ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘ ১৪ বছর পর বিচারিক আদালতে বিচারকাজ শেষ হলো ;###;জামিনে থাকা ৩ আইজিপিসহ ৮ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ

রায় ১০ অক্টোবর ॥ একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮

রায় ১০ অক্টোবর ॥ একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা

বিকাশ দত্ত ॥ বহুল আলোচিত একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আগামী ১০ অক্টোবর বুধবার। দীর্ঘ ১৪ বছর পর দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য) বিচার কাজ শেষ হয়েছে। রাষ্ট্র ও আসামি পক্ষের আইনী পয়েন্টের ওপর যুক্তিতর্ক শেষে রায় ঘোষণার জন্য এ দিন নির্ধারণ করা হয়। একই সঙ্গে জামিনে থাকা সাবেক ৩ আইজিপিসহ ৮ জনের জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এ মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, এনএসআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ৪৯ জন আসামি রয়েছে। মোট ৫২ জনের মধ্যে ৩ আসামির জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জঙ্গী নেতা মুফতি হান্নান ও তার সহযোগী শরীফ সাহেদুল আলম বিপুল অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। তারেক রহমানসহ এখনও ১৮ আসামি পলাতক রয়েছেন। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হয় সোমবার আর মঙ্গলবার আইনগত বিষয়ের ওপর সংক্ষিপ্ত যুক্তি উপস্থাপন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। এরপরই এ মামলায় রায়ের জন্য দিন ঠিক করেন পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন। এর আগে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। দুপুর ২টা পর্যন্ত চলে আদালত। গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের দিন ঠিক হওয়ার কারণে এ দিন আদালত অঙ্গনের ভেতরে ও বাইরে নিরাপত্তার ব্যাবস্থা জোরদার করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, ‘আমাদের প্রত্যাশা আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- হবে।’ অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী এসএম শাহজাহান যুক্তিতর্কে বলেন, এ মামলার কোন তথ্য-প্রমাণ নেই। এ মামলা ভিত্তিহীনভাবে সাজানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ মামলায় কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিদের জন্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন তিনি। এবং তাদের খালাসের আর্জি জানান। ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ শুনানির পর আমরা এ মামলার শেষ পর্যায়ে এসেছি। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের ধন্যবাদ জানাই। এ সময় তিনি আইনের ব্যাখ্যা সঠিকভাবে তুলে ধরার জন্য গণমাধ্যমকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান। আদালত প্রাঙ্গণের প্রতিটি ফ্যান-লাইটের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ চেনাজানা তৈরি হয়েছে। আসামিদের সঙ্গেও তাদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তারপরও মামলাটি শেষ পর্যায়ে এসেছে। এবার রায়ের দিন ঠিক করতে হবে। এরপর বিচারক আসামি ১০ অক্টোবর এ মামলার রায়ের দিন ঠিক করে দেন। একইসঙ্গে আট আসামির জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান, এ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল, বিশেষ পিপি মোঃ আবু আব্দুল্লাহ ভুঁইয়া, এ্যাডভোকেট আকরাম উদ্দিন শ্যামল, এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা, এ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত জিহাদ, আশরাফ হোসেন তিতাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান, এসএম শাহজাহান প্রমুখ। আদালতে ৩১ আসামিকে হাজির করা হয় ॥ কারাগারে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। জামিনে থাকা খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মোঃ আশরাফুল হুদা, শহিদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরীসহ ৮ আসামিও আদালতে জাহির হন। এর আগে বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর আসামিপক্ষে এ্যাডভোকেট এসএম শাহজাহান আদালতে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। এর আগে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। মঙ্গলবার আসামিপক্ষে আইনী পয়েন্টে যুক্তিতর্ক পেশ করেন সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, আবদুর রেজাক খান, এসএম শাহজাহান। