অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা নীতি-নির্ধারক আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান একাধিকবার এখান থেকে নির্বাচিত হয়ে বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এসব বিবেচনায় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, বাগেরহাট অত্যন্ত স্পর্শকাতর এলাকা। এখানে দলীয় ঐক্য এবং প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতার কোন বিকল্প নেই। বিশেষত ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের জন্য। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এ জেলার ৪টি সংসদীয় আসনের সবগুলোতেই বইতে শুরু করেছে নির্বাচনী হাওয়া। বড় দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নানা আঙ্গিকে গণসংযোগ করছেন। তাদের শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টার ও ব্যানার শোভা পাচ্ছে শহর ও গ্রামগঞ্জের প্রায় সর্বত্র। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এখন সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা, নানা হিসাব-নিকাশ চলছে। চলছে রাজনৈতিক নানা বিশ্লেষণ। তৃণমূল পর্যায়ে চায়ের টেবিলেও ঝড় বইছে। বিশেষ করে কে কোন আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পাচ্ছেন, কে মনোনয়ন পেলে ‘ভাল’ হয়- এসব আলোচনার যেন শেষ নেই। বাগেরহাট-১ (ফকিরহাট-মোল্লাহাট-চিতরমারী) ॥ তিনটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ সবক’টি সংসদীয় নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছে। গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ আসন থেকে বিজয়ী হন। একাধিক আসনে নির্বাচন করলে এবারও তিনি এখানে প্রার্থী হতে পারেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৭৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপি প্রার্থী এ্যাডভোকেট ওয়াহিজ্জামান দিপু। তিনি পান ৫৮ হাজার ৫৩৩ ভোট। পরে উপনির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর ভাইপো শেখ হেলাল উদ্দিন জয়লাভ করেন। এবারও আসন্ন নির্বাচনে জননেতা শেখ হেলাল উদ্দিন এখানে নৌকার একমাত্র কা-ারি। ব্যাপক উন্নয়নের কারণে এখানে তাঁর জনপ্রিয়তাও তুঙ্গে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মত দেন। তাদের ভাষায়, এ আসনে হেলাল উদ্দিনের কোন বিকল্প নেই। জয়ের ব্যাপারে তারা শতভাগ নিশ্চিত। অপরদিকে বাগেরহাট-১ আসনে মাঠে রয়েছেন বিএনপির একাধিক প্রার্থী। মাঠ পর্যায়ে এসব নেতারা দৃশ্যত গণসংযোগ শুরু না করলেও ব্যানার, পোস্টারের মাধ্যমে দলীয় প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক ছাত্রনেতা এ্যাডভোকেট শেখ ওয়াহিদুজ্জামান দিপু, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা শেখ মজিবর রহমান, বিএনপির নেতা ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা, রবিউল আলম রবি ও মঞ্জুর মোর্শেদ স্বপনের নাম শোনা যাচ্ছে। এছাড়া জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী) হতে প্রার্থী হিসেবে জাতীয় ওলামা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা এস এম আল জুবায়েদ, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের (হাত পাখা প্রতীকের) সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়ন প্রত্যাশী ফকিরহাট উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাস্টার ইদ্রিস আলী মির্জা ও মুজাহিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত আলীর নাম আলোচনায় রয়েছে। এদিকে বাম গণতান্ত্রিক জোটের পক্ষ থেকে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাইফুল হক অথবা সিপিবি নেতা কমরেড কাজী সোহরাব হোসেন এ আসন থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। বাগেরহাট-২ (সদর ও কচুয়া) ॥ জেলার ৪টি আসেনের মধ্যে এ আসনটি সবচেয়ে ‘স্পর্শকাতর’ বলে গণ্য করা হয়। জনশ্রুতি রয়েছে- পীর খানজাহান (র.) এর পুণ্যভূমি এ আসন থেকে জয়ী প্রার্থীর দল সরকার গঠন করে। বিগত দিনে হয়েছেও তাই। ফলে বড় দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ভোটের হিসাব-নিকাশ চলে বছরজুড়েই। কারণ এখানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বর্তমানে সংসদের বাইরে থাকা বিএনপির পাল্লা প্রায় কাছাকাছি। আসন্ন সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার যেন শেষ নেই। ব্যাপক উন্নয়ন হলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগে মত পার্থক্য রয়েছে। তবে যোগ্য প্রার্থী এবং দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করলে এ আসনটি এবারও আওয়ামী লীগের থাকবে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। অন্যদিকে জেলা বিএনপির কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ আছে বাগেরহাটে। এখানে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীও একাধিক। এ আসনে ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ছয়টি সংসদ নির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তিনবার আওয়ামী লীগ আর তিনবার বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনটি ছিল ব্যাপকভাবে বিতর্কিত। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ নির্বাচনে বাগেরহাট-২ আসন থেকে আওয়ামী লীগের শেখ আব্দুর রহমান নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে জয়লাভ করেন বিএনপির আ স ম মোস্তাফিজুর রহমান। ১৯৮৬ সালের ৭ মে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শেখ আব্দুর রহমান বিজয়ী হন। ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য হন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা মীর সাখাওয়াত আলী দারু মোস্তাফিজুর রহমানকে হারিয়ে জয়ী হন। এর আগে ওই বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য হন। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনে শেখ হেলাল উদ্দিনকে হারিয়ে জয়লাভ করেন বিএনপির এম এ এইচ সেলিম। ত্যাগী নেতা মীর সাখাওয়াত আলী দারু অসুস্থ থাকার কারণে তাঁর ভাই ৬৭-এর গণআন্দোলনের সময় রাকসুর ভিপি মীর শওকাত আলী বাদশা আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে জয়ী হন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আবার জয় লাভ করেন। আগামী সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ বদ্ধপরিকর। অন্যদিকে এটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম প্রচারিত হচ্ছে তাঁরা হলেন- বাগেরহাট প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দীন, তাঁর ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাগেরহাট পৌরসভার মেয়র খান হাবিবুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য মীর সাখাওয়াত আলী দারুর সহধর্মিণী ফরিদা আক্তার বানু ওরফে লুসী ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী ছাত্রলীগের সাবেক নেতা শেখ আলী আহমেদ খোকন। তবে বর্তমান সংসদ সদস্য বাদশার সঙ্গে এখানে দলের কিছু নেতার মতপার্থক্য আছে। সেটা প্রকাশ্যে দেখা না গেলেও অনেকের জানা। স্থানীয় অনেক নেতা মনে করছেন, সভাপতি শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দীনকে প্রার্থী করা গেলে বিজয় সহজ হবে। এ বিষয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা বলেন, বঙ্গবন্ধুর পরিবার আমাদের কাছে আদর্শের প্রতীক। শেষ আশ্রয় স্থল। এ পরিবারের যে কোন সদস্য আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসার পাত্র। যদি এ পরিবারের কেউ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হন, তবে আমি হব তাঁর প্রস্তাবক। মূল কথা হলো- নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা। যিনিই নৌকা পাবেন- সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর জন্য সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করব। এখানে নৌকা জিতবেই বলে তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন। বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামরুজ্জামান টুকু দাবি করেন, দলে কোন বড় ধরনের বিরোধ নেই। আওয়ামী লীগ একটি বিশাল রাজনৈতিক দল। এ জন্য দলের মধ্যে মতপার্থক্য থাকতে পারে। তবে সেটা কখনও সংঘাতের দিকে যায়নি। তাঁর ভাষায়, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন, তিনিই নির্বাচিত হবেন। জেলার ৪টি আসনে এবারও আওয়ামী লীগ বিজয়ী হবে। বিএনপির প্রার্থীরা বাগেরহাটে সুবিধা করতে পারবেন না। ভোটারদের কাছাকাছি অবস্থান, এলাকার ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন এবং সাংগঠনিকভাবে দলকে এগিয়ে নিতে চেষ্টার কথা উল্লেখ করে মীর শওকাত আলী বাদশা মনে করেন, কাজের মূল্যায়নে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁকে আবারও মনোনয়ন দেবেন। আর দল যদি অন্য কাউকে মনোনয়ন দেয় সে ক্ষেত্রেও দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে তিনি মনেপ্রাণে সর্বাত্মক কাজ করবেন বলে জানান। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র খান হাবিবুর রহমান বলেন, এ আসনে জননেতা শেখ হেলাল উদ্দীন প্রার্থী হলে বিজয় নিশ্চিত হবে। ফরিদা আক্তার বানু লুসী বলেন, তাঁর স্বামী মীর সাখাওয়াত আলী দারু তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন। পেছনে থেকে তিনি স্বামীকে নানাভাবে সহযোগিতা এবং উৎসাহ জুুগিয়েছেন। তাঁর ভাষায়, আওয়ামী লীগের জন্য আমাদের গোটা পরিবার সব সময় নিবেদিত। তবে এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে বাগেরহাট জেলা বিএনপির সভাপতি শিল্পপতি এম এ সালাম এবং জেলা বিএনপির সহসভাপতি মনিরুল ইসলাম খানের নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির ত্যাগী নেতারা বলছেন, জিয়া ও খালেদা জিয়ার মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলের প্রভাবশালী নেতা মোস্তাফিজুর রহমানের মৃত্যুর পর বাগেরহাটে বিএনপি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলতে থাকে। পরে শিল্পপতি এম এ এইচ সেলিম দলের হাল ধরেন এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবে তখন ত্যাগী নেতাদের যথাযথ মূল্যায়ন না করায় অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন, যার প্রভাব এখনও বিদ্যমান। এখন জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সেলিমের ভাই এম এ সালাম। কিন্তু তিনি দলের অনেক নেতারই ক্ষোভ এখনও দূর করতে পারেননি। অবশ্য সালাম বলেন, তিনি দল এবং দলের নেতাকর্মীদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। যারা প্রকৃতই জিয়ার আদর্শের সৈনিক তাদের ঐক্যবদ্ধ করা হয়েছে। দলে কাক্সিক্ষত পদ না পেয়ে দু-একজনের হয়তো ভিন্নমত থাকতে পারে। নির্বাচন ঘনিয়ে এলে দলের মধ্যে কোন বিরোধ থাকবে না বলে তিনি মনে করেন। ২০০৮ সালের মতো আসন্ন নির্বাচনে আবারও দল তাঁকে মনোনয়ন দেবে বলে তিনি আশাবাদী। জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মনিরুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সব সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আছি। বিএনপির রাজনীতি করার কারণে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার আসামি হয়েছি। এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন, দলীয় প্রচার, গণসংযোগ এবং সামাজিক কর্মকা- চালিয়ে যাচ্ছি। দলের কাছে মনোনয়ন চাইব এবং দল মনোনয়ন দিলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হবো বলে আশা করি। এদিকে জাতীয় পার্টির (এরশাদ) বাগেরহাট জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজরা শহীদুল ইসলাম বাবলু দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এরশাদের কথা বিবেচনা করে সাধারণ মানুষ তাঁকে ভোট দেবে বলে তিনি মনে করেন। সিপিবির বাগেরহাট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফররুখ হাসান জুয়েল এ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। তিনি একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব। জুয়েল বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। দল যাকে যে আসনে মনোনয়ন দেবে তিনিই দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে তিনি জানান। বাগেরহাট-৩ (রামপাল ও মংলা) ॥ এই আসনে বর্তমান এমপি খুলনা সিটি কর্পোরেশনের সদ্য নির্বাচিত মেয়র তালুকদার আবদুল খালেকের সহধর্মিণী হাবিবুন নাহার। তালুকদার আব্দুল খালেক এ আসন থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তালুকদার আব্দুল খালেক ‘আধুনিক রামপাল-মংলার জনক’ বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন। এখনও এই এলাকায় রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, খুলনা-মংলা রেললাইন নির্মাণ, খানজাহান আলী বিমানবন্দর, মংলা বন্দরের আধুনিকায়নসহ প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকার কয়েকটি মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে হাবিবুন নাহার এখানে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য একক প্রার্থী থাকবেন বলে অধিকাংশ নেতাকর্মীরা মত দেন। তাঁদের মতে, এখানে আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত। তবে আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আবু হানিফ, ব্যারিস্টার ওবায়েদুর রহমান, শেখ ইকবাল লতিফ সোহেল, চিত্রনায়ক শকিল খানও মাঠে রয়েছেন। তাঁদের শুভেচ্ছা সংবলিত পোস্টার, ব্যানার এলাকায় শোভা পাচ্ছে। এ আসনে ’৯১ থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সবকটি নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি। বিএনপির হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়ে এই আসনে ব্যাপক গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম। এ ছাড়া মংলা পৌরসভার মেয়র ও জেলা বিএনপি নেতা জুলফিকার আলী, হাফিজুর রহমান তুহিনও দলীয় টিকেট পেতে তৎপর বলে শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে জেলা জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির এ্যাডভোকেট শেখ আবদুল ওয়াদুদ ‘স্বতন্ত্র’ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করতে পারেন বলে জানা গেছে। বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) ॥ এই আসনে দলীয় মনোনয়ন পেতে বর্তমান এমপি ডাঃ মোজাম্মেল হোসেনের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য এবং মোরেলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কেন্দ্রীয় নেতা এ্যাডভোকেট আমিরুল আলম মিলন এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগও বেশ তৎপর। আওয়ামী লীগ নেতা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জামিল হোসাইন এবং মোরেলগঞ্জের প্রাক্তন উপজেলা চেয়ারম্যান সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী প্রবীর হালদারও মাঠে রয়েছেন। তাঁরা সকলেই জনসংযোগসহ বেশ বড় বড় সভা সমাবেশও করছেন। ত্যাগী নেতা হলেও বয়সের ভারে এখন কিছুটা ন্যুব্জ হয়ে পড়েছেন এমপি ডাঃ মোজাস্মেল হোসেন। তাই দলের তরুণ নেতৃত্ব এলাকায় সাড়া ফেলেছে। তবে বাগেরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্ষীয়ান নেতা আলহাজ ডাঃ মোজাস্মেল হোসেন মনে করেন, এবারও তিনি দলীয় মনোনয়ন পাবেন এবং বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করবেন। নৌকার পক্ষে দলীয় সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন বলে তিনি আশাবাদী। বদিউজ্জামান সোহাগের সমর্থকরা বলেন, বৈবাহিক সূত্রে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদ মনিরুজ্জামান বাদলের জামাতা। তাঁর চাচা শ্বশুর শরণখোলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। ফলে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সোহাগ বাড়তি সুবিধা পাবেন। তাছাড়া তরুণ ভোটারদের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তাও অনেক। এ ব্যাপারে সোহাগ বলেন, মনোনয়ন পেলে তিনি সর্বস্তরের ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত ভোট পাবেন। দলও ঐক্যবদ্ধ থাকবে। জয়ের ব্যাপারে তিনি দৃঢ় আশাবাদী। আমিরুল আলম মিলন বলেন, ভোটরদের কথা বিবেচনায় আনলে তিনি মনোনয়ন পেতে পারেন। জয়ের ব্যাপারে তিনিও সুনিশ্চিত। প্রায় অনুরূপ মত দেন, জামিল হোসাইন এবং প্রবীর হালদার। এখানে কেন্দ্রীয় বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম দলীয় প্রার্থী হতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ ছাড়া জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান খান মতিয়ার রহমান, জেলা সহ-সভাপতি কাজী খাইরুজ্জামান শিপন ও বিএনপি নেতা ফরাজী মনিরুল ইসলামও দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট থাকলে এই আসনে এবারও জামায়াত থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে দলটির সংখ্যালঘু বিষয়ক উপদেষ্টা সোমনাথ দে এই আসনে জাপার একক প্রার্থী হিসেবে তৃণমূলে দীর্ঘদিন গণসংযোগ করছেন।
×