ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গাজীপুরে মাদ্রাসা থেকে দুজনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

গাজীপুরে মাদ্রাসা থেকে দুজনের ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥ গাজীপুরের এক মাদ্রাসায় মঙ্গলবার জোড়া খুনের ঘটনা ঘটেছে। নিহতরা হলোÑ চান্দনা এলাকার হুফ্ফাজুল কোরান মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২১) ও ময়মনসিংহের গফরগাঁও থানার ছয়ানি রসুলপুর গ্রামের শাহিদুল ইসলামের ছেলে ওই মাদ্রাসার নুরানী বিভাগের ছাত্র মোঃ মামুন (৮)। এ ঘটনায় নিহত মাহমুদার শিশু সন্তান আবু হুরায়রা (৩) আহত হয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় নিহত মাহমুদা আক্তারের স্বামী মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ ইব্রাহিম খলিলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জানা যায়, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের চান্দনা এলাকার রাশেদুল ইসলাম রাজিবের বাড়ি ভাড়া নিয়ে গত এক বছর ধরে হুফ্ফাজুল কোরান মাদ্রাসা নামের হেফজ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করে তা পরিচালনা ও শিক্ষকতার দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার বাশজানা মালতি গ্রামের ফজলুল হোসেনের ছেলে ক্কারী মোঃ ইব্রাহিম খলিল। টিনশেড ভবনের ওই মাদ্রাসার একটি কক্ষে দ্বিতীয় স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২১) এবং দু’শিশু সন্তান আবু হুজাইফা (৫) ও আবু হুরায়রাকে (৩) নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। মঙ্গলবার ভোরে স্ত্রী মাহমুদা ও তার দুই সন্তানকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে তিনি ফজরের নামাজ পড়ার জন্য পাশের কৃষি পল্লী জামে মসজিদের উদ্দেশে ঘর থেকে বের হন। মসজিদে যাওয়ার সময় তিনি মাদ্রাসার দুই ছাত্র মামুন ও আব্দুল্লাহকে মাদ্রাসায় রেখে যান। ইব্রাহিম ঘর থেকে বের হওয়ার পর আব্দুল্লাহ প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে টয়লেটে যায়। টয়লেট থেকে ঘরে ফিরে আব্দুল্লাহ বিছানার ওপর মাহমুদা এবং দরজার সামনে মামুনের ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখে। এ সময় পাশেই মাহমুদার আহত শিশু সন্তান আবু হুরায়রা (৩) কান্নাকাটি করছিল। খবর পেয়ে মসজিদ থেকে বাসায় ফিরে হতাহতদের দেখতে পান। নিহত মামুন সম্পর্কে মাহমুদার মামাত ভাইয়ের ছেলে। এ বিষয়ে তিনি আর কিছুই জানেন না বলে জানান। নিহত মাহমুদার বাবা আবু হানিফ গাজী ও বোন সুমাইয়া আক্তারসহ স্বজনরা জানান, চাঁদপুর জেলা সদরের খলিসাডুলি গ্রামের মোঃ আবু হানিফ গাজী তার স্ত্রী ফাহিমা এবং তাদের তিন সন্তানের মধ্যে দু’মেয়ে মাহমুদা ও সুমাইয়াকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। হানিফ গাজীর অপর সন্তান ইব্রাহিম গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী ছিল। পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ইব্রাহিম খলিল ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে মাহমুদাকে বিয়ে করেন। এটি যে ইব্রাহিমের দ্বিতীয় বিয়ে তা তারা জানতেন না। তাদের (ইব্রাহিম ও মাহমুদা) সংসারে দু’ছেলে সন্তান আবু হুজাইফা ও আবু হুরায়রার জন্ম হয়। মাহমুদার সঙ্গে ইব্রাহিমের দাম্পত্য সম্পর্ক খারাপ ছিল না। বিয়ের পর গত প্রায় বছরখানেক ধরে মাহমুদা ও তাদের দু’সন্তানকে নিয়ে ইব্রাহিম খলিল এ মাদ্রাসার একটি কক্ষে বসবাস করতেন। এর আগে ২০১০ সালে ইব্রাহিম বরিশালের এক মেয়েকে বিয়ে করেন। প্রথম বিয়ের খবর গত ৬/৭ মাস আগে প্রকাশ হয়। এরপর গত মার্চ মাসে ইব্রাহিম তার নিঃসন্তান প্রথম স্ত্রীকে ডিভোর্স দেন। কয়েক মাস আগে প্রথম স্ত্রী ইব্রাহিমকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছিল। এদিকে একই মাসে হানিফ গাজী তার স্ত্রী ফাহিমা ও তাদের মেয়ে সুমাইয়া গাজীপুরে চলে আসেন এবং স্থানীয় চান্দনা এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করেন। ফাহিমা স্থানীয় পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। নিহত মামুনের বাবা শাহিদুল ইসলাম ও মা আসমা জানান, মামুনের বাবা গফরগাঁয়ের একটি ডেইরি খামারে কাজ করে। মা গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ভাড়াবাসায় থেকে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। প্রায় এক বছর ধরে মামুন ওই মাদ্রাসায় লেখা পড়া করছে। শনিবার মামুন মাদ্রাসার বেতন ও হোস্টেলের খরচের টাকার জন্য রাজেন্দ্রপুরে মায়ের কাছে গিয়েছিল। পরে রবিবার বিকেলে টাকাসহ মামুনকে মাদ্রাসায় দিয়ে যান তার মা। সোমবার রাত ৯টার সময় মামুনের সঙ্গে সর্বশেষ মায়ের কথা হয়। তখনও এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে এমন কোন আলামত বুঝতে পারেননি। মঙ্গলবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হুজুরের মোবাইল থেকে তাকে কল করা হয় এবং তাকে দ্রুত মাদ্রাসায় আসতে বলে মোবাইল ফোনের লাইনটি কেটে দেয়। তবে কণ্ঠটি হুজুরের বলে মনে হয়নি। সন্তান নিহত হওয়ার খবর পেয়ে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে ছুটে এসে মামুনের লাশ শনাক্ত করেন শহিদ। তবে কেন মামুনকে হত্যা করা হয়েছে তা তিনি জানেন না। তিনি এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি জানান। জিএমপির বাসন থানার ওসি মোঃ মুক্তার হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকালে চান্দনা এলাকায় জোড়া খুনের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং নিহতদের লাশ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য বিকেলে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। পুলিশ এ সময় বিছানার পাশ থেকে রক্তমাখা একটি দা এবং পাশের কক্ষ থেকে দা ধারালো করার কাজে ব্যবহৃত একটি কাঠের খ- ও বালু উদ্ধার করেছে। লাশ দুটি মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ ইব্রাহিম খলিলের বসতঘরে পড়েছিল। নিহত মাহমুদার গলায়, গালে ও কানে এবং মামুনের ঘাড়ে, মাথায় ও পিঠে ধারালো অস্ত্রের একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এছাড়াও আহত শিশু আবু হুরায়রার ডান হাতের আঙ্গুলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পুলিশ এ ঘটনায় নিহত মাহমুদা আক্তারের স্বামী মাদ্রাসার পরিচালক মোঃ ইব্রাহিম খলিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।
×