ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশের পাঁচ গোল বাতিল, মারিয়া, শামসুন্নাহার জুনিয়র ও আনুচিংয়ের জোড়া গোল, বাংলাদেশ ১০-০ বাহরাইন

বাহরাইনকে উড়িয়ে শুরু বাংলাদেশের মেয়েদের

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

বাহরাইনকে উড়িয়ে শুরু বাংলাদেশের মেয়েদের

রুমেল খান ॥ ফুটবল খেলা কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি ... সংজ্ঞাসহ বিস্তারিত উদাহরণ দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনকে সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিল বাংলার বাঘিণীরা! এএফসি অ-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে (‘এফ’ গ্রুপ) নিজেদের প্রথম খেলায় বাংলাদেশ দল জিতেছে বিশাল ব্যবধানে, ১০-০ গোলে। সোমবার ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের দ্বিতীয় এই খেলার প্রথমার্ধেই বাংলাদেশ এগিয়ে ছিল ৫-০ গোলে। দলের জোড়া গোল করে অধিনায়ক-সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মারিয়া মান্দা, ফরোয়ার্ড শামসুন্নাহার জুনিয়র এবং ফরোয়ার্ড আনুচিং মগিনি। এই জয়ে ৩ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলে বাংলাদেশ অবস্থান করছে দ্বিতীয় স্থানে। সমান ম্যাচে সমান পয়েন্ট ভিয়েতনামেরও। তবে গোল গড়ে এগিয়ে থাকায় বাংলাদেশ এগিয়ে। ২ খেলার প্রতিটিতে জিতে সর্বোচ্চ ৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে আছে লেবানন। বাহরাইন এবং আমিরাত ১ ম্যাচ খেলে হেরে এখনও পয়েন্ট শূন্য। বাংলাদেশের পরের ম্যাচ আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর, বেলা সাড়ে ১১টায়। প্রতিপক্ষ লেবানন। সোমবারের ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে প্রাধান্য বিস্তার করে, যোগ্য দল হিসেবে। আক্ষেপের বিষয় হলোÑ এই ম্যাচে তাদের পাঁচ-পাঁচটি গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইড এবং ফাউলের কারণে। ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে গোলগুলোর বেশিরভাগই বৈধ ছিল। এখন রেফারি যদি গোল না দেন, তাহলে সেটাই মেনে নিতে হবে। তবে গোল আরও বেশি হলে ভাল লাগত।’ মারিয়া মান্দা এবং শামসুন্নাহার জুনিয়রের প্রায় অভিন্ন অভিমত, ‘হ্যাটট্রিক মিস হয়েছে ঠিকই। কিন্তু তাই বলে এ নিয়ে মোটেও মন খারাপ করিনি। দলের জয়টাই হচ্ছে আসল।’ বাহরাইনের কোচ খালেদ হাসান তালেব উচ্ছ্বাসিত প্রশংসা করেন বাংলাদেশের তিন ফুটবলার আঁখি খাতুন, তহুরা খাতুন এবং শামসুন্নাহার জুনিয়রের। এছাড়া তিনি আরও যোগ করেন, ‘স্কুলের পরীক্ষার কারণে আমাদের দলের নিয়মিত সাত খেলোয়াড় বাংলাদেশে খেলতে আসতে পারেনি। এটার প্রভাব পড়েছে খেলায়।’ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নেমেছে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। সোমবার ম্যাচের শুরু থেকেই বাহরাইনের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে লাল-সবুজরা। ৩ মিনিটেই আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। বাঁপ্রান্ত থেকে ঋতুপর্ণা চাকমার গোলমুখে নেয়া শট জাহরা নিজার আলী নিজের নিয়ন্ত্রণে বল নেয়। ৯ মিনিটে তহুরার কাছ থেকে বল পেয়ে ডি বক্সের ভেতরে বল পায় আনুচিং মগিনি। তার নেয়া শট ক্রসবারের ওপর দিয়ে চলে