ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত-পাকিস্তান ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচ আজ

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

ভারত-পাকিস্তান ‘হাইভোল্টেজ’ ম্যাচ আজ

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ এশিয়া কাপে বহুল আলোচিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ আজ। এমনিতে বৈরী দু’দেশের মধ্যকার দ্বৈরথ ঘিরে ক্রিকেটপ্রেমীদের আগ্রহ অনেক। তার ওপর দীর্ঘদিন দ্বিপক্ষীয় সিরিজ বন্ধ থাকায় সেটি এখন আরও তীব্রতা পেয়েছে। ইংল্যান্ডে গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে বিরাট কোহলির ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জয় করে সরফরাজ আহমেদের পাকিস্তান। আরও একটি বৈষয়িক টুর্নামেন্টে এসে প্রতিশোধের সুযোগ রোহিত শর্মাদের সামনে। বিশ্রামে থাকায় এ মিশনে তারা পাচ্ছে না নিয়মিত অধিনায়ক ও বড় তারকা বিরাট কোহলিকে। তবে দলের আর সব নিয়মিত সদস্যকে নিয়ে ‘ডিফেন্ডিং’ চ্যাম্পিয়নরা বেশ শক্তিশালী। উইকেটের পেছনে নেপথ্যের সঞ্চালক হিসেবে আছেন দু’দুটি বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। অন্যদিকে নিজেদের দ্বিতীয় হোম ভেন্যু আরব আমিরাতে ব্যাটিং-বোলিং ও পারফর্মেন্স মিলিয়ে এবারের এশিয়া কাপের হট-ফেবারিট পাকিস্তানও চাইবে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ধরাশায়ী করতে। এশিয়া কাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাছাই খেলে আসা দুর্বল হংকংকে উড়িয়ে দিয়ে প্রস্তুতি সেরেছে সরফরাজের পাকিস্তান। অন্যদিকে মঙ্গলবার এ রিপোর্ট লেখার সময় সেই হংকংয়ের বিপক্ষে আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নেমেছে ভারত। প্রত্যাশিত জয় পেলে ‘এ’ গ্রুপ থেকে এরই মধ্যে ভারত-পাকিস্তান দু’দলেরই সুপারফোর নিশ্চিত হয়ে গেছে। সে অর্থে আজকের ম্যাচটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দু’দেশের জন্য মর্যাদার লড়াই। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায়। রাজনৈতিক বিরোধের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে দ্বিপক্ষীয় কোন সিরিজে অংশ নেয়নি ভারত ও পাকিস্তান। সর্বশেষ ২০১২ সালে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হয়েছিল দু’দল। ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত ঐ সিরিজটি ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল পাকিস্তান। এর আগে ২০০৭ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছিল ভারত ও পাকিস্তান। তাই আইসিসির টুর্নামেন্ট ও এশিয়া কাপ ছাড়া সচরাসচর মুখোমুখি হতে দেখা যায় না ভারত ও পাকিস্তানকে। ফলে এই দু’দলের ম্যাচের জন্য মুখিয়ে থাকে অগণিত ক্রিকেটপ্রেমীরা। অপেক্ষার পালা শেষ হচ্ছে। এশিয়া কাপ ক্রিকেটপ্রেমীদের অপেক্ষার ইতি টানতে যাচ্ছে। এবারের এশিয়া কাপে একই গ্রুপে পড়ে যায় ভারত ও পাকিস্তান। এমন ম্যাচের জন্য উত্তেজনা রয়েছে খেলোয়াড়দের মাঝেও। তাইতো মর্যাদার লড়াইয়ে জয়ের জন্য মুখিয়ে রয়েছে রোহিত-ধোনি ও সরফরাজ-মালিকরা। ভারতের হার্ডহিটার ওপেনার শিখর ধাওয়ান বলছেন, ‘এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। বিশেষ মর্যাদার ম্যাচ। ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই টান টান উত্তেজনা। সেই উত্তেজনা আমাদের মধ্যেও কাজ করছে। দুর্দান্ত একটি ম্যাচ হবে বলে আমার ধারণা।’ হংকং-এর বিপক্ষে ম্যাচের পরদিনই পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলতে হচ্ছে ভারতকে। পরপর দু’দিন দু’টি ম্যাচ রয়েছে তাদের। এই নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা অনেক হয়েছে। তবে পরপর দু’দিন ম্যাচ খেলতে কোন সমস্যা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন অনেকদিন পর সুযোগ পাওয়া ভারতের মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান আম্বাতি রাইডু। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় না পরপর দু’দিন ম্যাচ খেললে কোন সমস্যা হবে। কারণ আমরা পেশাদার খেলোয়াড়। তবে এটি ঠিক পরপর দু’দিন ম্যাচ খেলা অনেক কঠিন। পাকিস্তানের বিপক্ষে তরতাজা হয়েই মাঠে নামবে ভারত।’ হংকং-এর বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় জয়ে এশিয়া কাপ মিশন শুরু করে পাকিস্তান। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নিজেদের ভালভাবে ঝালিয়ে নেয়া গেছে বলে মনে করেন পাকিস্তানের মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান বাবর আজম, ‘ভালভাবেই টুর্নামেন্ট শুরু করতে পেরেছি আমরা। এই পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে আমাদের। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের আগে এমন জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ম্যাচ দিয়ে নিজেদের ভালভাবে ঝালিয়ে নেয়া গেছে। পরের ম্যাচে নিজেদের ভালভাবে প্রস্তুত আমরা।’ গেল বছর আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির গ্রুপপর্বের ম্যাচে ১২৪ রানে জিতেছিল ভারত। তবে ফাইনালে ভারতকে লড়াই করার সুযোগ দেয়নি পাকিস্তান। ১৮০ রানের বিশাল জয়ে শিরোপা জিতে নেয় পাকিস্তান। তাই এশিয়া কাপে পাকিস্তানের ওপর বাড়তি চাপ থাকবে বলে জানান দলের লেগস্পিনার শাহদাব খান। তিনি বলেন, ‘এ ম্যাচটি আমাদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সর্বশেষ মুখোমুখিতে আমরাই জয়ী হয়েছি। সেটি ছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল। তাই এ ম্যাচ জয়ের জন্য আমাদের ওপর চাপ থাকবে। কিন্তু আমরা সহজভাবেই ম্যাচটিকে নিচ্ছি। আশা করব পুরো দলই সেরা ক্রিকেটই খেলবে।’ নিয়মিত অধিনায়ক বিরাট কোহলিকে বিশ্রাম দিয়ে এশিয়া কাপে খেলতে এসেছে ভারত। তাই দলের নেতৃত্বে আছেন ওপেনার রোহিত শর্মা। তার ডেপুটি হিসেবে রয়েছেন ধাওয়ান। তবে ভারতের আসল ভরসা সাবেক অধিনায়ক ধোনি। অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে বসে আছেন তিনি। ৩২১টি ওয়ানডের মালিক ধোনি। তাই ভারতের মিডলঅর্ডার সামলানোর পুরো দায়িত্ব তার ওপর। মিডলঅর্ডার তার সঙ্গী হবেন লোকেশ রাহুল, রাইদু, দীনেশ কার্তিক ও কেদার যাদব। ভারতের বোলিং বিভাগের দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব ও যুজবেন্দ্র চাহাল দলের প্রধান ভরসা। পেস এ্যাটাক তরুণদের নিয়ে গড়া। সেখানে রয়েছেন ভুবনেশ্বর কুমার, জসপ্রিত বুমরাহ, শারদুল ঠাকুর ও নতুন মুখ খলিল আহমেদ। অন্যদিকে পাকিস্তানের মূলশক্তি তাদের বোলিং। বোলাররাই হংকং-এর বিপক্ষে পাকিস্তানকে সহজ জয়ের স্বাদ দেন। পেসার উসমান খান ৩টি, হাসান আলী ও শাহদাব ২টি করে উইকেট নেন। ফলে ১১৬ রানেই গুটিয়ে যায় হংকং। ১১৭ রানের টার্গেট স্পর্শ করতে ২৩ দশমিক ৪ বল খরচ করে পাকিস্তান। শুরুতে ফখর জামানের সঙ্গে রয়েছেন ইমাম-উল হক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ১১৪ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছিলেন জামান। সেটি ছিল তার ক্যারিয়ারের চতুর্থ ম্যাচ। অবশ্য ঐ ম্যাচের পরও নিজের সেরা ফর্ম ধরে রেখেছেন জামান। তাই ১৯ ম্যাচ শেষে তার গড় ৭২ দশমিক ৬০। যা জামানের আত্মবিশ্বাসের টনিক। বাবর আজম, মালিক, সরফরাজ, আসিফ আলি দলের মিডলঅর্ডার সামলাবেন। ভারতের বিপক্ষে ভাল ফল পেতে হলে এই মিডলঅর্ডারকে জ্বলে উঠতে হবে। অবশ্য তারা সকলেই পরীক্ষিত। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ১২৯ বার মুখোমুখি হয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের জয় ৫২টি। পাকিস্তানের ৭৩টিতে জয়। ৪টি ম্যাচ হয় পরিত্যক্ত। আর এশিয়া কাপে দুই দল মুখোমুখি হয়েছে মোট ১১ বার। সমান ৫টি করে জয়-পরাজয় দুই দলের। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত। আজ জয়ী দল ফের এগিয়ে যাবে। এরপর থাকবে সুপার ফোরের আরও একটি লড়াই।
×