ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুদানে জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে চায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

সুদানে জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদন করতে চায় বাংলাদেশ

এম শাহজাহান ॥ সুদানের অব্যবহৃত জমি লিজ নিয়ে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করতে চায় বাংলাদেশ। তুলা, পশুপালন ও মৎস্যসহ কৃষিজাত অন্যান্য পণ্য উৎপাদনে সুদানের জমি ব্যবহার করা হবে। এছাড়া ধান, মসুর ও তেলবীজের মতো পণ্য উৎপাদন করে দেশে আনা সম্ভব। সম্প্রতি সুদান সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির কৃষিজমি ব্যবহারের প্রস্তাব পাওয়ার জন্য পর বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পক্ষ থেকে বার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের এই কমিটি শীঘ্রই সুদানে বিনিয়োগ এবং বিনিয়োগের বিপরীতে কি ধরনের অর্জন বা ফিডব্যাক পাওয়া যাবে সে বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট সুপারিশ ও মতামত দেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯ লাখ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুদানের লোকসংখ্যা মাত্র ৩ কোটি ৭০ লাখ। সুদানে প্রবহমান সাদা ও নীল নদে এখানকর ভূমি খুব উর্বর এবং চাষাবাদ, পশু পালনের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এছাড়া মিঠা পানিতে মৎস্য চাষ ও সামুদ্রিক মৎস্য আহরণেরও রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। এখানে চীন আবাদী জমি দীর্ঘ মেয়াদে লিজ নেয়ার মাধ্যমে তুলা চাষ করছে। আরব বিশ্বের অনেক দেশ সুদানের জমি লিজ নিয়ে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করে নিজ দেশে নিয়ে আসছে। সম্প্রতি সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও সুদানের অনাবাসিক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ সুদানের প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বুশারা গুমা আরর ও সুদানের চেম্বার অব কমার্স এর মহাপরিচালক আব্দুল আজিজ আবু তালেব ও উর্ধতন সরকারী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সময় সুদানে নীল নদের পাশে দীর্ঘ মেয়াদে জমি লিজ নিয়ে তুলা ও পশুসম্পদ পালনের জন্য বাংলাদেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়। কৃষি খাতে বিনিয়োগের পাশাপাশি সুদানের মিঠা পানিতে মৎস্য চাষ, সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ, মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিপণনের বিষয়ে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই বৈঠকে নামমাত্র মূল্যে জমি লিজ নেয়ার অনুরোধ করে সুদান সরকার। দেশটির এই প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজি বিষয় সংক্রান্ত মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এক বৈঠকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) চেয়ারম্যানকে আহ্বায়ক করে বারো সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে পররাষ্ট্র, অর্থ বাণিজ্য, শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, এফবিসিসিআইসহ আরও কয়েকটি দফতর ও মন্ত্রণালয় থেকে বারো প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। বিনিয়োগ সম্ভাব্যতা যাচাই, উভয় দেশের বিনিয়োগ নীতিমালা পরীক্ষা-নিরীক্ষা, বাংলাদেশের নীতিমালায় কোন সংশোধনের প্রয়োজন হবে কি না এবং সুদানের কৃষি জমি ব্যবহার করে কোন কোন খাতে বিনিয়োগ হতে পারে এ রকম গুরুত্বপূর্ণ চারটি বিষয় সামনে রেখে এই কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে । জানা গেছে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস খাতে বিপুল পরিমাণ তুলার প্রয়োজন হয়। ভারত, যুক্তরাষ্ট্র এবং মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে এসব তুলা উচ্চমূল্যে আমদানি করা হয়। কিন্তু সুদানের জমি তুলা চাষের জন্য উপযোগী। বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত, তারা তুলা উৎপাদনে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলে জানা গেছে। এ কারণে সুদানের জমি লিজ নিয়ে বিনিয়োগ সংক্রান্ত কমিটিতে বেসরকারী খাতের দু’জন প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআইর সাবেক প্রথম সহসভাপতি জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোপূর্বে মিয়ানমারের জমি লিজ নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সুদানের জমি ব্যবহারের বিষয়টিও নতুন নয়। তিনি বলেন, আমাদের জমির সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া অনেকেই এখন দেশের বাইরে বিনিয়োগ করতে চাইছেন। তাই সুদানে জমি লিজ নিয়ে কৃষিপণ্য উৎপাদন করা গেলে অর্থনীতির জন্য ভাল। এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়ন হওয়া জরুরী। বর্তমানে দেশটির প্রধান রফতানি পণ্য হচ্ছে তেল। আর দেশটিতে তেলের উৎপাদন দিন দিন নাটকীয় হারে বাড়ছে। তেল রফতানি বাড়ানোর ফলে ২০০৭ সালে সুদানের প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ৯ শতাংশে। পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, স্বর্ণ, সিলভার, ক্রোমি যার এ্যাসবেস্টস, ম্যাঙ্গানিজ, জিপসাম, জিঙ্ক, লোহা, সীসা, ইউরেনিয়াম, কপার, কোবাল্ট, গ্রানাইট, নিকেল ও তামাসহ গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদে সমৃদ্ধ সুদান। তবে দেশটির অর্থনীতির অন্যতম খাত হচ্ছে কৃষি। উৎপাদক শ্রেণীর ৮০ শতাংশই এ পেশায় নিয়োজিত।
×