স্টাফ রিপোর্টার ॥ আগামী একাদশ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে প্রচারের আড়লে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত ও তাদের সহযোগী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এখনই বিভিন্ন ধরনের নাশকতার চত্রান্ত করছে। ফলে তৃণমূলে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে বলে জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। আগমী নির্বাচনে কেথাও যেন সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ঘটনা না ঘটে সেজন্য নির্বাচন কমিশনকে আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বার জানান তারা।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের লক্ষ্যে সরকার, রাজনৈতিক দলসমূহ এবং নির্বাচন কমিশনের প্রতি তারা এই আহ্বান জানান। তারা বলেন, দেশের ৯২টি নির্বাচনী এলাকা আছে যেখানে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভোটার সংখ্যা ১২ থেকে ৪৮ ভাগ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এসব এলাকার ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর যে কোন হামলা প্রতিহত করার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নির্বাচনী এলাকাসমূহে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অনুসারি সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক-পেশাজীবী সংগঠন, ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং ছাত্র যুবাদের সমন্বয়ে প্রতিরোধ কমিটি গঠনের আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহারিয়ার কবির বলেন, নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচন কীভাবে অবাধ স্বচ্ছ এবং শান্তিপূর্ণ হতে পারে এ বিষয়ে গত দুমাসে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকা, বিশেষভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটার রয়েছে এমন সব এলাকায় সফর করে তারা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি অবলোকন করেছেন। এসব তৃণমূল অঞ্চলে সংখ্যালঘুরা এখনই নির্বাচন কেন্দ্রিক সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের আশঙ্কায় আতঙ্কের ভেতর দিয়ে দিনযাপন করছে। জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগী সংগঠন এসব এলাকায় বিভিন্ন ধরনের নাশকতার চক্রান্ত করছে।
তিনি বলেন, জামায়াত ইসলামী গঠনতন্ত্র সংবিধান পরিপন্থী হওয়ার কারণে উচ্চ আদালত এবং নির্বাচন কমিশন তাদের নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অযোগ্য ঘোষণা করেছে। এখন দলীয়ভাবে নির্বাচন না করলেও ২০১৩ সালের পর সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জামায়াত ইসলামী বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা স্বতন্ত্রভাবে এবং অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। কিছু এলাকায় জয়ীও হয়েছে। জামায়াতের সকল স্তরের নেতা ও সদস্যরা দলীয় গঠনতন্ত্রের প্রতি অন্য দলের চেয়ে বেশি অনুগত। নির্বাচনী প্রচারে তারা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মওদুদীবাদী দর্শন এবং দলের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্য কর্মসূচী প্রচার করেন। যা বাংলাদেশের সংবিধান এবং উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপন্থী।
তিনি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, যে গঠনতন্ত্র বা দলীল সংবিধান বিরোধী সেই গঠনতন্ত্র অনুসারীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে। জামায়াতের গঠনতন্ত্র ধর্মনির্বিশেষে সকল মানুষের সমান অধিকার ও মর্যাদায় বিশ্বাস করে না। তাদের গঠনতন্ত্রে নারী পুরুষের সমান অধিকার এবং মর্যাদায় বিশ্বাস করে না। এ ধরনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন ব্যক্তি যদি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাহবে ৩০ লক্ষ্য শহীদদের রক্তে লেখা মহান সংবিধানের চরম অবমাননার শামিল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও উল্লেখ করেন নির্বাচনে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক প্রচারণা নিষিদ্ধ হলেও জামায়াত ইসলামী এবং সমচরিত্রের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক দলগুলো নির্বাচনের সময় ওয়াজের নামে কিংবা জুমার নামাজের খুৎবার সময় রাজনৈতিক বক্তব্য প্রদান করে। তারা মুক্তিযুদ্ধে ইতিহাস ও চেতনার বিরুদ্ধে, দেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে, নারীদের বিরুদ্ধে, মুক্তচিন্তার মানুষের বিরুদ্ধে এবং ভিন্ন ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষমূলক প্রচার চালিয়ে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের জমিন তৈরি করছে। নির্বাচনের সময় এ ধরনের ঘৃণা বিদ্বেষ প্রচারকারী কঠোর শাস্তির আওতায় আনার জন্য নির্বাচন কমিশন ও সরকারের নিকট আহ্বান জানান। তিনি বলেন, নির্বাচন স্বচ্ছ করতে হলে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিচারও শাস্তির কোন বিকল্প নেই।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয় দেশের প্রায় পৌনে দুই কোটি ভোটার যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত। তারা এবং প্রত্যন্ত এলাকায় নারীরা যাতে নির্বিঘেœ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারে সেজন্য সরকার, রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনকে কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে একাত্তরের গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে তাদের মনোনয়ন না দেয়া। যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত তাদের মনোনয়ন না দিতে রাজনৈতিক দলের প্রতি আহ্বান জানান। চোরাচালান, মাদক ব্যবসা, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন না দেয়া। আগামীতে যারা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করবেন তারা যেন ’৭১ এর গণহত্যাকারী ও মানবতাবিরোধী অপরাধের চলমান বিচার দ্রুত সম্পন্ন করার অঙ্গীকার তাদের নির্বাবচনী ইশতেহারের যুক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।