ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এনামুল হক

রোহিঙ্গা নিধনের জন্য বর্মী জেনারেলরাই দায়ী

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রোহিঙ্গা নিধনের জন্য বর্মী জেনারেলরাই দায়ী

এক বছর আগে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানরা প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসতে শুরু করে। এর কারণ ছিল সুস্পষ্ট বর্মী সেনাবাহিনী সেখানে গণহত্যা ও জাতিনিধনের এক নারকীয় তা-বে মেতে উঠেছিল। অথচ মিয়ানমার সরকারের দিক থেকে সাফাই গাওয়া হয়েছে এই বলে যে রাখাইন রাজ্য থেকে ব্যাপক হারে লোক চলে যাওয়ার ব্যাপারটা ¯্রফে ভুল বুঝাবুঝি থেকেই সৃষ্টি হয়েছিল। জাতিসংঘের হিসেবে ওই সময় রাখাইন রাজ্য ৭ লাখ ২৩ হাজার লোক বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। বর্মী সেনাবাহিনী আরও সাফাই গায় যে তারা শুধু পুলিশ ফাঁড়ির উপর হামলা পরিচালনাকারী জঙ্গী রোহিঙ্গাদের খুঁজছিল। সামরিক বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতনের মিথ্যা গুজবে আতঙ্কিত হয়ে গ্রামবাসীরা দলে দলে সীমান্তের দিকে পালিয়ে যায়। বর্মী সেনাবাহিনীর এই আবোলতাবোল বক্তব্যের জবাবে গত ২৪ আগস্ট জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বক্তব্য পেশ করে। ৮৭৫ জনের সাক্ষাতকার নেয়াসহ এক বছর ধরে তথ্যানুসন্ধানের পর প্রকাশিত এক রিপোর্টে কমিশন জোর দিয়ে বলে যে সেনাবাহিনী এক সংগঠিত হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল যার ফলে ১০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা প্রাণ হারায়। রিপোর্টে বলা হয় সবচেয়ে জঘন্য বিষয় হল এমন প্রমাণ পাওয়া গেছে যে সেই সহিংসতা ছিল পূর্ব পরিকল্পিত এবং তা গণহত্যার সমতুল্য। রিপোর্টে আরও বলা হয় সিনিয়র জেনারেলদের যুদ্ধাপরাধের জন্য বিচার হওয়া উচিত। বিশ্ববাসীর অভিযোগ, বর্মী সেনাবাহিনী গণহত্যা করে পার পেয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন দুঃখ প্রকাশ করে বলেছে যে মিয়ানমারের শাসকরা বিশ্ববাসীর অভিযোগকে অস্বীকার করে বলেছে যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তারা তাদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের কার্যত নেতা অং সান সুচি অভিযোগ তদন্তের নামে যে কমিটি গঠন করেছেন তা এক প্রহসনের কমিশন। শুধু যেসব সৈন্যকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তারা হল ৭ পদাতিক সৈন্য যাদেরকে রয়টার্সের এক বিস্তারিত রিপোর্টে গণহত্যায় জড়িত বলে দেখানো হয়েছিল এদিকে রয়টার্সের সংশ্লিষ্ট যে সাংবাদিকরা রিপোর্টটি প্রণয়ন করেছিলেন তাদেরকে গোপন দলিল হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ বর্মী সরকার বিচারের কাঠগড়ায় তুলেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে বর্মী বাহিনীর নৃশংসতার বিষয়ে চীন ও রাশিয়া মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে। আর পশ্চিমা দেশগুলোর ভূমিকাও তেমন বলিষ্ঠ নয়। মিয়ানমার সরকারের সমর্থকরা জোর দিয়ে বলে যে এ বিষয়ে বিদেশী বা স্থানীয় কারোর পক্ষেই তেমন কিছু করতে যাওয়া প্রায় অসম্ভব কেননা বর্মী সেনাবাহিনী নিজেই একটি আইনে পরিণত হয়েছে। দেশটিতে মাত্র দুবছর আগে বেসামরিক সরকার কায়েক হয়েছে। তবে সেটা হয়েছে এমন এক শাসনতন্ত্রের অধীনে যেখানে অভ্যন্তরীণ ও নিরাপত্তার সকল বিষয় সেনাবাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীনে। তাছাড়া সাধারণ বর্মীরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বৌদ্ধধর্মের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখে। আর সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সুচিরও নেই। তেমন কিছু করতে গেলে তার নিজের অবস্থানই নড়বড়ে হয়ে যাবে। সেই একই মানদ-ে পাশ্চাত্য দেশগুলোর সেনাবাহিনীর এমন আচরণের জন্য মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেছে সে দেশের নাজুক গণতন্ত্র আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে এবং পরিণতিতে বার্মাকে চীনের বাহুতে ঠেলে দেয়া হবে। যুক্তিগুলো শুধু যে ন্যয়বিচার পরিপন্থী তাই নয় উপরন্তু সেগুলো ভ্রান্ত ও বটে। রোহিঙ্গাদের ওপর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে না দাঁড়ালে গণতন্ত্রের যে প্রসার ঘটবে তা নয়। উপরন্ত জেনারেলদের এমন ধারণা হবে যে দেশটির অন্যান্য অংশে যেসব জাতিগত বিদ্রোহ দমনে তারা লড়ছে সে সব স্থানে তারা যা খুশি করে পার পেয়ে যাবে। জাতিসংঘ রিপোর্ট অনুযায়ী সেনাবাহিনী শান ও কাচিনদের বিরুদ্ধে লড়াইয়েও ব্যাপক নৃশংসতার আশ্রয় নিচ্ছে। এমন ধারণা বিশ্বাস করার কান আছে যে জেনারেলদের ওপর চাপ দেয়া হলে তারা স্বীকার বাধ্য হবে। ২০১৬ সালে আরোপিত আন্তর্জাতিক অবরোধে সেনাবাহিনীকে সরকার পরিচালনা থেকে সরে যেতে একটা ভূমিকা পালন করেছিল। বিদেশী সরকার চাইলে আরও অনেক কিছুই করতে পারে। জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে বর্মী জেনারেলদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালত কিংবা একটা এডহক ট্রাইব্যুনালে বিচারের সুপারিশ করা হয়েছে বিধায় নিরাপত্তা পরিষদ সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারে। চীন ভেটো দিলে দিক। তারপরও চাপ প্রয়োগ করার আরও অনেক উপায় আছে। সূত্র: দি ইকোনমিস্ট
×