ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রাস্তায় করমর্দন অতঃপর...

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রাস্তায় করমর্দন অতঃপর...

পথেঘাটে লোকজনের সঙ্গে হাত মেলানো যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন মোহনচাঁদ শীল। কলকাতা শহরের একজন প্রথম সারির ইউরোলজিস্ট তিনি। কয়েক দশক ধরে কলকাতায় কয়েক হাজার রোগীর চিকিৎসা করেছেন। তাই রাস্তাঘাটে প্রায়ই তাকে দেখা হয়ে যায় তাদের অনেকের সঙ্গে। তিনি নিজে চিনতে না পারলেও ডাক্তার বাবুকে মনে রেখে দিয়েছেন রোগী বা রোগীর পরিবার। তাই কথা বলতেই হয়। কিন্তু তার পরিণতি যে এতটা মারাত্মক হবে তা স্বপ্নেও ভাবেননি ওই চিকিৎসক। মাত্র কয়েকদিন আগে রাত সাড়ে আটটার দিকে মোহনচাঁদ বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন এলাকার সেলুনে চুল কাটাতে। এন্টালি থানা এলাকার সাবেক কনভেন্ট লেন বা ননীগোপাল রায় চৌধুরী সরণির বাড়ি থেকে সেলুনের দূরত্ব কয়েক মিনিটের হাঁটা পথ। তিয়াত্তর বছরের চিকিৎসক তাই পায়ে হেঁটেই যাচ্ছিলেন। সিআইটি রোডের মুখে সন্ধ্যা সুইটস। সেখানে পৌঁছাতেই এক মধ্য বয়সী নারী তারদিকে এগিয়ে আসেন। নারীটি তাকে নাম ধরে সম্বোধন করেন। সেই নারীর সঙ্গে কথা বলতে বলতেই তিনি আরও খানিকটা পথ হাঁটেন। তারপর সেলুনের পথে যাওয়ার আগে ওই নারীর সঙ্গে করমর্দনও করেন। তখন পর্যন্তও সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বাড়ি ফিরেই আক্কেলগুড়ুম। ডান হাতের অনামিকায় যে বড়সড় হিরের আংটি ছিল তা গায়েব। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও হদিস মেলে না তার আংটির। শেষে তার সন্দেহ হয় ওই নারীকেই। পরেরদিনই তিনি এন্টালি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ সূত্রে খবর, লিখিতভাবে অভিযোগ করে ওই দিনের ঘটনার কথা জানিয়েছেন ওই চিকিৎসক। তদন্তকারীদের তিনি জানিয়েছেন, ওই নারীকে তিনি চিনতে পারেননি। তবে ওই নারী নিজেকে একজন রোগী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। এক তদন্তকারী বলেন, ‘ওই নারী মোহনচাঁদকে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে চা খাওয়ানোর জন্য জোরাজুরিও করেছিলেন।’ পুলিশ সূত্রে খবর, মোহনচাঁদ তদন্তকারীদের বলেছেন, তিনি চা খেতে পারবেন না জানিয়ে ওই নারীর সঙ্গে যখন হাত মিলিয়েছিলেন তখন একটা হাল্কা টান অনুভব করেছিলেন আঙ্গুলে। কিন্তু তখন কিছু খেয়াল করেননি। পরে যখন আংটি বেপাত্তা দেখেন তখন বিষয়টি তার মনে পড়ে। তদন্তকারীরা বৃদ্ধ চিকিৎসকের বর্ণনা অনুযায়ী ওই নারীর কয়েকটি স্কেচও তৈরি করেছেন। মোহনচাঁদের বর্ণনা অনুযায়ী নারীটি সুন্দরী ও সম্ভ্রান্ত। ইংরেজী ও বাংলা মিশিয়ে কথা বলছিলেন। সবমিলিয়ে মোহনচাঁদের সন্দেহের কোন কারণ ছিল না। কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, ‘এটা নতুন ঘরানার কেপমারির ঘটনা। পুজোর মুখে এই কেপমারদের উৎপাত শুরু হয়। এদের অধিকাংশকেই দেখলে বোঝা যায় না।’ যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে কোন সিসি ক্যামেরা ছিল না। পুলিশ আশেপাশের রাস্তায় লাগানো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেছে। সেখান থেকে অভিযুক্তের হদিস পাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা। পাশাপাশি পুরনো কেপমারদের ছবিও দেখানো হচ্ছে বৃদ্ধ চিকিৎসককে। -আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন
×