ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মায় পানি বাড়ছে ॥ আতঙ্কে রাজশাহীবাসী

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পদ্মায় পানি বাড়ছে ॥ আতঙ্কে রাজশাহীবাসী

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ আরও উত্তাল হয়ে উঠে রাজশাহীর পদ্মা নদী। উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলে ক্রমেই বাড়ছে পদ্মার নদী পানি। শান্ত পদ্মা ক্রমেই রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে রাজশাহী শহরে বসবাসরত মানুষগুলোর। বিশেষ করে নদী তীরবর্তী মানুষ এখন চরম শঙ্কায় রয়েছে। এবারে ভরা বর্ষা মৌসুম পার হলেও তেমন বৃষ্টিপাত না হওয়ায় বিশাল পদ্মা রাজশাহী অংশে শান্তই ছিল। তবে বর্ষা শেষে নতুন করে বৃষ্টির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পাশর্^বর্তী দেশে বন্যা দেখা দেয়ায় রাজশাহীতে নতুন করে বাড়ছে বন্যার আশঙ্কা। গত এক সপ্তাহে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদ সীমার আশপাশে অবস্থান করছে। সর্বশেষ সোমবার রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে ১৭ দশমিক ৩৩ মিটার উচ্চতায়। রাজশাহীর পদ্মায় ড্রেজিং না হওয়ায় বিশাল নাব্যতা ক্রমেই হ্রাস পেয়েছে নদীর। আর নাব্যতা না থাকায় নদী হারিয়েছে তার পানি ধারণ ক্ষমতা। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসলেই বৃষ্টির পানি ও ভারতের ছাড়া পানির কারণে বন্যা ঝুঁকিতে থাকে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ। এবারও ভারতের ছাড়া পানির তোড়ে শঙ্কায় পড়েছে নগরবাসীসহ সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এ বছর চীন ও ভারতে নতুন করে বন্যা দেখা দেয়ায় এই আশঙ্কা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যেই চীন ভারতকে আর ভরত বাংলাদেশকে আগাম বন্যা সতর্ক বার্তা প্রদান করেছে। রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানির বিপদ সীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। এখন সেই বিপদ সীমার মাত্র সোয়া এক মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সরেজমিনে নগরীর পদ্মা তীরবর্তী এলাকাগুলোয় ঘুরে দেখা যায়, টি-বাঁধ এলাকায় বড়বড় ঢেউ আচড়ে পড়ছে। তীব্র স্রোতের তোড়ে নদীর গর্জন রীতিমতো কানে এসে বাজছে। পদ্মার পানি এরই মধ্যে নদী তীরের বাস করা মানুষগুলোর ঘরে ঢুকে পড়েছে। অনেকের যাতায়াতের পথে পানি উঠেছে। গাইবান্ধা নিজস্ব সংবাদদাতা গাইবান্ধা থেকে জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে গাইবান্ধার ফুলছড়িতে ব্রহ্মপুত্র নদ, জেলা শহরের ঘাঘট নদী, গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া, কাটাখালী ও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্রহ্মপুত্র নদে। জানা গেছে, সোমবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি ঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ঘাঘট, গোবিন্দগঞ্জের করতোয়া, কাটাখালী ও সুন্দরগঞ্জের তিস্তা নদীর পানি এখনও বিপদ সীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়া স্টাফ রিপোর্টার বগুড়া অফিস থেকে জানান, গত কয়েক দিন ধরে বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনার পানি বেড়ে সোমবার বিপদ সীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় চরাঞ্চলের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদী পাড়ের মানুষদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলে নিচু এলাকার ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ায় বীজতলা ও রোপা আমনসহ বিভিন্ন ফসল ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে। এছাড়া চরের নিম্নাঞ্চলের কিছু বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করছে। উপজেলা কৃষি অফিস ও উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে, উপজেলাল চালুয়াবাড়ী, কাজলা, বোহাইল, হাটশেরপুর, কুতুবপুর ও সদর ইউনিয়নে বন্যায় ২ হাজার ৯৬৫ জন কৃষক পরিবারের ৫০ হেক্টর আমন বীজ তলা, ৩শ’ ৭০ হেক্টর রোপা আমন, ২০ হেক্টর আউশ, ১শ’ হেক্টর মাষকালাই, ২৫ হেক্টর, মরিচ ১০ হেক্টর সবজি ফসলসহ ৫শ’ ৭৫ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। কুড়িগ্রাম স্টফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান,ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমারের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। ধরলার পানি কিছুটা কমলেও এখনও বিপদসীমার কাছেই রয়েছে। নদ-নদীর অববাহিকায় দুই শতাধিক চরগ্রামের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চরাঞ্চলের আরও নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সদর উপজেলার যাত্রাপুর ও পাঁছগাছি, উলিপুরের সাহেবের আলগা, চিলমারীর অষ্টমীরচর ও নয়ারহাট, নাগেশ^রীর নুনখাওয়া ও নারায়ণপুর, রৌমারীর দাঁতভাঙাসহ বেশকিছু এলাকায় ঘর বাড়িতে পানি উঠেছে। কাজ ও খাদ্য সংকটে দুর্ভোগ বাড়ছে পানিবন্দী মানুষদের। এসব এলাকার প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আমন ও অন্যান্য ফসলের ক্ষেত পানির নিচে তলিয়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৬, দুধকুমারে ৩ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। তবে ধরলায় ১০ সেমি পানি কমেছে।
×