ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

মুক্তিযুদ্ধে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার

(গতকালের পর) পাকিস্তানের জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সামরিক সরকার যুদ্ধক্ষেত্রে ও রণাঙ্গনে আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে আর টিকে উঠতে না পেরে শেষ পর্যন্ত কূটকৌশল হিসেবে রাজনৈতিকভাবে আঘাত হানার জন্য তথাকথিত কনফেডারেশন জাতীয় কিছু একটা জগাখিচুড়ি পরিকল্পনা সামনে এনে বাঙালী মীরজাফর রাজনীতিবিদদের নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক ও পদপদবির প্রলোভন দেখিয়ে অনৈতিকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা হীন প্রচেষ্টা ও কূটকৌশল গ্রহণ করার চেষ্টা করছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম সেগুলো সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরে বিশ্বব্যাপী নানা গণমাধ্যমের সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট দেশের নেতা-নেত্রীদের কাছে তুলে ধরার সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করার সপক্ষে। কাজটি দক্ষতার সঙ্গে কার্যকরভাবে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশ মিশনের সহায়তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা বাঙালী কূটনীতিক এবং স্থানীয় গণ্যমান্য বাঙালী প্রফেসর/ ডাক্তার/ ইঞ্জিনিয়ার/ ব্যবসায়ী প্রভৃতি ব্যক্তিদের সহায়তা গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ ব্যাপারে আমাদের সরকারের তরফ থেকে ভারত সরকারকে অনুরোধ করা হয় তাদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দেশের রাজধানীতে অবস্থিত দূতাবাসগুলোকে এ ব্যাপারে সবধরনের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদানের জন্য। ওই বছর নবেম্বর মাসে আমরা কয়েকজন সহকর্মী ও বন্ধু মিলে ঈদ করতে কলকাতার কাছেই কল্যাণী শহরে গেলে সেখানে দেখা হয় আমার এক স্কুল বন্ধু নিখিলের সঙ্গে। সে স্কুল জীবন শেষ করে বাবা-মার সঙ্গে চলে যায় ভারতে এবং শিক্ষা জীবন শেষ করে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে সাংবাদিকতা। দিল্লীতে কয়েক বছর কাজ করে নবেম্বর মাসেই বদলি হয়ে আসে কলকাতায়। কথা প্রসঙ্গে নিখিল (নিখিল চক্রবর্তী) জানায় যে, তোমাদের একজন মন্ত্রী ও তার কয়েকজন সহযোগী কলকাতার আমেরিকান কনসাল জেনারেলের সঙ্গে পাকিস্তানের সঙ্গে তোমাদের কনফেডারেশন গঠন করার গোপন প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার বিষয়টা ছিল তোমাদের মুক্তিযুদ্ধের একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাÑ যা ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দ্রুত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে চোখ খুলে দিয়েছিল। নিখিলের বক্তব্য ছিল যে, এই ঘটনার পরেই মিসেস গান্ধীর কাছে বাংলাদেশ ইস্যু হয়ে যায় ‘টপ প্রায়োরিটি’। তিনি শুধু ব্যক্তিগত দূত পাঠিয়ে বিষয়টি আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদকে অবহিত করেননি। মূলত এটার কারণেই পরবর্তীকালে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ সফর করে মিসেস গান্ধী বাংলাদেশ পরিস্থিতি ও মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি বিষয়ে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে তুলে ধরেন। তার আলোচ্য বিষয়ে তৎকালীন পাকিস্তানের ১৯৭০ সালের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করা দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বিচার কার্যক্রমের প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেন গুরুত্বসহকারে। ফলে বঙ্গবন্ধুর বিচার প্রক্রিয়া এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ‘কনফেডারেশন’ গঠনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রও ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যায় তৎকালীন পাকিস্তানের মেঘাচ্ছন্ন রাজনৈতিক আকাশ থেকে। প্রকৃতপক্ষে বাংলার মীরজাফর নামে পরিচিত বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক ও তার সহযোগীদের দ্বারা তৎকালীন পাকিস্তানী সামরিক জান্তাদের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে তথাকথিত কনফেডারেশন গঠন শীর্ষক ষড়যন্ত্রের রূপরেখা উন্মোচিত হওয়ার পর থেকেই মুজিবনগর সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক ও সামরিক এবং বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ, সচিব ও অন্যান্য বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা এবং সংশ্লিষ্ট সকলেরই চোখ-কান খুলে যায় প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে সাবধানতা অবলম্বনের জন্য এবং প্রয়োজন হলে নতুন নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার প্রস্তুতি গ্রহণের দৃঢ় প্রত্যয়ে। মুজিবনগর সরকারের তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনী উপ-প্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকার মূলত যার টেবিলেই আমরা গোল হয়ে বসে কাজ করতাম। মাঝে মাঝেই আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলাপ-আলোচনায় বসতেন। তবে সেক্টর কমান্ডারদের হেড কোয়ার্টার পরিদর্শনের মাত্রাও বেড়ে গিয়েছিল পূর্বের চেয়ে অনেক বেশি। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপ-সচিব আকবর আলি খান যাকে আমরা আমাদের সহপাঠী হওয়ার কারণে তার পা-িত্যপূর্ণ জ্ঞানের গভীরতা এবং বিশ্লেষণধর্মী মন ও মানসিকতা বিষয়ে অবহিত ছিলাম। আমরা জানতাম তিনি ইতিহাসের ছাত্র এবং তিনি বিশ্বাসঘাতকদের চূড়ান্ত পর্যায়ে কি পরিণতি হয়ে থাকে সেরূপ অনেক কাহিনী মাঝে মধ্যে সে পড়েন। তিনি কথা কম বলতেন। তবে তার বিশ্লেষণ আমরা সবাই খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম। আমাদের সহকর্মী কবি আল মাহমুদ ও বিশ্বাসঘাতকদের নিয়ে অনেক রম্যরচনা ও কবিতা শেখাতেন তার মুড যখন ভাল থাকত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং ওই সময়ে মুজিবনগর সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কর্মযজ্ঞ ড. বেলায়েতও আমাদের কাজে তার সংশ্লিষ্টতা আরও বেশি পরিমাণে বাড়িয়ে দেন যদিও তিনি কথা বলতেন খুব কম। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর অফিসে চিফ অফিসার হিসেবে কর্মরত মেজর নুরুল ইসলাম ও প্রতিরক্ষা সচিব এবং গ্রুপ ক্যাপ্টেন একে খন্দকারের সঙ্গে অনেক বিষয়ে আলোচনা করার জন্য আসতেন আমাদের অফিসে। আর মাঝে মধ্যে আসতেন মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী। আমরাও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সেক্টরে মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মতৎপরতা ও যুদ্ধের অগগ্রতি বিষয়ে অনেক কিছু জানতে সক্ষম হতাম। ফলে তারা যুদ্ধবিষয়ক নানা তথ্য দিতে আমাদের সহায়তা করতেন না। তাদের অনেক বিশ্লেষণমূলক উপদেশ ও নির্দেশনায় আমাদের খুব কাজে আসত ভবিষ্যত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নে। এদের কেউ একজন হয়ত কোনদিন কোন সময়ে নানা বিষয়ে কর্নেল এমএজি ওসমানীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনার সময়ে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার বিষয়ে কথাবার্তা বলার সময়ে আমার কথা উল্লেখ করে থাকতে পারেন। একদিন হঠাৎ করে তৎকালীন ক্যাপ্টেন নূর আসল অফিসে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য। ক্যাপ্টেন নূর নিজেকে কর্নেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে পরিচয় দিয়ে নানা বিষয়ে কিছুক্ষণ কথা হলো এবং পরেরদিন আমাকে একটা নির্ধারিত সময়ে কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে দেখা করার কথা বলে গেলেন। একই কমপাউন্ডে অর্থাৎ থিয়েটার রোডে আমাদের অফিস থাকলেও ক্যাপ্টেন জেনারেল নূরের সঙ্গে পূর্বে আমার পরিচয় হয়নি। পরিচয় হয়নি কর্নেল জেনারেল ওসমানীর সঙ্গে। কর্নেল ওসমানী খুব সাদরে গ্রহণ করে প্রথমেই জানতে চাইলেন সামরিক বিষয়ে আমার জ্ঞানের পরিধি কি? আমি যখন তাকে জানালাম যে, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বিএ অনার্স ও মাস্টার্স করেছি এবং ২৫ মার্চ পর্যন্ত ঢাকার জিন্নাহ কলেজ নামে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র ‘এক্সক্লুসিভ’ ডিগ্রী কলেজে লেকচারার হিসেবে কাজ করতাম এবং তার আগে প্রায় চার বছর ইংরেজী দৈনিক মর্নিং নিউজ এবং পাকিস্তান টাইমস ও ডনে সাংবাদিক হিসেবেও কাজ করেছি, তখন তিনি তার এডিসি নূরকে আমাদের চা দেয়ার নির্দেশ দিলেন। সম্ভবত সময়টা ছিল ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ। সেদিন কর্নেল ওসমানীর সঙ্গে আমার যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক হয় সেটা কিন্তু তার জীবনের শেষকাল পর্যন্তও বলবৎ ছিল। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে মাঝে মধ্যেই তার জনসংযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত সাংবাদিক নজরুল ইসলামকে দিয়ে ডেকে পাঠাতেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে তার দিক-নির্দেশনা দিতেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭২ সালেও আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অনেকটা পূর্বের মতো। তিনি যখন মিন্টো রোডের কর্নারের বাড়িতে অর্থাৎ বর্তমানে যেখানে মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতর সেখানে থাকতেন তখনও আমাকে ফোন করতেন কোন প্রয়োজন হলে বিশেষ করে গণমাধ্যম সংক্রান্ত কোন সমস্যা বা প্রয়োজন হলে। সাংবাদিক হেদায়েত মোর্শেদের সঙ্গে কোন এক সময়ে তার কিছুটা কথা কাটাকাটি ও মনোমালিন্য হলে আমাকে ডাকা হয় বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য। তবে দেরি করে হলেও শেষ পর্যন্ত যখন নৌপরিবহনমন্ত্রী হিসেবে যোগদান করেন তখনও তার পিএস হিসেবে কর্মরত ইফতেখার আহম্মদ চৌধুরীকে দিয়েও ডেকে পাঠাতেন। তবে তিনি খুব আশাবাদী ছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু সরকার তাকে মন্ত্রী হিসেবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব অর্পণ করবে। তাই মন্ত্রী হিসেবে তাকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ নৌ ও জাহাজ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেয়া হলে তিনি বিষয়টি খুব সহজভাবে গ্রহণ করতে পারেননি। এই কারণে কিছুদিন অপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সম্ভবত এই ব্যথাটা তার মধ্যে থেকেই গেছে। ১৯৭৫ সালের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও আরও কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দল সমন্বয়ে বাকশাল ব্যবস্থা চালু করা হলে তিনি সেই ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সংসদ সদস্যের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ব্যক্তিগতভাবে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট তারিখে যেদিন জেনারেল ওসমানীর মতো একজন নীতিবান লোক হিসেবে পরিচিত ব্যক্তি বঙ্গবন্ধুর হত্যকারীদের নেতা খন্দকার মোশতাক আহম্মদের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বঙ্গভবনে অফিস করেন। যেখানে ওই সময়ে বসবাস করত খন্দকার মোশতাক ছাড়াও তার সহযোগী খুনীরা। সামরিক শাসনজারি করা হলেও খন্দকার মোশতাক ও তার খুনী সহযোগীদের অন্যতম রাজনৈতিক সহযোগী তাহের উদ্দিন ঠাকুর ছিলেন তথ্যমন্ত্রী তাই খুনীদের প্রচারণা বিষয়ক কাজের জন্য পরিচালক আইএসপিআর হিসেবে আমার কোন প্রয়োজন হয়নি বলে তারা ১৫ আগস্টের পরবর্তীকালে বেশ কয়েকদিন পরিচালক আইএসপিআরকে ডাকাডাকি করেননি। আমি তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিব মুজিবুল হকের নির্দেশ মোতাবেক প্রতিদিনের রুটিন কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। ২৪ আগস্ট তারিখে ডেপুটি চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হলে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী নতুন সেনাপ্রধানের ছবি ও জীবনবৃত্তান্ত গণমাধ্যমে প্রচারণা করার বিষয় নিয়ে তৎকালীন প্রতিরক্ষা সচিবের সঙ্গে আলাপ করা হলে তিনি ওই বিষয়ে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিনের সঙ্গে আলাপ করে তার ব্যক্তিগত সচিবের সঙ্গে কথা বলে সময় নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের অফিসে ঢুকতেই আমাকে বসতে না বলে জিজ্ঞাসা করলেন, কোথায় ছিলাম আমি বিগত নয়দিন। আমাকে দেখা যায়নি কোথাও? আমি কোন জবাব না দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি দেখে বসতে বললেন এবং কোন বিশেষ প্রয়োজনে এসেছি কিনাÑ জানতে চাইলেন। যে বিষয়ে তার নির্দেশ চাইতে গিয়েছি সেটা শুনেই তিনি লাল ফোনে জেনারেল ওসমানীকে ফোন করে আমাকে বঙ্গভবনে তার অফিসে পাঠালেন। বঙ্গভবনে গেলে সেনাবাহিনীর পাহারায় পেছনের দিকে একটা রুমে আমাকে নিয়ে গেল। যেখানে বসে কাজ করতে ছিলেন মেজর হুদা যিনি আমাকে আগে থেকেই চিনতেন। মেজর হুদা ইন্টারকমে আমার কথা জেনারেল ওসমানীকে বলতেই তিনি নির্দেশ দিলেন আমাকে নিয়ে যেতে। তার রুমে ঢুকতেই তিনি নতুন সেনাবাহিনী প্রধানের জীবনবৃত্তান্ত দেখতে চাইলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে ওকে বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিলেন। সঙ্গে এটাও নির্দেশ দিলেন যে, তার বিনা অনুমতিতে সামরিক বাহিনী সংক্রান্ত কোন খবরাখবর গণমাধ্যমে যাবে না। এরপরে জেনারেল ওসমানী যতদিন রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ততদিনই প্রায় প্রতিদিনই হয়ত আমাকে মেজর হুদাকে ফোন করে সময় নিয়ে বঙ্গভবনে যেতে হতো অথবা ওখান থেকে ডেকে পাঠানো হতো প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তবে এর পরেও তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ে অথবা কোন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার কোন অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটলে এবং অন্য কিছু ঘটলে তিনি গণমাধ্যমে কোন বিবৃতি প্রদান করার প্রয়োজনীয়তা মনে করলে পরিচালক, আইএসপিআর হিসেবে আমাকে ফোন করতেন। চলবে... লেখক : মুজিবনগর সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সাইকোলজিক্যাল ওয়ারফেয়ার প্রধানের দায়িত্ব পালনকারী
×