ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দুই আসন দখলে এবং ভাগ বসাতে সচেষ্ট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ॥ নড়াইল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দুই আসন দখলে এবং ভাগ বসাতে সচেষ্ট আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ॥ নড়াইল

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত নড়াইলে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। বইছে নির্বাচনী হাওয়া। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, ‘অতিথি পাখি’ হিসেবে পরিচিত মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতা ততই বাড়ছে। নির্বাচনী নানা হিসাব-নিকাশের মধ্যেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সমর্থিত নেতারাও। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের নেতারা নিজ নিজ জোটের মনোনয়ন লাভের আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নিজ নিজ সংসদীয় আসনে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তিন উপজেলা নিয়ে গঠিত নড়াইল জেলায় দুটি সংসদীয় আসন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। আওয়ামী লীগ চাচ্ছে একাদশ নির্বাচনেও আসন দুটি ধরে রাখতে। অন্যদিকে বিএনপি মরিয়া দখলে নিতে। তবে এবারের নির্বাচনে জেলা এবং তৃণমূলের মতামত উপেক্ষা করে প্রার্থী মনোনয়ন দিলেই আওয়ামী লীগকে বড় ধরনের সঙ্কটে পড়তে হতে পারে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের দাবি। এখানকার মাঠ পর্যায়ের নেতাদের সাফ কথা- বহিরাগত কোন প্রার্থীকে কেউই মেনে নিবে না। মনোনয়ন দিতে হবে স্থানীয়দের মধ্যে যোগ্য এবং জনপ্রিয় নেতাদের। নেতৃত্ব ও তৃণমূল পর্যায়ে নড়াইলর দুটি আসনেই আওয়ামী লীগের কোন্দল এখন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগের কোন্দল এড়াতে শেষ পর্যন্ত নড়াইলের একটি আসনে এবার নৌকার মাঝি হিসেবে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে। এই পরিবেশের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নড়াইলের দুটি সংসদীয় আসন ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চায় বিজয়ী হয়ে তাদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে। এ জেলার দুটি আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের দুই ডজন নেতা সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে নিজেদের নাম ঘোষণা করে দলীয় মনোনয়ন বাগাতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীর সংখ্যা কিছুটা কম। আর এ কারণে ক্ষমতাসীন দলটিকে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকলেও যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে তাদেরও হিমশিম খেতে হবে। দুটি আসনেই বর্তমান এমপিসহ বেশ কয়েকজন নতুন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নিজ নিজ এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষ হতে চললেও আওয়ামী লীগের নির্বাচিত এমপিদের সঙ্গে জেলার শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে খুব একটা মিল দেখা যায়নি। নড়াইলের দুটি উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতারা একত্রে অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন না। জাতীয় এবং দলীয় অনুষ্ঠান পালিত হয় আলাদা আলাদাভাবে। নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব চরমে। অঙ্গসংগঠনগুলোও এখন মূল দলের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে পারছে না। এতে হতাশ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বেশ হিসাব-নিকাশ করতে হবে। বিবেচনায় নিতে হবে বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থাকেও। তা না হলে আগামী নির্বাচনে ভোটের চিত্র একেবারেই পাল্টে যেতে পারে। স্থানীয় নেতাকর্মীদের মতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নড়াইলের দুটি আসনে যোগ্য প্রার্থী মনোনয়নে ব্যর্থ হলে সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিজয় ছিনিয়ে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট দখলে নিতে পারে এ আসন দুটি। নড়াইল-১ (সদর ও কালিয়া) ॥ সংখ্যালঘু হিন্দু অধ্যুষিত নড়াইল সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও কালিয়া উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এ আসনের বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তি নির্বাচনী এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কা-ারি হিসেবেই পরিচিত। এ আসনে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী (বিদ্রোহী) হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে এমপি নির্বাচিত হন কালিয়া পৌর মেয়র ও কালিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কবিরুল হক মুক্তি। