ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অসময়ে তালপাকা গরম, রোদে পোড়া দিন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

অসময়ে তালপাকা গরম, রোদে পোড়া দিন

মোরসালিন মিজান ॥ ভাদ্রের তাল পাকা গরম। এর পরও সহ্য করা গেছে। একটু আধটু বৃষ্টি ছিল। মাঝে মধ্যে শীতল হাওয়া। গরমটা তাই খুব বেশি ক্লান্ত শ্রান্ত করতে পারেনি। কিন্তু আশ্বিনের শুরু হতে না হতেই বড় ধাক্কা। শরতের সমাপনী মাস যেন সুদে আসলে পাওনা বুঝিয়ে দিচ্ছে। সূর্য প্রখর রোদসমেত নিচে নেমে এসেছে বলেই মনে হয়। তা না হলে এত গরম কেন? কেন এত জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া? না, ঢাকায় নয় শুধু। গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশের একটাই ছবি। প্রায় অভিন্ন চিত্র। গত রবিবার থেকে শুরু হলো আশ্বিন। বাংলা এই মাসের কাছে চাওয়াটি অন্য। এ সময় তাপমাত্রা সাধারণত কমতে থাকে। হেমন্তকে আমন্ত্রণ জানায় আশ্বিন। আর হেমন্ত মানেই শিশির ভেজা ঘাস। মিষ্টি রোদ। শান্ত শীতল প্রকৃতি। কিন্তু এবার শুরুটা অন্তত সেরকম হলো না। কয়েকদিন ধরেই অসহনীয় রোদ। অসহ্য গরম। গত ৩০ বছরের তাপমাত্রার গড়কে স্বাভাবিক তাপমাত্রা হিসেবে ধরা হয়। এই হিসেবে বর্তমানে সারাদেশের তাপমাত্রাই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। গত সোমবার প্রথমবারের মতো দ্বীপ জেলা ভোলায় পা রেখে মনে হয়েছিল, কোন বিশেষ কারণে এখানে গরম বেড়ে গেছে। সূর্য এত বেশি তাপ বিকিরণ করছিল যে, ঠিকমতো চোখ মেলা যাচ্ছিল না। গায়ে ফোসকা পড়ার অবস্থা হয়েছিল। অস্বাভাবিক রোদের কারণে ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল শহরের রাস্তা ঘাট। কিন্তু স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এ অবস্থা হঠাৎ করেই। তারাও এ অবস্থার সঙ্গে পরিচিত নন। বাংলা বাজারে অবস্থিত স্বাধীনতা জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল আমিন নামের এক ভ্যান চালকের সঙ্গে। শরীর আর চলছিল না তার। সে কথা জানিয়ে বললেন, নদীর পানিও গরম হয়ে গেছে। গোসল করা যায় না। এই সময় এমন গরম ভোলায় দেখেননি বলে জানান তিনি। পর দিন মঙ্গলবার সকালে ঢাকায় ফিরে হিসাবটি মেলানো গেল। ঢাকায়ও একইরকম গরম। সিদ্ধ হওয়ার অবস্থা। মুহূর্তেই ঘামে ভেজা শরীর। জামা কাপড় গায়ের সঙ্গে লেপ্টে যাচ্ছিল। কেমন যেন জ্বলতে শুরু করেছিল হাত-পা। সদর ঘাট হয়ে আসার সময় খেটে খাওয়া মানুষের মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। তার মানে, সারা দেশেই আকস্মিক গরম? হ্যাঁ, তাই বলছে আবহাওয়া অফিস। বর্তমানে ঢাকাসহ প্রায় সারাদেশের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার স্বাভাবিক তাপমাত্রা হয় ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। সোমবার ছিল ৩৫ দশমিক ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস। মঙ্গলবার তা বেড়ে হয় ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে, যা ছিল ৩৬ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। অথচ যশোরে এ সময় সাধারণত তাপমাত্রা হয় ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। রাজশাহীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩২ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। কিন্তু মঙ্গলবার ছিল ৩৫ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এভাবে দেশের অধিকাংশ এলাকায় এমন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। কিন্তু কেন এই পরিবর্তন? এমন প্রশ্নে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এখন বৃষ্টি নেই। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এ কারণেই হঠাৎ গরম। পরিবর্তনের ব্যাখ্যা করে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক বলেন, সাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হচ্ছে। আশপাশ এলাকার সব মেঘ চলে গেছে সেদিকে। তাই বৃষ্টি হচ্ছে না। মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। দেশের আর কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। ঢাকাও বৃষ্টিহীন। এ কারণেই তীব্রতা বেড়েছে গরমরে। তিনি বলেন, লঘুচাপটি আরও ঘণীভূত হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। চলে যেতে পারে ভারতের দিকে। আর তা হলে বৃহস্পতিবার থেকে গরম কিছুটা কমতে পারে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি। এখন তাই অপেক্ষার পালা। দ্রুত স্বরূপে ফিরবে আশ্বিন। হেমন্তের মিষ্টি বিকেল ফিরে আসবে। সকলের তাই প্রত্যাশা।
×