গেলে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত হয় স্বাগতিক দল। ১১ মিনিটে ডানদিক দিয়ে আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ডি বক্সের বাইরে থেকে আনাই মগিনি ডান পায়ের দূরপাল্লার শট বাহরাইন গোলরক্ষক জাহরা নিজার আলীর মাথার ওপর দিয়ে জালে আশ্রয় নেয় (১-০)। ১৬ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্দা প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে ডান পায়ের অসাধারণ শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে (২-০)। ১৯ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে ডিফেন্ডার আনাই মগনি থ্রু পাস দেয় ডি বক্সের ভেতরে শামসুন্নাহার জুনিয়রকে। শামসুন্নাহার বল ধরেই ছোট পাসে বল দেয় আনুচিং মগিনিকে। আনুচিং চলতি বলে ডান পায়ের শটে বাহরাইনের জাল কাঁপায় (৩-০)। ২৬ মিনিটে ঋতুপর্ণর করা একটি গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হয়ে যায়। ২৮ মিনিটে শামসুন্নাহার সিনিয়রের শট বাহরাইন গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেয়। ফিরতি বলে শামসুন্নাহার জুনিয়র গোলরক্ষককে ঠেকিয়ে বল জালে পাঠায়। কিন্তু ফাউলের অজুহাতে গোলটি বাতিল করে দেন উজবেক রেফারি। ৩৫ মিনিটে বামদিক দিয়ে ঋতুপর্ণার নেয়া শট বাহরাইনের গোলরক্ষক ফিস্ট করে প্রতিহত করে। ফিরতি বলে আনুচিং ফাঁকা পোস্টে বল জালে ঠেলে দেয় (৪-০)। ইনজুরি সময়ে (৪৫+২ মিনিটে) ডানপ্রান্ত থেকে আনাই মগিনির ক্রস থেকে শামসুন্নাহার জুনিয়র দর্শনীয় হেডে বাহরাইনের জালে বল পাঠায় (৫-০)। ৫৫ মিনিটে আঁখির লম্বা পাস থেকে বল পেয়ে বদলি ফরোয়ার্ড সাজেদা আক্তার রিপা ডান পায়ের শটে বাহরাইনের জালে বল পাঠালে স্কোরলাইন ৬-০ করে ফেলে বাংলাদেশ। ৫৭ মিনিটে শামসুন্নাহার জুনিয়র নিজের দ্বিতীয়, আন্তর্জাতিক ফুটবলে নিজের দ্বাদশ এবং দলের সপ্তম গোলটি করে। এ সময় আবারও আঁখি খাতুন লম্বা পাসে বাহরাইনের বিপদসীমায় বল দেয় শামসুন্নাহারকে। শামসুন্নাহার বল ধরে দ্রুততার সঙ্গে ডি বক্সে ঢুকে গোলপোস্টে শট নেয়। কিন্তু তার নেয়া শট বাহরাইন গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেয়। তাতেও শেষরক্ষা হয়নি বাহরাইনের। ফিরতি বলে শামসুন্নাহার বাহরাইনের জালে বল পাঠাতে ভুল করেনি (৭-০) ৫৮ মিনিটে জুনিয়র শামসুন্নাহারকে বাহরাইনের মিডফিল্ডার ডানা বাসেম ফাউল করলে রেফারি পেনাল্টির বাঁশি বাজান। পেনাল্টি থেকে সিনিয়র শামসুন্নাহার গোল করলে ৮-০ গোলে এগিয়ে যায় স্বাগতিকরা। এ সময় বাহরাইনের ডানা বাসেম বাজে আচরণ করায় রেফারি তাকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। ফলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাহরাইন। ৭২ মিনিটে মারিয়া ডি বক্সের বেশ বাইরে থেকে ডান পায়ের চমৎকার শটে বাহরাইনের জাল কাঁপায় (৯-০)। ৮১ মিনিটে স্ট্রাইকার তহুরা খাতুন সাজেদার কাছ থেকে বল পেয়ে আগুয়ান গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে ঠেলে দেয় (১০-০)। ৮৭ মিনিটে মারিয়ার কর্নার থেকে বাহরাইনের গোলমুখে জটলার সৃষ্টি হয়। জটলার মধ্যে শামসুন্নাহার জুনিয়র জালে বল পাঠালেও গোলরক্ষককে ফাউলের কারণে রেফারি তা বাতিল করে দিলে ১০-০ গোলে বাহরাইনকে হারিয়ে মাঠ ছাড়ে গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।
×