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে জয়ী হলেও পরে আওয়ামী লীগের এমপি হিসেবে সংসদে যোগ দেন। মুক্তি ওই নির্বাচনে ৬৩ হাজার ৮২৬ ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। ৪ দলীয় জোট প্রার্থী বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম পান ৫০ হাজার ৭৭৭ ভোট। মহাজোট প্রার্থী কমরেড বিমল বিশ্বাস পান ৪৩ হাজার ২৯৫ ভোট। বিগত ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কবিরুল হক মুক্তি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। এ ব্যাপারে বর্তমান সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি জনকণ্ঠকে জানান, এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারী ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে নিজের এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান আরও মজবুত করে রেখেছেন তিনি। দলের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ভোট ব্যাংক। এ নির্বাচনী এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে সুনাম অর্জন করলেও দলের কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি তার বিরোধিতা করে ক্ষমতাসীন দলের অর্জনকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করে মুক্তি বলেন, এ আসনে আমার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী আছে বলে আমি মনে করি না। তিনি বলেন, নড়াইলে আওয়ামী লীগের জন্মের সঙ্গে আমার পরিবারের সম্পর্ক রয়েছে। দলের জন্য আমার বাবা-ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। এলাকার মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে। কমপক্ষে ২০ হাজার নেতাকর্মীর নাম আমার মুখস্থ। তাদের সুবিধা-অসুবিধা, বিপদ-আপদে পাশে থাকি। দান-খয়রাত করি। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে আবেগের কোন জায়গা নেই। দলের পরীক্ষিতরাই মনোনয়ন পাবেন। সেক্ষেত্রে মনোনয়নের ব্যাপারে আমি ইনশাল্লাহ শতভাগ নিশ্চিত। তিনি দলের গ্রুপিংয়ের ব্যাপারে বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক বড় দল। এখানে গ্রুপিং থাকতেই পারে। তবে নির্বাচনে এর কোন প্রভাব পড়ে না। আওয়ামী লীগের বর্তমান এমপি কবিরুল হক মুক্তি ছাড়াও এই আসনে এবার প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের একাংশের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া। ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পলিটব্যুরোর সদস্য কমরেড বিমল বিশ্বাস এ আসনে জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী। এর মধ্যে কমরেড বিমল বিশ^াস ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নিলু, সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি এ্যাডভোকেট ফজিলাতুন নেছা বাপ্পি, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লে. কমান্ডার (অবঃ) ওমর আলী, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক কাজী সারোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোল্যা ইমদাদুল হক, কালিয়া পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান বিএম ইকরামুল হক টুকু ও নড়াইল জেলা জাতীয় পার্টির (এরশাদ) সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মিল্টন মোল্যার নাম শোনা যাচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও নড়াইল জেলা বিএনপির সভাপতি বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলম রয়েছেন শক্ত অবস্থানে। এ আসনে বিএনপি নেতা বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের বিকল্প কোন প্রার্থী নেই। জনপ্রিয়তা, অর্থবিত্ত, প্রভাব সব কিছুই বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমের আছে। গত নির্বাচনে তিনি বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করেন। বিশ্বাস জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা এবার আশাবাদী। এ আসনে বিএনপির অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে রয়েছেন খুলনা মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ব্যবসায়ী শাহারুজ্জামান মোর্তজা, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য গৌতম মিত্র। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন্দল এবং মনোনয়ন নিয়ে রশিটানা টানি থাকলেও তৃণমূল পর্যায়ে কবিরুল হক মুক্তির বিপক্ষে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হালে পানি পাচ্ছে না। এ কারণে এবার এই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা একেবারেই ছোট। আগামী নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মনোনয়নে ভুল করলেই রাজনীতির দৃশ্যপট একেবারেই বদলে যাবে। নড়াইল-২ (সদর-লোহাগড়া) ॥ নড়াইল সদর উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন এবং লোহাগড়া উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নড়াইল-২ আসন গঠিত। এ আসনে বরাবর আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়ে আসলেও ২০১৪ সালের নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়লাভ করেন। এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতোমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়েছেন। বিভিন্ন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনুদান দিয়ে জানান দিচ্ছেন নিজেদের প্রার্থিতার কথা। এসব নেতা বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে ডিজিটাল ব্যানার টানিয়ে ও পোস্টার সেটে এবং গেট করে ঈদ ও পূজার শুভেচ্ছা জানিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। আর বড় দুই জোটের কর্মী-সমর্থকরাও প্রার্থীদের সমর্থনে বিভক্ত হয়ে তৎপর রয়েছেন। জাতীয় পার্টিসহ অন্য দু-একটি দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের তৎপরতাও কম-বেশি দেখা যাচ্ছে। সব মিলিয়ে নড়াইল-২ আসনে নির্বাচনী হাওয়া ক্রমশ জোরদার হয়ে উঠেছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট হতে মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক নেতা রয়েছেন। তারা হলেন, বর্তমান এমপি ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য