ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সৌদি যুবরাজ কি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন?

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সৌদি যুবরাজ কি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন?

স্বনামধন্য শিল্পোদ্যোক্তা এলোন মাস্ক তাঁর বৈপ্লবিক কার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘টেসলা’কে প্রাইভেট কোম্পানিতে পরিণত করতে চান। তার জন্য বিপুল অর্থÑ শত শত কোটি ডলার প্রয়োজন। এই অর্থ তিনি কোথায় পাবেন? মাস্ক গত ১৩ আগস্ট নিজেই এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সম্ভবত সৌদি আরব থেকে। তাঁর মতো উদ্যোক্তাদের যখনই কারোর প্রয়োজন হয় তিনি সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মুখাপেক্ষী হন। সৌদি আরব দেশটিকে কার্যত এই যুবরাজ চালাচ্ছেন। তিনি জাপানের একটি টেক তহবিলে ৪৫০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। লোহিত সাগরের তীরে ৫০ হাজার কোটি ডলার ব্যয়ে এক অত্যাধুনিক নগরী গড়ে তোলার পরিকল্পনাও তার আছে। যুবরাজ বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে অর্থ বিনিয়োগ করতে চাইলে তাতে অসুবিধাই বা কোথায়? সতর্ক হবার একটাই কারণ আছে। যুবরাজ যা দেন হঠাৎ করে তা আবার ফিরিয়ে নেয়ার অভ্যাসও তাঁর আছে। সম্প্রতি কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী টুইটারে মন্তব্য করেছিলেন যে, শান্তিপ্রিয় বিরুদ্ধবাদীদের কারাগারে আটকে রাখা সৌদি আরবের উচিত নয়। কানাডার একজন রাজনীতিকের পক্ষে এ জাতীয় বক্তব্য দেয়া মোটেও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু যুবরাজ মোহাম্মদ গেলেন ক্ষিপ্ত হয়ে। টুইটের বক্তব্য অগ্রাহ্য করার পরিবর্তে তিনি প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নিলেন এবং সেটা বেশ অমার্জিত ও বর্বর কায়দায়। ছিন্ন করে ফেলল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য সম্পর্ক এবং সৌদি ছাত্রদের কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দিল। সেই সঙ্গে অসুস্থ সৌদিদেরকে কানাডার ক্লিনিকগুলো বর্জন করতে বলে দেখা হলো। সৌদির রাষ্ট্রীয় মিডিয়ায় কানাডার মানবাধিকারের রেকর্ড নিয়ে বিষোদ্গার করা হলো। সামাজিক মাধ্যমগুলোতে কানাডাকে একটি মাদকাচ্ছন্ন দেশ হিসাবে চিহ্নিত করা হলো। এলোন মাস্ক অর্ধেক কানাডীয়। তাঁকেও হুঁশিয়ার করে দেয়া হলো। যুবরাজ মোহাম্মদের এই আক্রোশে অমান্য কানাডার তেমন একটা ক্ষতি হবে না। কানাডার রফতানি পণ্যের মাত্র শূন্য দশমিক ২ শতাংশ গত বছর সৌদি আরবে গেছে। তবে এর আশু দুর্ভোগটা পোহাতে সৌদি ছাত্রদের যাদের অন্য একটা কলেজ অবশ্যই খুঁজে নিতে হবে। সৌদি রোগীরা যারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন কানাডায় তাদের অন্যত্র চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী বিচারে মূল ক্ষতিটা হবে সৌদি আরবের সুনামের। আর সেটাই হলো আসল পরিণতি। বিনিয়োগকারীরা ভবিষ্যত পরিস্থিতির ব্যাপারে একটা নিশ্চয়তা চায়। যুবরাজ মোহাম্মদ ঠিক উল্টোটাই দিচ্ছেন। সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ দেয়া হয়েছে গত বছর। তাও আবার বিনা হুঁশিয়ারিতে। সেই অবরোধের কারণে ঐ অঞ্চলে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাঘাত ঘটে চলেছে। এর কয়েক মাস পর দুর্নীতি দমন অভিযানের নামে শত শত সৌদি শাহজাদা ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ীকে তাদের সম্পদের একটা বড় অংশ সরকারকে সমর্পণ না করা পর্যন্ত রিয়াদের এক বিলাসবহুল হোটেলে আটকে রাখা হয়। যুবরাজ নানাভাবে সৌদি আরবের উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করছেন সন্দেহ নেই। তিনি ধর্মীয় ও সামাজিক বিধিনিষেধ শিথিল করেছেন। মেয়েরা গাড়ি চালাচ্ছে। সবাই সিনেমায় যেতে পারছে। সৌদি মহিলাদের বাইরের কাজে যেতে উৎসাহিত করছেন তিনি। তেলের উপর সৌদি অর্থনীতির নির্ভরশীলতা কাটিয়ে উঠতে সংস্কার কর্মসূচী অনুসরণ করছেন। এসব কারণে তিনি বিশেষ করে তরুণ ও মহিলাদের কাছে জনপ্রিয়তা লাভ করেছেন। তথাপি কিছু কিছু ভ্রান্ত ও নির্বোধের মতো পদক্ষেপ নিয়ে তিনি অকারণেই স্বদেশে সম্ভাবনাময় সমর্থকদের থেকে একঘরে হয়ে পড়েছেন। নারীদের কিছু কিছু অধিকার দিলেও যারা নারী অধিকারের জন্য আন্দোলন করেছেন তাদের কারাগারে আটকে রেখেছেন। তিনি অহেতুক বিদেশীদেরও দূরে ঠেলে দিয়েছেন। গত বছর সৌদি কর্তৃপক্ষ লেবাননের প্রধানমন্ত্রীকে কূটনৈতিকশিষ্টাচারের চরম লঙ্ঘন করে দু’সপ্তাহ আটকে রাখে। ইয়েমেনে সৌদিদের পরিচালিত প্রক্সিযুদ্ধে দেশটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। যুবরাজ মোহাম্মদ যে ভুল করছেন তা বলার মতো সাহস সৌদিদের কারোরই নেই। এর ফলে তার স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েই চলেছে। এটা সৌদি সমাজের জন্য মোটেই ভাল নয়। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকনোমিস্ট
×