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের মক্কেলদের (আসামি) খালাসের আর্জি জানিয়ে তাদের যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষের চিফ প্রসিকিউটর সৈয়দ রেজাউর রহমান এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। মামলার রায় ও আদেশের পূর্ব পর্যন্ত জামিনে থাকা আট আসামির জামিন বাতিল চেয়ে শুনানি করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে মোশররফ হোসেন কাজল বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা ৫ উপধারা অনুযায়ী ৮ আসামির জামিন বাতিলের এখতিয়ার আদালতের। আট আসামির পক্ষেও তাদের আইনজীবীরা জামিন বহাল রাখার বিষয়ে যুক্তি পেশ করেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক পেশ ও শুনানি শেষ হলে বিচারক বলেন, দীর্ঘদিন বিচার কার্যক্রম শেষে এখন শেষ পর্যায়ে এসেছে। বিচারক বলেন, এ মামলার আসামিরা তাদের আইনজীবী, গণমাধ্যম, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সদস্যগণসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা তিনি হৃদয় দিয়ে অনুভব করেন। সুপ্রীমকোর্টের অনেক বিশিষ্ট আইনজীবী এ মামলা পরিচালনায় এ বিচারিক আদালতকে অলংকৃত করেছেন। তিনি সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এ মামলায় সম্পূর্ণ ঘটনাকে সামনে এনে আইনী ব্যাখ্যার আলোকে রায় ও আদেশ দেয়া হবে। এ সময় আদালত সকলের দোয়া কামনা করেন। বিচারিক কার্যক্রমে পদ্ধতিগত ত্রুটি যেন না থাকে উল্লেখ করে আদালত, জামিনে থাকা ৮ আসামির জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। রাষ্ট্রপক্ষের প্রত্যাশা সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- ॥ রায় ও আদেশের তারিখ ধার্য হওয়ায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান সন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সন্দেহের উর্ধে থেকে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করার জন্য ২১ আগস্ট হামলা ইতিহাসের সবচাইতে নৃশংস, জঘন্যতম ও বর্বরোচিত হামলা। নিরস্ত্র মানুষের ওপর আর্জেস গ্রেনেডের মতো সমরাস্ত্র ব্যবহার এ উপমহাদেশে আর নেই। তারা এ মামলার সাফল্যের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। রাষ্ট্রপক্ষ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেড ও অর্থ সরবরাহের উৎস, ঘটনার চক্রান্ত, আলামত ধ্বংসের অপচেষ্টা, মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহে নিরীহ জজ মিয়াকে সম্পৃক্ত করা, প্রশাসনিক সহযোগিতার সকল বিষয় সাক্ষ্য-প্রমাণ অন্যান্য ডকুমেন্টস আদালতে পেশ করেছে। আমাদের প্রত্যাশা আইন অনুযায়ী আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- হবে। রাষ্ট্রপক্ষের অপর আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে এ মামলায় মূল রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এতে ঘটনার পরিকল্পনাকারীরা সম্পৃক্ত হয়েছেন। এখানে মামলা সব আসামিদের মোটিভই এক। তিনি আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদ- প্রত্যাশা করেন। ১১৯ কার্যদিবস শেষে মামলাটি এই পর্যায়ে এসেছে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ নিয়েছে ২৯ কার্যদিবস আর আসামিপক্ষ নিয়েছে ৯০ কার্যদিবস। ২১ আগস্টের ঘটনায় পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে ৩ জন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে এখনও ১৮ জন পলাতক। আসামিদের মধ্যে ৪৫ জনের যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়। আসামি পক্ষের আইনজীবীর খালাসের আর্জি ॥ আসামি পক্ষের আইনী পয়েনেটর যুক্তিতর্ককে আইনজীবী এসএম শাহজাহান বলেন, এ মামলার কোন তথ্য-প্রমাণ নেই। এ মামলা ভিত্তিহীনভাবে সাজানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোন তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আসামিদের জন্য আদালতের কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করেন তিনি। এবং তাদের খালাসের আর্জি জানান। হাজির হতে পলাতক আসামিদের জন্য বিজ্ঞপ্তি ॥ প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য এ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা জনকণ্ঠকে বলেন, মামলার অভিযোগপত্র আমলে নেয়ার পর পলাতক ১৮ আসামির বিষয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরে তাদের হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিসহ সব ধরনের আইনী প্রক্রিয়া শেষে পলাতক দেখিয়ে বিচার শুরু হয়। এর মধ্যে যাদের বিষয়ে আইনে সর্বোচ্চ সাজা হওয়ার মতো ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিল। এ আইনজীবীরা পলাতকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেছেন। আসামিরা হলেন-মাওলানা তাইজুদ্দিন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা সাবেক এমপি শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, ব্যবসায়ী মোঃ হানিফ, মহিবুল মুত্তাকীন, আনিসুল