এ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান, নড়াইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ^াস, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক এ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, দলের নিবেদিত প্রাণ ও মাঠ পর্যায়ের জনপ্রিয় নেতা লোহাগড়া উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নিলু, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম নবী, সাবেক এমপি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) এসকে আবু বাকের, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এসএম আসিফুর রহমান বাপ্পি, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ্যাডভোকেট সৈয়দ আইয়ুব আলী, বিশিষ্ট শিল্পপতি বাসুদেব ব্যানার্জী, নড়াইল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও আওয়ামী লীগ নেতা হাসানুজ্জামান, সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট সাঈফ হাফিজুর রহমান খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার মেয়র মোঃ জাহাঙ্গীর বিশ^াস, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শরীফ হুমায়ুন কবীর, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান সিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, আওয়ামী লীগ নেতা লে. কর্নেল (অবঃ) সৈয়দ হাসান ইকবাল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক রাশেদুল বাসার ডলার, আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মোঃ আমিনুর রহমান হিমু ও হাবিবুর রহমান তাপস মনোয়ন প্রত্যাশী। এ সকল প্রার্থী তাদের নিজ নিজ কর্মী-সমর্থক নিয়ে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং মনোনয়ন পাওয়ার আশায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এদের মধ্যে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু মনোনয়ন পেতে কেন্দ্রে লবিংয়ের পাশাপাশি তৃণমূলে নিজস্ব বলয় তৈরি এবং গণসংযোগ, সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন। সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু জানান, উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে সরকারী ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিজ নির্বাচনী এলাকার উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করে নিজের এবং আওয়ামী লীগের অবস্থান আরও মজবুত করে রেখেছেন। দলের পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন নিজস্ব ভোট ব্যাংক। এ নির্বাচনী এলাকায় তিনি ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করে সুনাম অর্জন করলেও দলের কতিপয় স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি তার বিরোধিতা করে ক্ষমতাসীন দলের অর্জনকে নস্যাৎ করার নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এদিকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা করছেন ১৪ দলের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্য বর্তমান এমপি এ্যাডভোকেট শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, জেলা জাসদের (আম্বিয়া) সভাপতি এ্যাডভোকেট হেমায়েতুল্লাহ হিরু, জাসদের (ইনু) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জেলা জাতীয় পার্টির (এ) সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শরীফ মুনীর হোসেন ও সভাপতি এ্যাডভোকেট ফায়েকুজ্জামান ফিরোজ। এই আসনে আওয়ামী লীগের কোন্দল প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। নেতায়-নেতায় দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগের নেতারা একত্রে অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন না। জাতীয় এবং দলীয় অনুষ্ঠান পালিত হয় আলাদা আলাদাভাবে। নির্বাচনকে সামনে রেখে নেতায় নেতায় দ্বন্দ্ব এখন চরমে। অঙ্গ সংগঠনগুলোও এখন মূল দলের সঙ্গে এক হয়ে কাজ করতে পারছে না। এতে হতাশ আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীরা। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বেশ হিসাব-নিকাশ করতে হবে। বিবেচনায় নিতে হবে বর্তমান সাংগঠনিক অবস্থাকেও। নৌকার মাঝি কে হবেন, এ নিয়ে মাঠ পর্যায়ে নেতাদের মধ্যে তুমুল লড়াই থাকলেও শেষ পর্যন্ত এই আসনে কেন্দ্র থেকে নতুন কাউকে প্রার্থী করতে পারে বলে জানা গেছে। এদিকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে থেকে একাধিক প্রার্থীর নাম আলোচনায় রয়েছে। এরা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক ও খুলনা মহানগর মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি শরীফ কাসাফুদ্দৌজা কাফি, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের সিকদার, সাংগঠনিক সম্পাদক ও নড়াইল পৌরসভার সাবেক মেয়র জুলফিকার আলী ম-ল, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মুন্সী শাহিন উল্লাহ মোহন এবং নড়াইল সদর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুল ইসলাম। এছাড়া এনপিপির চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ ও বাংলাদেশ গণসেবা আন্দোলনের চেয়ারম্যান সাবেক এমপি মুফতি শহিদুল ইসলাম এ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী বলে জানা গেছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন থেকে দলের জেলা সভাপতি এসএম নাসির উদ্দিন এবং সহ-সভাপতি মাওলানা সামসুল হকের মধ্যে যে কোন একজন কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন করবেন বলে জানান।
×