মুরসালিন, মুফতি শফিকুর রহামন, রাতুল আহমেদ বাবু ওরফে রাতুল বাবু, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মোঃ খলিল, মোঃ ইকবাল, মাওলানা লিটন ও মুফতি আবদুল হাই। ফারহানা রেজা বলেন, পলাতক ১৮ জনের মধ্যে চারজন আসামির বিষয়ে ‘রাষ্ট্র নিযুক্ত’ আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়নি। তারা হচ্ছেন- আসামি সাবেক সেনা কর্মকর্তা এটিএম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদ- হতে পারে এমন কোন ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তারা ‘স্টেট ডিফেন্স বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, গ্রেফতার ও পলাতক মিলিয়ে মোট ৪৫ আসামির বিরুদ্ধে যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। বিচারের মুখোমুখি থাকা ৪৯ আসামির মধ্যে এতাদিন জামিনে ছিলেন- খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মোঃ আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম। মঙ্গলবার তাদের জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, সেনা কর্মকর্তা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছেন। তাদের কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পতœী আইভি রহমান। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচ- শব্দে তার শ্রবণশক্তিতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। উল্লেখ্য, এ ঘটনায় মতিঝিল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ফারুক হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা (প্রয়াত) আব্দুল জলিল ও সাবের হোসেন চৌধুরী বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় পৃথক তিনটি মামলা করেন। কারাগারে থাকা ২৩ আসামিকে আদালতে আনা হয় ॥ আগে থেকে কারাগারে থাকা ২৩ আসামিকে মঙ্গলবার আদালতে আনা হয়। যাদের আনা হয় তারা হলেন, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাইদ ওরফে ডাঃ জাফল, আবুল কালাম আজদ ওরফে বুলবুল, মোঃ জাহাঙ্গীর আলম হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, শাহাদাত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হোসাইন আহম্মেদ তামিম, মোঃ আব্দুল সালাম পিন্টু, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল, আরিফ হোসেন ওরফে সুমন, রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ, উজ্জল ওরফে রতন, মোঃ লুৎফুজ্জামান বাবর, মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আব্দুর রহিম, মাওলানা শেখ আব্দুস সালাম, মোঃ আব্দুল মাজেদ ভাট, আব্দুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা আব্দুর রউফ ওরফে পীর সাহেব, মাওলানা সাব্বির আহম্মেদ ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বি, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবুল বক্কর ওরফে সেলিম হাওলাদার। জামিনে থাকার ৮ আসামিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ ॥ ৮ আসামি জামিনে ছিলেন। মঙ্গলবার তারাও আদালতে উপস্থিত হন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। যাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানো হয় তারা হলেন, মোঃ আরিফুর ইসলাম ওরফে আরিফ কামিশনার, মোঃ সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদা, সাবেক আইজিপি শহিদুল হক, সাবেক আইজিপি খোদা বক্স চৌধুরী, বিশেষ পুলিশ সুপার (অব.) রুহুল আমিন, এ এসপি (অব.) আব্দুর রশিদ, এএসপি (অব.) মুন্সী আতিকুর রহমান, লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক। শুরু থেকেই ১৮ জন পলাতক ॥ গ্রেনেড হামলা মামলা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ ১৮ জন পলাতক রয়েছেন। অন্য যারা পলাতক তারা হলেন শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক মোহাম্মদ হানিফ কলকাতা, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোরসালীন ও তার ভাই মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের একটি কারগারে এবং মওলানা তাইজুদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকা। জঙ্গী নেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর ও মওলানা লিটন ওরফ জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ডিএমপির তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব) ও ডেপুটি কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ ওবায়দুর রহমান এবং খান সৈয়দ হাসানও বিদেশে অবস্থান করছে। তবে আসামি (সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা) হারিছ চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি। পলাতকদের মধ্যে মওলানা তাইজুদ্দিন আটক সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই।
×